রবিবার ● ১৯ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় হানিফ বাহিনীর অত্যাচারে ময়নারা অসহায়!
ভোলায় হানিফ বাহিনীর অত্যাচারে ময়নারা অসহায়!
স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের কন্দকপুর গ্রামের (দারোগা খাল বাজারের পাশে) মজিবল হক চৌকিদার বাড়ীর ডা: মজিবল হক ছিলেন একজন সৎ, আদর্শবান ও পরউপকারী পশু ডাক্তার। দুই স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখেই যাচ্ছিল তার দিন। হঠাৎ তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তার পরই দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি ফাতেমার সংসারে নেমে আসে দুশ্চিন্তা আর অশান্তি। ৪ ছেলে আর ১ মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে তার। এলাকার লোকজন, মসজিদ কমিটির সহযোগীতা এবং তার একটুকরো জমির আয় দিয়েই তার সংসার চলে। দুনিয়াতে তার কেউ নাই বিধায়, সৎ তিন ভাই মাঝে মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তার ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করতে কোন টাকা-পয়সা খরচ হচ্ছে না। কারণ স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ তার সন্তানদেরকে বিনা পয়সায় লেখা-পড়ার সুযোগ দিচ্ছে। বরংচ তার ছেলে-মেয়েরা টিউশনি করে পরিবারকে সহযোগিতা করছে।
বড় মেয়ের বিয়ের পর দ্বিতীয় মেয়ে ময়না বেগম (১৮)। নাজিউর রহমান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। তৃতীয় মেয়ে রুপা (১৪) রাজাপুর স্কুলের নবম শ্রেণী, একমাত্র ছেলে শাখাওয়া (১২) ৭ম শ্রেণী ও ছোট মেয়ে জমিলা (৭) একই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়েন। গত বুধবার ময়না নাজিউর রহমান কলেজ থেকে বাড়ী ফেরার পথে বাড়ীর নিকটে বড় রাস্তার কাছে হানিফ, ফিরোজ ও দেলোয়ার তাকে এলোপাথারি কিল, ঘুসি ও লাথি মেরে মাটিতে ফেলে বুকের উপর পা দিয়ে চাঁপ দিয়ে রাখে। তাতে ময়নার পাজড়ের হাঁড় ভেঙ্গে যায়। বুকে প্রচন্ড আঘাত পায়। পাশে দাড়িয়ে থাকা চাচা সাহেদ আলী ও দাদা খলিল বলে, মাগিরে এখানেই রেফ কর। আর না হলে মাইর্যা ফালা। উপায়ন্তুর না দেখে ময়না চিৎকার দিলে ময়নার মা ফাতেমা, বোন রুপা, ভাইসহ আশ-পাশের লোকজন জড়ো হলে তাদেরকেও উপর্যপুরি আঘাত করা হয়। ময়নার মা ফাতেমার বুকে কামড় দিয়ে চামড়া ছিড়ে নেয় তারা। রুপার বুকে এবং মাথায় মারাত্মক জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পিছনের অংশে মহিলা বেডের অতিরিক্ত ৮নং আসনে ভর্তি করানো হয়। এদিকে ময়নাদেরকে মেরে ফিরোজ ভোলা সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মাথায় একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে রাখেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তার না বলা সত্ত্বেও এক্সরে করিয়ে রিপোর্ট সাথে রাখছেন। যাতে মানুষ বুঝে তিনিও অসুস্থ্য।
হাসপাতালে ফিরোজের মা বলেন, ময়নাদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। ওরা নিজেরা মারামারি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমার ছেলেকেও মারছে। কিন্তু অভিযুক্ত হানিফ, দেলোয়ার, সাহেদ আলী, ফিরোজ এদের কথা জিজ্ঞাসা করলে বলেন, এরা এলাকায়-ই ছিল না। ময়নাদের গোটা পরিবার হাসপাতালে ভর্তি করার পর ওদের উপর চলে নানান রকম মানসিক টর্চার।