রবিবার ● ২১ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজি অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
ভোলায় পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজি অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
শিমুল চৌধুরী: বিদ্যুতের উৎপাদনকেন্দ্র ভোলায় ফের বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ এই আছে তো এই নেই। শুক্রবার রাত প্রায় ১১টার দিকে চলে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত আর আসেনি। বিশেষ করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধিনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে এ জেলার গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জেলার সাত উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারন করেছে। গ্রীস্মের শুরুতেই ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে বিদ্যুৎ গ্রাহকসহ এলাকাবাসী। ভোলায় সামান্য বাতাস হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এখানে বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ আসে আর যায়। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলছে। এতে করে অসন্ন রমজান মাসে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যাপারে শংকিত বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। ফলে বিদ্যুতের হাজার হাজার গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটি বিকল হওয়ায় সাময়িকভাবে এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, রমজান মাসের আগেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হবে।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানায়, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ভোলা সদর উপজেলার বিশ্বরোড এলাকায় গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন ছাড়াও বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবা গ্রামে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রসহ প্রায় আড়াইশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করার পরেও জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা জানায়, ভোলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিভিউশন কম্পানি (ওজোপাডিকো)’র বিদ্যুৎ লাইনটি জরাজীর্ণ হওয়ার কারনে এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চরম অবহেলা এবং গাফিলতির কারনে সামান্য বৃষ্টি-বাতাসের অজুহাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওজোপাডিকো কর্মকর্তারা বলছেন, বাতাসের কারনে ভোলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। তবে, ‘বাতাসের কারনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট’ এ খোড়া যুক্তি মানতে নারাজ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করছেন। বাতাস থাকলেও বিদ্যুৎ চলে যায়, বাতাস না থাকলেও বিদ্যুৎ চলে যায়। গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ অফিসে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারি দীর্ঘদিন ধরে অফিসে কর্মরত থাকার সুযোগে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতিবাজ সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সেবার নামে বিদ্যুৎ চুরিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকে। ফলে এ জেলায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট লেগেই থাকে।
এ বিষয়ে ভোলা শহরের হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক এডভোকেট জহুরুল ইসলাম খুসবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ আসে আর যায়। বাতাস থাকলেও বিদ্যুৎ চলে যায়, আবার বাতাস না থাকলেও বিদ্যুৎ চলে যায়। তিনি আরো বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকার পরেও বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অদক্ষতার কারনে এখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।
ওয়েস্টার্ণ পাড়ার বিদ্যুৎ গ্রাহক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ভোলায় প্রায় আড়াইশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপিত হলেও আমরা নিয়মিত বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে সাধারণ গ্রাহক। জেলার সাত উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারন করছে বলে জানান বিদ্যুতের গ্রাহকরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ এই আসে, এই চলে যায়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চরম অবহেলা এবং গাফিলতির কারনে সামান্য বৃষ্টি-বাতাসের অজুহাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সামান্য বাতাস হলেই এখানে বিদ্যুৎ চলে যায়। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে আমরা রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।
চরফ্যাশন উপজেলা সদরের শরিফপাড়ার বাসিন্দা বিদ্যুৎ গ্রাহক শিপু ফরাজি বলেন, এ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এখানে বিদ্যুৎ আসে আর যায়।
লালমোহন উপজেলা সদরের বিদ্যুৎ গ্রাহক জসিম জনি বলেন, এখানে গরমের শুরুতেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। তিনি বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর শনিবার দুপুর পর্যন্ত আর আসেনি। গত বছরেও সামান্য বৃষ্টির অজুহাতে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এব্যাপারে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিভিয়শন কম্পানি (ওজোপাডিকো) ভোলার উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল মাজেদ জানান, বাতাসের কারনে বিভিন্ন স্থানে গাছের পাতা ও ডাল-পালা পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়। তিনি আরো বলেন, এখন ভোলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তবে, উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রকট। উপজেলাগুলোতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (কারিগরি) শাহিন রেজা ফরাজি জানান, ভোলার গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটির মূল ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। তাই সেটি এখন বিকল হয়ে পড়েছে। ইঞ্জিনটির মেরামত কাজ চলছে। মেরামত কাজ শেষ হলে আশা করা যায় পবিত্র রমজান মাসের আগেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার চেষ্টা করা হবে। তখন সারাদেশে বিদ্যুতের লোডসেডিং হলেও ভোলায় এক মিনিটের জন্যও লোডসেডিং হবেনা বলেও জানান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ কর্মকর্তা। তাই পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহে বিগ্ন ঘটছে।
তবে, ভোলার গ্যাসভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান শনিবার বিকেলে বলেন, আমাদের প্লান্টে কোন ত্রুটি হয়নি। এটা সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা মিথ্যাচার করছেন।
-এফএইচ