ভোলা জেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ

বিশেষ প্রতিনিধি: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়‘ফনি’। হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়‘ফণি’আগামী ৩ মে নাগাদ ভারতের ওড়িশা উপকুলে আঘাত হানতে পারে।এর পর বাংলাদেশে উত্তর পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে আঘাত হানতে পারে। বাতাসের গতিবেগ  প্রতিঘন্টায় ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫০ কিলোমটিার যাহা ধমকা আকারে ১৮০ কিলোমিটার বৃদ্ধি পাবে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ কক্সবাজার থেকে ১১৯০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ১১০০ কিলোমিটার দুরে অবস্থান করছেন। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট ও জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় ভোলাতে ৬৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৮টি কন্ট্রোল রুম প্রস্তত রয়েছে। এছাড়াও সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তরয়েছেন। ইতিমধ্যে উপকূলীয় চর ও দুর্গম এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণাও শুররুহয়েছে।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, জেলা প্রশাসক ও ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এসকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন পৃথক পৃথক সভা করেন। এসময় জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খোলা হয়েছে ৮ টি কন্ট্রোল রুম, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ২২ টি  মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের দক্ষ ৫ শতাধিক ভলেন্টিয়ার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়ারও দুযোর্গ মূহূর্তে শুকনো খাবার পরিবেশনের জন্য চিরা ও গুড় বিতরণরে জন্য দোকান ঠিক করে রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ভোলার  জেলা প্রশাসন। এরইমধ্যে জেলার সঙে দূরবর্তী চরগুলোর সংযোগকারী  নৌপথে সব ধরনের অনিরাপদ লঞ্চ ও ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুর্গম এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রসহ নিরাপদে স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।  

সভায় ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারী মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে জরুরি খাদ্য সরবরাহে চিড়া-গুড় বিতরণের জন্য দোকান ঠিক করে রাখা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিট অফিসার তরিকুল ইসলাম, যুব প্রধান আদিল হোসেন তপু, প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান সাদ্দাম হোসেন, কলেজ শাখার প্রধান সুমন প্রমুখ।

জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে প্রস্ততুত রাখা হয়েছে। দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত থাকায় মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপথ স্থানে থেকে চলাচল  করতে বলা হয়েছে। জেলার ৬৫৭ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য সেচ্ছাসেবকদের তৈরি রাখা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি  সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে নির্দেশ  দেয়া হয়েছে বলে জানান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য সাত উপজেলায় ৮০ সদস্যের ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ মোকাবেলায় মনপুরা উপজেলা প্রশাসন বুধবার বিকাল ৫টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহম্মদ সভাপতিত্বে দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা উপজেলা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 দেশের সমুদ্রবন্দর গুলোকে ৭ নম্বর হুশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আতংকে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণি প্রভাবে প্রচন্ড তাপদাহ সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর হুশিয়ারী সংকেত জারি করেছে। এতে প্রশাসন সর্তকতা অবস্থান থেকে কঠোরভাবে নজর রেখেছেন।  উপজেলা সিপিপির উদ্যোগে সর্তকতামূলক  মাইকিং করেছে। প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন সিপিপির কর্মীরা। উপজেলা প্রশাসন কন্টোলরুম খুলছে। সারারাত কন্টোলরুম খোলা থাকবে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফণি আঘাতের প্রস্তুতি হিসাবে চরফ্যাশন উপজেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রন(কণ্ট্রোলরুম)কক্ষ। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নির্ধারিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্র গুলোকে প্রস্ততি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘূর্ণিঝড় ফণির মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছি। ভোলা জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মোতাবেক সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিছিন্ন দ্বীপ গুলোতে সিপিপি কর্মীগন সকর্ত থাকার জন্যে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। বুধবার রাত ৮টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রস্তুুতি সভা করেছেন। কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে সভায় সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনিচুর রহমান, সদস্য সিপিপি সহকারী পরিচালক মোকাম্মেল হক। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার গুলো খুলে দেয়ার জন্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন, সিপিপি সেচ্ছাসেবক রয়েছেন প্রায় ৩হাজর। এয়াড়াও ৪ থানার পুলিশ প্রশাসান, স্থানীয় সরকারের ইউপির চেয়ারম্যান, সদস্য, সদস্য গ্রাম পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন। এদিকে দৌলতখান,  বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী মাহবুব রহমান বলেন,  ভোলায় ৭ নম্বর সংকেত চলতে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।

-এএইচটি/ এমএএইচ/এসইউ/এফএইচ