রবিবার ● ১৯ আগস্ট ২০১৮
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » ভোলার হাটগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু, চাহিদার চেয়ে পশু মওজুদ বেশী
ভোলার হাটগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশী গরু, চাহিদার চেয়ে পশু মওজুদ বেশী
বিশেষ প্রতিনিধি: চলতি মাসে উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। এ উপলক্ষে পুশু কোরবানী করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এ জন্য চাই পর্যাপ্ত পশু। এবছর ভোলার চাহিদার চেয়ে বেশি পশু মওজুদ রয়েছে। সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ পশু। আর মওজুদ আছে ১ লাখ ১৩ হাজার গরু, ছাগল ও মহিষ। যা গত বছরের তুলনায় ১০ হাজার বেশি রয়েছে। জেলায় মোট প্রায় ১ হাজার ৫শ’ খামারে সম্পুর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরামর্শে পশু মোটা-তাজা করা হয়েছে। এর বাইরেও পারিবারিকভাবে জেলায় প্রচুর পরিমাণ গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু প্রতিপালন করা হয়েছে। তবে এবছর ভোলায় অন্যান্য জায়গা থেকে গরু সমাগম তেমন একটা না হওয়ায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় গরু। যা নাগালের বাইলে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতা বলছেন, গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি থাকায় দাম একটু বেশী। এদিকে হাটে কোন চাঁদাবাজি নেই, তবে পর্যাপ্ত জাল টাকার মেশিন না থাকায় কিছুটা চিন্তিত বিক্রেতারা। অন্যদিকে হাটগুলোতে নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশুরু হাটগুলোতে যাতে অসুস্থ্য বা রুগ্ন গরু না তোলা হয় সে জন্য জেলার ৭ উপজেলায় ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব মেডিকেল টিমের সদরে ৩টি উপ-কমিটিসহ অন্যান্য উপজেলায় ২টি করে উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব টিম পশুর হাটগুলোতে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই টিমগুলোকে তদারকি করার জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
সূত্রে আরো জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পশু জবাহের জন্য জেলার ১৩৫ জন কসাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১৮ বছরের নীচে যাতে কেউ পশু জবেহ না করে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা ও পশুর চামড়া যাতে করে নষ্ট না হয় এ জন্য কসাইদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, জেলায় মোট ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২০টি গরু, ১ লাখ ৯৬ হাজার ৯শ’টি ছাগল, ৮৪ হাজার ৮৩৫টি মহিষ, ১৯ হাজার ৭৭২টি ভেড়াসহ মোট ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৭টি পশু পালন করা হয়েছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৬৭টি চর রয়েছে। এসব চরে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচর সবুজ ঘাস হয়। তাই চরে যুগ যুগ ধরে হাজার হাজার গরু-ছাগল, মহিষ পালন করে আসছে খামারী এবং কৃষকরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত বছরের কোরবানীতে জেলায় ৯৪ হাজার পশু জবেহ করা হয়েছিল। এবছল গরু-ছাগলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে তা সম্ভাব্য প্রায় ১ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে খামারগুলোতে পশু মোটা-তাজা করণ করা হয়েছে। সবুজ ঘা, দানাদার খাদ্য, ভাত, খরের সাথে ইউরিয়াসহ সুষম খাবার মিষিয়েই গরু মোটা-তাজা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত গরুর মওজুদ থাকায় ইন্ডিয়া থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন হয়নি। তবে কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা কিছু বড় গরু ভোলায় আনেন বিক্রির জন্য। এছাড়া এখান থেকে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরু বিক্রির জন্য নেয়া হয়েছে।
