শনিবার ● ২৪ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » দৌলতখানে জেলেদের চাল নিয়ে তেলেসমাতি, ইউএনও লাঞ্ছিতর ঘটনায় মামলা, চেয়ারম্যান সহ আহত-২০
দৌলতখানে জেলেদের চাল নিয়ে তেলেসমাতি, ইউএনও লাঞ্ছিতর ঘটনায় মামলা, চেয়ারম্যান সহ আহত-২০
শিমুল চৌধুরী, দৌলতখান থেকে ফিরে: ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্দ্বের জের ধরে জেলেদের ভিজিএফ চাল নিয়ে দির্ঘদিন ধরে চলছিল তেলেসমাতি। ওই দ্বন্দ্বের কারনে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড। একই কারনে ফেরত নিচ্ছে এলজিএসপির প্রায় ১৭ লাখ টাকা।
শনিবার ওই চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে ওই ইউনিয়নের অপসারিত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইউএনও কামাল হোসেন লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ ঘটনায় অপসারিত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে গেলে দেখা যায় ইউপি কার্যালয়ে পুলিশ, স্থানীয় ইউপি মেম্বার জনতার ভিড়। স্থানীয়রা জানান, চরপাতা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার সঙ্গে ওই ইউনিয়নের ১১ মেম্বারের দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিন ধরে। ফলে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল বিতরণ বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে ইউনিয়নের ১১ মেম্বার ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে অনাস্থা দেন। ওই অনাস্থার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় গত বৃহস্পতিবার চরপাতা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে অপসরণ করে। গতকাল শনিবার সকালে অপসারিত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জেলেদের চাল বিতরণের চেষ্টা করলে অপসারিত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনও’র ওপর চড়াও হন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামাল হোসেন ও তার পেস্কার আল এমরান ও মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার ঠোট ও কপাল জখম হয়। খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ মেম্বার ও তাদের সমর্থকরা ছুটে এলে চেয়ারম্যান গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। শুরু হয় চেয়ারম্যান-মেম্বার ও সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামাল হোসেন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ওই পরিষদের প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মতাৎ করায় ১১ জন মেম্বার তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিলে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) তাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে চুড়ান্তভাবে অপসারণ করা হয়। এমন কি চেয়ারম্যান পদ শুন্য ঘোষনা করে প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ হেলাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় গতকাল জেলেদের দুই মাসের ভিজিএফ ১২৮ টন চাল জেলেদের না দিয়ে মোশাররফ হোসেন তার বহিরাগত লোকদের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন খবর পেয়ে দৌলতখান থানার ওসি এনায়েত হোসেনসহ ইউএনও কামাল হোসেন পরিষদে এসে চাল নেওয়া থেকে মোশারফ হোসেনকে বিরত থাকতে বলেন। একই সঙ্গে তিনি আর চেয়ারম্যান পদে নেই এমন কথা জানাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মোশাররফ হোসেন। তিনি লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন তার দিকে। ওই সময় চেয়ারম্যানের সমর্থকরা তার ওপর হামলা করে।
দৌলতখান থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, ইউএনওকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ইউএনও’র পেশকার এমরান হোসেন বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও তার সমর্থিত মেম্বার ফজলুল হক খোকনসহ বহিরাগত ক্যাডারদের আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
-এফএইচ