রবিবার ● ১১ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » জোয়ারের পানিতে বন্দি ভোলার ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ
জোয়ারের পানিতে বন্দি ভোলার ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ
বিশেষ প্রতিনিধি : ভোলার মনপুরা, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার ১৫ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জোয়ারের পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। রবিবার দুপুরের পর থেকে বেশ কয়েকটি জায়গা বেড়ীবাধঁটি ভেঙ্গে যাওয়ায় খুব সহজে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিতরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৭ শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। চরাঞ্চলের চারপাশে কোন বেড়ীবাধঁ না থাকায় পুর্ণিমার জোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব চর প্লাবিত হয়ে পানি ওঠা নামা করায় মানুষের বসত ভিটা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। রান্না বান্না করতে চরম দূর্ভোগ পড়তে হয়ছে প্লাবিত এলাকার মানুষের।
ভোলার দ্বীপ উপজেলার মূল ভুখন্ডের ১নং মনপুরা ইউনিয়নের চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীঁবাধ ও হাজির হাট ইউনিয়নের পুর্ব সোনার চরের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে পুর্নিমার জোতে পানি ঢুকে চরাঞ্চলসহ ৩০ সহস্রাধীক মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। গত বছর আমবশ্যার জোয়ারে পুর্ব ও পশ্চিম পাশের বেড়ীবাধঁটি বেশ কয়েকটি জায়গা ভেঙ্গে যাওয়ায় খুব সহজে জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিতরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে প্রায় ৫শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীচর, ঢালচর, চরনিজাম, চরশামসুউদ্দিন চরের চারপাশে কোন বেড়ীবাধঁ না থাকায় পুর্ণিমার জোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি ওঠা নামা করে। মানুষের বসত ভিটা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। রান্না বান্না করতে চরম দূর্ভোগ পড়তে হয়ছে প্লাবিত এলাকার মানুষের। মেঘনায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত ৫টি গ্রামসহ চরাঞ্চলের ৩০ সহ¯্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্ধী এলাকার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুর্নিমার জোয়ারে মেঘনার পানি অস্বভাবিকভাবে বৃদ্ধিপেয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল জোয়ারে চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ১নং মনপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম ,কাউয়ারটেক চৌমহনী গ্রাম,হাজির হাট ইউনিয়নের পুর্ব সোনারচর গ্রাম, চরযতিন গ্রাম,বেড়ীবাধেঁর বাহিরে চরজ্ঞান ও দাসের হাট গ্রাম তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষ প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই। রোজার দিনে রান্না বান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
হাজির হাট ইউনিয়নের পুর্বসোনারচর গ্রামের মিজান,রহিমা বেগম বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হঠাৎ জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে পুরোগ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানির তীব্রতায় রাস্তাঘাট সব ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা পানিবন্ধী অবস্থায় রয়েছি। দ্রুত ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁটি সংস্কার করা না হলে বর্ষাকালে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে।
বিচ্ছিন্ন কলাতলী চরের বসবাসকারী আব্দুল কাদের, রিপন বাজারের মহিউদ্দিন মাঝি ,আবাসন বাজারের আয়শা বেগম ও আবুতাহের বলেন , স্যারগো চরে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। বেড়ীবাধঁ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি ওঠে তাদের বসত ঘরগুলো ডুবে যায় আবার ভাটি হলে পানি নেমে যায়। এভাবে আমরা চরের মানুষ কষ্টকরে দিন কাটায়। দ্রুত বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাধেঁর দাবী করেন তারা।
প্লাবিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন জোয়ারের পানি ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ঢুকে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্ধী রয়েছেন। চরাঞ্চলগুলোতেও বেড়ীবাধ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি ওঠা নামা করে। মানুষের বসত ভিটা ডুবে থাকে। জোয়ারের পানিতে পুকুর ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নাবান্নার কাজ ময়লা আবর্জনার পানি দিয়ে চলছে। বিশুদ্ধ পানির আনার জন্য মেয়েরা জোয়ারের পানি উপেক্ষা করে অনেক দুর থেকে টিউবওয়েল থেকে কষ্ট করে পানি আনছে।
অপর দিকে তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনা সংলগ্ম চৌমহনী এলাকায় বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে ৫ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমউদ্দিন লঞ্চঘাট ও বাজার সহ কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হয় লঞ্চযাত্রী, বাজার ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের । অপরদিকে চরফ্যাশন উপজেলার চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার খবর পেয়েছি। তবে ৩টি পয়েন্টে রিং বেড়ীবাধের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। শিপন চৌধুরী বাড়ীর পুর্বপাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধ ,কাউয়ারটেক চৌমহনী বাজার পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধ ও নাইবেরহাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ সামনে ১০ফুট চওড়া ও ১০ ফুট উচ্চতার রিং বেড়ীবাধের কাজ দ্রুত শুরু হয়েছে। হাজির হাট ইউনিয়নের পুর্বসোনারচর ভাঙ্গা বেড়ীবাধেঁর টেন্ডার করার জন্য অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাধ নেই । আমরা এবিষয়গুলো উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোহাগ হাওলাদার বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। আমি খবর পেয়ে দ্রুত পানিবন্ধী এলাকা পরিদর্শন করি। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অভিহিত করেছি।
-এসইউ/এফএইচ