ভোলার বেশ কয়েকটি পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে জমে উঠেছে ভোলার কোরবানীর পশুরহাট। এ বছর হাটগুলোতে ভারতীয় গরুর সমাগম না থাকায় চড়াও মুল্যে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির গরু। যা নাগালের বাইলে বলে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতা বলছেন, গো খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেশী। এদিকে হাটে নেই কোন চাঁদাবাজি। তবে জাল টাকার পর্যাপ্ত মেশিন না থাকায় কিছুটা চিন্তিত বিক্রেতারা। হাটগুলোতে নিরাপত্তায় ৩ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বিগত বছর কোরবানীর ঈদে পশুর দাম কিছুটা সাধ্যের মধ্যে থাকলেও এ বছর দেশীয় গরুর দাম অনেকটা আকাশ চুম্বি। হাটগুলোতে দেশীয় গরুর ব্যাপক সমারোহ। ইচ্ছেমত দাম হাকিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাকে পশুরহাট সরগরম হলেও ব্যাপকহারে এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী গরু সরবরাহ থাকলেও দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে অনেকের গরু পছন্দ হলে তা সাধ্যের মধ্যে থাকায় কিনে নিতেও দেখা গেছে। ভোলার বড় হাটগুলোর মধ্যে গরুরহাট, গজারিয়া, ইলিশা, পরানগঞ্জ, বাংলাবাজার, ঘুইংগারহাট, লালমোহন, চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দিন অন্যতম। এসব হাটে বিভিন্ন এলাকার গরুর মালিক ও ব্যবসায়ীরা গরু উঠিয়ে থাকেন। কেউবা দূর দুরান্ত থেকে ছুটে আসেন গরু বিক্রির জন্য।
ভোলা সদরের আলীনগর সাহেবের কাচারীর স্কুলে মাঠে পশুর হাটে দিয়ে দেখা গেছে, জম-জমাট বেচা-কেনা। স্থানীয় গরু এবং অন্যান্য এলাকার গরুর সমাগম হয়েছে। কেউ আবার গরুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে এনেছেন যাতে করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
গরু কিনতে আসা শহিদ বলেন, হাটে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। যে গরুর দাম গত বছর ৫০-৬০ হাজারের মধ্যে ছিল, তা এবছর ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা। ক্রেতা মাইনুদ্দিন বলেন, গরুর দাম অনেক বেশী। এক শ্রেণীর পাইকার-দালাল গরুর মালিকদের কাছ থেকে গরু কিনে বাজারে বেশী দামে বিক্রি করছেন। এতে গরুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। তবে মাঝারি সাইজের গরু ৪০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
এ বছর বাজারে ভারতীয় গরু না থাকায় দেশীয় গরুর দাম অনেক বেশী বলে মনে করছেন ক্রেতা মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, বাজারে গরু থাকলেও কেনা-বেচা তেমন একটা জমেনি, অনেকেই সাধ্যের মধ্যে গরু কিনছেন। অন্যান্য ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাটে নেই চাঁদাবাজি বা হয়রানি, সবাই নির্বিঘেœ গরু বাজারে আনতে পারছেন। তবে জাল টাকার মেশিন না থাকায় অনেকেই চিন্তিত।
ভোলা সদরের ধনিয়া গোডাউন বাজারে গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, দেশীয় গরুর সমারোহ। গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য বড় ও মাঝারি সাইজের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। তবে বেশিরভাগ গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা।
ছাগলের বাজার কিছুটা বাড়লেও তা সাধ্যের মধ্যে আছে বলে জানায় আনেক ক্রেতা। তবে দু’একদিন পরেই সরবরাহ বেশি হলে দাম নেমে আসবে বলেও মনে করছেন তারা। বিক্রেতারা বলছেন পশু খাদ্যের দাম বেশি, তাই বাধ্য হয়েই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইলিশার নজরুল নামে এক গরু বিক্রেতা বলেন, একটি গরু এনেছি দাম হাকানো হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। বিক্রেতা ইউসুফ, সবুরসহ অন্যরা বলেন, গো খাদ্যের দাম ও শ্রমিক মজুরি বেশী থাকায় গরুর দদাম কিছুটা বেশি। তবে ক্রেতারা গরু কিনছেন। এদিকে হাটগুলোতে রোগাক্রান্ত গরু সনাক্ত করতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
মেডিকেল ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা পশু কর্মকর্তা দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতিটি বাজারেই ক্যাম্প বসানো হয়েছে। যাতে কেউ ফাঁকি দিয়ে রোগাক্রান্ত গরু বিক্রি করতে না পারে। সর্বত্রই খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। যেখানেই এমন খবর পাওয়া যাবে সেখানেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোকতার হোসেন বলেন, পশুরহাটে জাল টাকার মেশিন বসানোর পাশাপাশি ৩ স্তরেরর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পশুরহাটগুলোতে ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারতের নিরাপত্তায় পুলিশ ফোর্স মাঠে রয়েছে।
এদিকে জেলা সব পশুর হাটগুলোতেই সবাই নিজেদের সাধ্যের মধ্যে পশু ক্রয় করছেন। তবে দিন যত ঘনিয়ে আসবে কেনা-বেচা আরো বাড়বো বলে মনে করছে ইজারাদাররা।
-এমএসএইচ/এফএইচ