বৃহস্পতিবার ● ১৮ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় » দৌলতখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বন্দ্ব, জেলেদের চাল বিতরণ বন্ধ
দৌলতখানে চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বন্দ্ব, জেলেদের চাল বিতরণ বন্ধ
শিমুল চৌধুরী: সরকার মেঘনা উপকূলীয় নদীতে ২৮০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে। পহেলা মে ফের নদীতে মাছ ধরছেন জেলেরা। তবে, ওই দুই মাসের জন্য সরকার জন প্রতি ৪০ কেজি করে চাল মৎস্যজীবি জেলে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। যা মার্চ মাস থেকে জেলেদের মাঝে প্রতি মাসে বিতরণ করার কথা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা শেষ হলেও নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা ভোলার দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে জেলে পুনর্বাসনের চাল এখনো হাতে পাননি জেলেরা। শুধু মৎস্যজীবি জেলে পুনর্বাসনের চালই নয়, ভিজিডির চালও বিতরণ বন্ধ রয়েছে। ওই চাল খাদ্যগুদামে পড়ে রয়েছে। ওই ইউনিয়নে এলজিএসপি’র বরাদ্দসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডও বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারনে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন বা বিতরণ হচ্ছেনা। একই কারনে খাদ্যগুদাম থেকেও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই চাল দিচ্ছেননা। ফলে সাধারণ জেলেরা পুনর্বাসনের চাল থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ভোলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় জেলেরা জানান, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারনে তারা জেলে পূনর্বাসনের চাল পাচ্ছেননা।
এব্যাপারে চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে মোট জেলের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলের সংখ্যা রয়েছে দুই হাজার ৮০০। তিনি বলেন, মার্চ ও এপ্রিল মাসের মৎস্যজীবি জেলে পুনর্বাসনের ১২৯ টন চাল ও চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার মাসের ভিজিডি ৭ টন ২০০ কেজি চাল তার নামে ডিও লেটার হলেও খাদ্যগুদাম থেকে তাকে দেওয়া হচ্ছেনা। তার নামে বরাদ্দকৃত ওই চাল তিনি বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাক নিয়ে দৌলতখান উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে আনতে গেলে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোঃ আঃ রহমান চাল দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চাল নিতে বিকেল পর্যন্ত খাদ্যগুদামে বসে থাকলেও তাকে চাল দেওয়া হয়নি। তিনি চেয়ারম্যানকে জানান উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা তাকে চাল দিতে নিষেধ করেছেন। তাই তিনি চেয়ারম্যানকে চাল দেননি।
ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, তাকে না জানিয়ে ইউপি সচিব সাহাদাত হোসেন রুবেলের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইউপি মেম্বাররা দুই দফায় জেলের বিশেষ বরাদ্দসহ ৪১০ বস্তা চাল আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনকে জানালেও রহস্যজনক কারনে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান ইউপি চেয়ারম্যান। তবে, চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে চরপাতা ইউনিয়নের সচিব সাহাদাত হোসেন রুবেল বলেন, চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মোঃ আঃ রহমান বলেন, চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই ইউএনও স্যার চেয়ারম্যানকে ওই চাল দিতে নিষেধ করেন। তবে, তিনি বলেন, যেহেতু চেয়ারম্যানের নামে চাল বরাদ্দের ডিও হয়েছে সেহেতু আইনগতভাবে চেয়ারম্যান চাল পাওয়ার কথা।
এব্যাপারে জানতে দৌলতখান উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কামাল উদ্দিনকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এব্যাপারে মোবাইলে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ফোনে এসব কথা বলা যায়না। এ বিষয়ে জানতে হলে সরাসরি কথা বলতে হবে।
তবে আইনগতভাবে চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দকৃত চাল না দেওয়ার জন্য ইউএনও খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাকে বলতে পারেননা। হয়তো চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারনে এ ঝামেলা হয়েছে।
চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্ব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর আগে মেম্বাররা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন। এ কারনে ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজও বন্ধ রয়েছে। তাদের দ্বন্দ্বের কারনে আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
চরপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারনে উন্নয়ন বন্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করে স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুল বলেন, এ বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে এবং এলাকার উন্নয়ন কাজ তরান্বিত করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
-এফএইচ