সোমবার ● ৯ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দোয়েল চত্বর
ভোরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দোয়েল চত্বর
ডেস্ক: চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন ঘিরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা।রোববার দুপুর থেকে রাতভর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এরপর সোমবার ভোর সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকায় আবারও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় সেখানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনকেও দেখা গেছে। ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের পার্শ্ববর্তী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এর আগে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায়। রোববার রাত আটটার দিকে পুলিশ শাহবাগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় তারা টিএসসি এলাকায় পিছু হটলে সেখানেও তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দৃশ্যপটে এলে আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। প্রত্যক্ষদর্মীরা জানায়, বিভিন্ন হল থেকে যাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিতে না পারে সেজন্য হলের গেটে পাহারা বসায় ছাত্রলীগ। মেয়েদের হলগুলোর ফটকে তালা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দেয়।
এক পর্যায়ে রাত একটার দিকে রোকেয়া, শামছুন্নাহার, সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ও কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীরা ফটকের তালা ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে। তারা কোটা বিলুপ্তের নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিলে রাত তিনটার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী ছাত্রীদের ওপর চড়াও হয়। পরে সেখান থেকে সরে তারা রাতভর টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এ সময় তারা স্লোগান দেন, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’; ‘আমার ভাই আহত কেন? প্রশাসন জবাব চাই; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।
রাত চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী টিএসসিতে এসে ছাত্রীদের হলে চলে যেতে আহ্বান জানান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর সোমবার ছয়টার দিকে ছাত্রীরা টিএসসি থেকে হলে ফিরে যায়।
এরই মাঝে রাত দেড়টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাসে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েচেন।
তিনি আরও জানান, আটক আন্দোলনকারী সবাইকে মুক্তির ব্যবস্থা সরকার করবে।
এর আগে চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে রোববার দুপুরে পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা কর্মসূচি করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।