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ বছর আগে ডা: মজিবল হক চৌকিদার মারা যান। ঠিক এর ৩ মাস পরে ফাতেমার পরিবারের উপর চলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক, শারীরিক নির্যাতন। ডা: মজিবল হক চৌকিদারের বড় ভাই সাহেদ আলীর চোখ পড়ে বিবি ফাতেমার উপর। একদিন রাতে সাহেদ আলী তার ভাইর ঘরে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেন। কিন্তু ভাইর মেয়েরা তাকে জোড় করে ঘর থেকে বের করে দেন। তখন থেকেই তিনি এই পরিবারকে বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। তিনি পাশের বাড়ীর হানিফ, দেলোয়ার, ফিরোজ, খলিলদেরকে নিয়ে বিবি ফাতেমার উঠানে এসে বলে এই বাড়ীতে তোমাদের কোন সম্পত্তি নাই, কাজেই বাড়ী থেকে চলে যাও। থাকতে হলে আমরা যা বলব, তা মেনেই থাকতে হবে। এই বলে বাড়ীর দরজায় বেড়া দিয়ে পথ বন্ধ করে দেন, যাতে করে বিবি ফাতেমার পরিবার চলাফেরা করতে না পারে। সাহেদ আলী, হানিফ ও ভাতিজা ফিরোজকে এই পরিবারের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন।
হানিফ প্রতি রাতে ময়নাদের ঘরে গিয়ে পড়ালেখায় বেঘাত ঘটান এবং জোর করেই ওই ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওরা হাতে-পায়ে ধরে কোন মতে ঘর থেকে বের করে দেন। মাঝে মধ্যে ময়নাদের ঘরের দরজা বন্ধ থাকলে সেখানেই বসে গাঁজা-ইয়াসাসহ মাদক দ্রব্য সেবন করেন এবং বিভিন্ন সময়ে উত্তেজক কথা বলেন হানিফ। এরই মধ্যে ময়না, রুপা এবং ওদের ভাইকে ঘরে রেখে বিবি ফাতেমা বড় মেয়ের কাছে ঢাকায় যান। এই সুযোগে গভীর রাতে হানিফ ও ফিরোজ ঘরের বেড়া ফাঁক করে ভিতরে ঢুকে ময়না ও রুপাকে নির্যাতনের চেষ্টা করেন। কিন্তু ওদের চিৎকারে তা আর সম্ভব হয়নি। পরদিন সকালে ঢাকা থেকে বিবি ফাতেমা দেবর হারুন চৌকিদার, জহিরুল ইসলাম ও কবিরকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তারা তদন্ত করে বিষয়টি প্রমান পান।
এ ব্যাপারে হারুন চৌকিদার নম্বরে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। অন্যদিকে রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার রাতে রমিজ মেম্বার সহ ৪/৫ জনকে ময়না ও রুপাদের কাছে পাঠান। তারা তাদেরকে দেখভাল করেন এবং উভয়পক্ষকে মিমাংসা করার চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে রমিজ মেম্বারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে পাঠিয়েছে। আমি ময়নাদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছি ও ঘটনা শুনেছি। উভয়পক্ষকে নিয়ে কিভাবে কি করা যায়, তা ভেবে চিন্তে ঠিক করা হবে।
এদিকে ময়নার মা কেঁদে কেঁদে বলেন এমন হাজারো ঘটনা আছে যা বলে ও লিখে শেষ করা যাবে না। আমি হানিফ, দেলোয়ার, ফিরোজ, খলিল ও সাহেদ আলীর এমন বিচার চাই যেন, এই সমাজে কেউ এতিমদের উপর হাত ধরতে না পারে। দীর্ঘ দিনের এই সমস্যার কথা স্থানীয় চেয়ারম্যান বা গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবকে জানানোর পরই তিনি লোক পাঠিয়েছেন। তাছাড়া আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত যত ঘটনা হয়েছে তা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যান জানে। আমি এতিম, আমার সন্তানরাও এতিম। তাই সু-বিচার পাই না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হানিফ, ফিরোজ, দেলোয়ার এলাকায় এমন কোন কাজ নেই যে তারা করেনি। হানিফতো ২৪ ঘণ্টা ইয়াবা-গাঁজা খায়। ওরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে মানে না। ওদের কারণে এলাকাবাসীও অতিষ্ট। তারাও এদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবী জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাহেদ আলী, হানিফ, দেলোয়ার, খলিলদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি বিধায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওদেরকে (হানিফ, ফিরোজ, দেলোয়ার, সাহেদ আলী, খলিল) চৌকিদার দিয়ে এনে শ^াসিয়েছি এবং বলেছি তোরা কুকুরের চেয়েও খারাপ। কুকুরেও এভাবে মারে না ও কামড় দেয় না। তিনি আরো বলেন, ময়নাদেরকে দেখার জন্য হাসপাতালে রমিজ মেম্বারকে পাঠিয়েছি। আমি চাই দুই পক্ষ মিলেমিশে থাকুক।
-এমএসএইচ/এফএইচ