মঙ্গলবার ● ৮ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » শশীভূষণে পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় দ্বারে দ্বারে ঘুড়ছে গৃহবধূ
শশীভূষণে পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় দ্বারে দ্বারে ঘুড়ছে গৃহবধূ
স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার চরফ্যাশনে পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় চার বছরেরও বেশী সময় ধরে ক্ষমতাশীন ও গ্রামের শালিশদারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গৃহবধূ রাবেয়া খাতুন। শুধু তাই নয় তার পৈতৃক সম্পত্তিতে পতিপক্ষ গ্রুপ টিনের বেড়া দিয়ে ওয়াল করা দোকান ঘর উঠিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় জানালেও কোন সুষ্ঠ সমাধান দিতে পরেনি পুলিশ। জমি রক্ষায় তিনি আদালতে মামলাও করেছেন। আদালত ওই জমির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ক্ষতমাশীন দলের লোকদের ছত্র ছায়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই জমির উপর আদাপাকা দোকান তুলেন আবুল খায়ের লিটন গংরা। রাবেয়া খাতুন ঢাকায় বসবাস করায় এই সুজোগে লিটন ও তার পাঁচ ভাই মিলে রাবেয়ার বাবার ক্রয় করা জমি জবর-দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। তিনি পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় এর কাছে ওর কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিছুতেই ভূমি খেকো লিটন গং দের থামাতে পারছেন না।
রাবেয়া খাতুন লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, তার বাবা ওয়ারেন্ট অফিসার (অবঃ) শফিক উল্যাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনটি গুলি খেয়েও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। তার সংগ্রামি জীবনে আর্মিতে চাকুরি করে পেনশনের টাকা দিয়ে মামা ছাহেব আলীর নিকট থেকে ১৯৯৫ সালে চারফ্যাশনের এওয়াজপুর মৌজায় ১৬০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। যার এসএ খতিয়ান নং -২০০,আরএস খতিয়ান নং- ১৬২, দিয়ারা খঃ নং -৪৭৭, দাগ নং ৩২১৬,৩৫৪৫ থেকো ৩৫৬৬। তিনি কর্মব্যস্ত জীবনে ঢাকায় আবস্থান করায় এই জমি তার বোন কহিনুর বেগমের তত্ত্বাবধানে রেখে যান।
উল্লেখ্য, থাকে যে কহিনুর সাহেব আলী একমাত্র পুত্রবধূ ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বিয়ের পর থেকে কহিনুর শশুরের এবং ১৯৯৫ সালের পর থেকে বড় ভাই শফিক উল্যাহর জমির তত্ত্বাবদানে ভোগ দখলে ও বসবাসরত আছেন। শফিক উল্যাহ ২০১০ সালে ১০০ শতাংশ বিক্রি করে দেন এবং বাকী ২৪ শতাংশ বোন কহিনুরকে ও ৩৬ শতাংশ মেয়ে রাবেয়াকে দান করেন। বর্তমানে কহিনুর স্বামী পরিত্যাক্তা নিরিহ অসহায় মহিলা হওয়ায় আবুল খায়ের লিটন তারা মোট পাঁচ ভাইসহ কিছু ভাড়াটে সন্ত্রসী ও ভূমি দস্যু একত্রিত হয়ে কহিনুরের উপরে দীর্ঘ দিন যাবত নানাভাবে অন্যায় অত্যচার এবং জায়গা থেকে বিতারিত করার অনেক অপচেষ্টা করে আসছে। আবুল খায়ের লিটনের বাবা আলী আজগর সাহেব আলীর একমাত্র মেয়ের ঘর জামাই ছিলেন। