শনিবার ● ১৭ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » প্রকৃত হিসাবে দেশে বেকার ৩২-৩৫ শতাংশ: আকবর আলী খান
প্রকৃত হিসাবে দেশে বেকার ৩২-৩৫ শতাংশ: আকবর আলী খান
ডেস্ক: সরকারের হিসাবে দেশে বর্তমানে ৪ শতাংশ মানুষ কর্মহীন বা বেকার। সরকারের এ হিসাব অগ্রহণযোগ্য। প্রকৃত হিসাবে দেশে বেকারের হার ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ। যা ১৯১৩ সালে আমেরিকার বেকারের ২০ শতাংশ হারকে ছাড়িয়ে গেছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান শনিবার হোটেল লেকশোরে আয়োজিত ‘বাজেট সংলাপ ২০১৭’ শীর্ষক সেমিনারে এ সব কথা বলেন। স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিড) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
আকবর আলী খান বলেন, ‘সরকারের হিসাব মতে আমাদের দেশে ৪ শতাংশ মানুষ বেকার। যা প্রকৃত অর্থে অগ্রহণযোগ্য। কারণ, বেকার সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। যা মূলত বেকারত্বের মতোই। এই সংখ্যা যদি যোগ করা হয় তাহলে দেশে বেকার সংখ্যা ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ হবে।
তিনি বলেন, ১৯১৩ সালে আমেরিকায় যখন বেকারের হারে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল তখন তারা বড় ধরনের অবক্ষয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। আমাদের দেশেও বর্তমানে বেকার সমস্যা উদ্বেগের বিষয়। এ জন্য প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
আকবর আলী খান বলেন, আমাদের দেশে বাজেট প্রণয়নে স্বচ্ছতা নেই। বাজেটে অনেক তথ্যই লুকানো হয়। কারণ, অর্থমন্ত্রী নিজেও চান না নতুন কর আরোপের বিষয়ে আগে থেকে মানুষ জানুক। কর আরোপ ও অন্যান্য বিষয়ে সংসদ ও অন্যান্য ফোরামে খুব বেশি আলোচনা হয় না।
তিনি বলেন, বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন। এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, কতুটুকু অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ও ৫ শতাংশের নিচে মুদ্রাস্ফীতি রাখা অভিনন্দনযোগ্য।
আমি বড় বাজেটকে সব সময় স্বাগত জানাই। কিন্তু আমার দৃষ্টি হচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব সংগ্রহে সরকার বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতটুকু দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।’
ভ্যাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিপিডির সঙ্গে আমি একমত এই অর্থে যে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বেশি হয়ে যায়। ভ্যাট ব্যবস্থায় দলিল রেখে রিবেট নেওয়ার যে সুযোগ রাখা হয়েছে সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। কারণ, এখনো আমদের দেশে অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত মানুষই বেশি। যেমন, বিদ্যুতের মতো পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়বে। যার নেতিবাচক প্রভাব সকলকে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশ ধীরে ধীরে জ্বালানি ক্ষেত্রে বিদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কারণ, আমাদের গ্যাস শেষ হয়ে আসছে, আমাদের কয়লা ব্যবহার হয় না। পরবর্তী পাঁচ-ছয় বছরে জ্বালানি সেক্টরে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরতা আরো অধিকমাত্রায় বাড়বে। যা বড় সমস্যা। এজন্য সরকারকে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অধিক সচেতন হওয়া জরুরি।’
কালো টাকা প্রসঙ্গে আকবর আলী খান বলেন, ‘বছরের পর বছর অব্যাহতভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের বিষয়টির ক্ষেত্রে সরকারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যাওয়া দেশের জন্য বড় একটি সমস্যা। বর্তমানে কাতার নিয়ে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এতে রেমিট্যান্স আরো কমতে পারে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’
বাজেট আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান প্রমুখ।