শনিবার ● ২৭ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » মনপুরায় ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে জোয়ারে পানি ঢুকে ৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি
মনপুরায় ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে জোয়ারে পানি ঢুকে ৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি
মো. ছালাউদ্দিন, মনপুরা প্রতিনিধি: ভোলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার মূল ভুখন্ডের ১নং মনপুরা ইউনিয়নের চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেঁড়ীবাধ ও হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনার চরের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে পানি ঢুকে ৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চলসহ ৩০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়ছেন। গত বছর আমবশ্যার জোয়ারের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের বেড়ীবাধঁটি বেশ কয়েকটি জায়গা ভেঙ্গে যাওয়ায় খুব সহজে জোয়ারে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিতরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়াও মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলীচর, ঢালচর, চরনিজাম, চরশামসুউদ্দিন চরের চারপাশে কোন বেড়ীবাধঁ না থাকায় আমবশ্যার জোতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি ওঠা নামা করে। মানুষের বসত ভিটা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। রান্না বান্না করতে চরম দূর্ভোগ পড়তে হয়ছে প্লাবিত এলাকার মানুষের। মেঘনায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত ৫টি গ্রামসহ চরাঞ্চলের ৩০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্ধী এলাকার মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমবশ্যার জোয়ারে মেঘনার পানি অস্বভাবিকভাবে বৃদ্ধিপেয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবল জোয়ারে চৌমহনী বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ১নং মনপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম ও পুর্ব কুলাগাজী তালুক, কাউয়ারটেক চৌমহনী গ্রাম, পূর্বঈশ্বরগঞ্জ গ্রাম , হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্ব সোনারচর গ্রাম, বেড়ীবাধেঁর বাহিরে চরজ্ঞান ও দাসের হাট গ্রাম তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষ প্রচ- কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বর্তমানে তাদের কষ্টের যেন শেষ নেই।
হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্বসোনারচর গ্রামের মিজান বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে পুরোগ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। জোয়ারের পানির তীব্রতায় রাস্তাঘাট সব ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা পানিবিন্ধ অবস্থায় রয়েছি। দ্রুত ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁটি সংস্কার করা না হলে বর্ষাকালে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে।
বেড়ীবাধেঁর বাহিরে বসবাসরত চরজ্ঞানের ইদ্রিস মাঝি, মিজু মাঝি বলেন, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের বেড়ীবাধেঁর বাহিরের ঘরগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ঢেউয়ের তোড়ে ঘরের খুটির গোড়ার মাটি সরে যায়। বাতাস হলে আমাদের ঘরগুলো ঝুঁকে পড়বে। আমরা আতংকে আছি। আমাদের কোন নিজস্ব জায়গা জমি নেই । বেড়ীর ঢালে কোন রকম ঘর উঠিয়ে বসবাস করছি।
বিচ্ছিন্ন কলাতলী চরের বসবাসকারী আব্দুল কাদের, রিপন বাজারের মহিউদ্দিন মাঝি ,আবাসন বাজারের আয়শা বেগম ও আবুতাহের বলেন , স্যারগো চরে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। বেড়ীবাধঁ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি ওঠে তাদের বসত ঘরগুলো ডুবে যায় আবার ভাটি হলে পানি নেমে যায়। এভাবে আমরা চরের মানুষ কষ্টকরে দিন কাটায়। দ্রুত বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাধেঁর দাবী করেন তারা।
প্লাবিত কুলাগাজি তালুক এলাকার মোশারফ বলেন, জোয়ার আসলে ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে পানি এসে আমাদের ঘর ও পুকুর ডুবে যায়। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। দ্রুত ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ নির্মাণের দাবী করেন তিনি।
প্লাবিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন জোয়ারের পানি ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ঢুকে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবিন্ধ রয়েছেন। চরাঞ্চলগুলোতেও বেড়ীবাঁধ না থাকায় প্রতিদিন জোয়ারের পানি ওঠা নামা করে। মানুষের বসত ভিটা ডুবে থাকে। জোয়ারের পানিতে পুকুর ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্না বান্নার কাজ ময়লা আবর্জনার পানি দিয়ে চলছে। বিশুদ্ধ পানির আনার জন্য মেয়েরা জোয়ারের পানি উপেক্ষা করে অনেক দুর থেকে টিউবওয়েল থেকে কষ্ট করে পানি আনছে।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড চরনিজামে বেড়ীবাধঁ না থাকায় আমবশ্যার জোয়ারে মানুষের বসত ভিটা পানিতে ডুবে যায়। সাধারণ মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছেন। চরের চারপাশে দ্রুত বেড়ীবাধঁ নির্মাণের দাবী করেন তিনি।
২নং হাজির হাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দ্বিপক বলেন, অস্বাভাবিক ভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ পানি ঢুকে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। মানুষ পানিবিন্ধ রয়েছেন।
১নং মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আমানত উল্যাহ আলমগীর বলেন , আমার ইউনিয়নেও ভাঙ্গা বেড়ীবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কলাতলী চরও ডুবে আছে। কলাতলী চরে বেড়ীবাধঁ না থাকায় মানুষ চরম দূর্ভোগে আছেন। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী দ্রুত ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ নির্মাণের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। কাজও শুরু হয়েছে।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার খবর পেয়েছি। তবে ৩টি পয়েন্টে রিং বেড়ীবাঁধের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। শিপন চৌধুরী বাড়ীর পূর্বপাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধ, কাউয়ারটেক চৌমহনী বাজার পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধ ও নাইবেরহাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁ সামনে ১০ ফুট চওড়া ও ১০ ফুট উচ্চতার রিং বেড়ীবাঁধের কাজ দ্রুত শুরু হয়েছে। হাজির হাট ইউনিয়নের পূর্বসোনারচর ভাঙ্গা বেড়ীবাধেঁর টেন্ডার করার জন্য অনুমতি পেয়েছি। আশা করছি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাধ নেই। আমরা এবিষয়গুলো উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিসেস শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁটি দিয়ে পানি ঢুকে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পেয়েছি। পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপির প্রচেষ্ঠায় ভাঙ্গা বেড়ীবাধঁগুলো সংস্কারের জন্য রিং বেড়ীবাধেঁর টেন্ডার করা হয়েছে। কাজও শুরু হয়েছে। উপমন্ত্রী প্রতিদিন কাজের খোজঁ কবর রাখেন। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে বেড়ীবাধঁ না থাকায় জোয়ারের সময় মানুষ কষ্ট করছেন। আমরা এবিষয়গুলো উপমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সকল সমস্যা সমাধান হবে।
-এফএইচ