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে জামাইকে ৪০ এবং নাতি লিটনকে ৮ শতাংশ জমি দিয়ে ওই জমার দক্ষিনে পার্শে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে দখল বুঝিয়ে দেন। তারা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তা ভোগ দখলে আছেন। বর্তমানে চরফ্যাশনের শশীভূষণ থানা হওয়ায় জায়গার মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারনে লিটন ও তার পক্ষের ভূমিদসুরা মিলে ওয়াঃ অফিঃ (অবঃ) শফিক উল্যাহর মেয়ে রাবেয়া ও বোন কহিনুরের নির্দিষ্ট চৌর্হদ্দি দেওয়া ভোগ দখলিয় জমি জবর দখলের অপচেষ্টা করে। এই মর্মে শফিক উল্যাহ উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের নিকট গত ০৯-১২-২০১৪ ইং তারিখে বিচারের লক্ষে আবেদন করেন। কিন্তু তারা চেয়ারম্যানের বিচার কার্যকে অবমাননা করে জায়গায় জবর দখলের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এমনকি গত ০৭-০১-২০১৫ ইং তারিখ লিটন ও তার অন্যান্য সহযোগী ভাড়াকরা ভূমিদস্যুরা (আলতাফ বাঘা, রফিক, জহির, আলাউদ্দিন, ফারুক ও খোরশেদ) সহ আরো অনেকে সহযোগীতায় কহিনুর ও তার ছেলেদেরকে নিমর্মভাবে মারধর করে। এমনকি তাদেরকে রক্তাক্ত করে তার ঘরের আংশিক ভাংচুর করে। এসময় তার জায়গা কিছুটা জোরপূর্বক অবৈধভাবে দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা চালায়।
এঘটনায় থানায় অভিযোগ করলে শশীভূষণ থানার ওসির নির্দেশে এসআই মিজান ঘটনাস্থানে গিয়ে লিটন গংদের জায়গা দখলে নিষেধ করেন। লিটন গংরা কহিনুর ও তার সন্তানদেরকে কোন প্রকার অভিযোগ ও মামলা না করার জন্য বলে। মামলা বা অভিযোগ করলে ইজ্জ্বতহানি ও প্রান নাশের হুমকি দেয়।
এসব জানতে পেরে শফিক উল্যা ০৯-১০-২০১৫ ইং তারিখে স্থানীয় এমপি এবং বন ও পরিবেশ উপ-মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে বিষয়টি জানান। তিনি তাৎক্ষণিক শশীভূষণ থানায় ফোন করে ভারপ্রাপ্ত (ওসি) এসআই সুবহানকে সুষ্ঠ ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে সকল কর্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এসআই সুবহান ঘটনাস্থলে গিয়ে লিটন গংদেরকে কাজ বন্ধের রাখার জন্য বলেন। এসময় এওয়াজপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক করিম এসআই সুবহানকে বলেন আপনারা ফোন পেয়ে ছুটে আসছেন কেন? আপনাদের কাছে আইনের কোন নিষেধাজ্ঞা আছে? নিষেধাজ্ঞার নোটিশ নিয়ে আসেন। এরপর নিরুপায় হয়ে তারা ১৬-০৩-২০১৫ ইং তারিখে চারফ্যাশন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে চিরস্থারী নিষেধাজ্ঞা ও বন্টনের মামলা করেন। আদালত ০১-০৯-২০১৫ ইং তারিখ স্থিতিবস্থার আদেশ দেন। তারা আদালতের কয়েটি নোটিশ পাওয়ার পরও জবাব না দিয়ে আদালতকে অবমাননা করে ধাপে ধাপে ওই জায়গা জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যায়। গত ০৩-০৩-২০১৬ ইং তারিখ রাত্রিবেলায় জায়গায় জোরপূর্বক কাজ করতে গেলে রাবেয়া খাতুনের লোকজন বাঁধা দেয়। এতে লিটনরা তাদের ওপর হামলা করে। পরে শশীভূষণ থানা পুলিশ লিটন ও তার দুই ভাই জহির, রফিককে গ্রেফতার করে কোর্ট চালান দেয়। এরপর তারা কোর্ট থেকে জামিনে এসে বাদীপক্ষকে জীবন নাশের সহ নানা প্রকার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এবং জবর দখলের চেষ্টা লিপ্ত রয়েছে। এমতাবস্থায় বাদীপক্ষ নিরুপায় হয়ে ১৮-০৬-২০১৬ ইং তারিখ আবার আদালতে ভায়োলেসন মামলা দায়ের করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত আবুল খায়ের লিটন অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, তিনি কারো জমি দখল করেননি। তার বাবার জমিতেই ঘর উঠিয়েছেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর ওই জমিতে কোনো কাজ করেননি।
-ইএ/এফএইচ