মঙ্গলবার ● ১৭ এপ্রিল ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় » লালমোহন ও মনপুরায় ঝড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৪শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত-১, আহত-১৮
লালমোহন ও মনপুরায় ঝড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৪শ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত-১, আহত-১৮
ফরহাদ হোসেন/ মো. ছালাউদ্দিন: ভোলার লালমোহন ও মনপুরায় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে প্রায় ৩ শত ঘরবাড়ি ও ৫০ টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৪ শত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকা থেকে পরে নিহত হয়েছেন এক পাট ব্যবসায়ী। গাছপালা ও ঘরের চালা উপড়ে পড়ে আহত হয়েছেন ৬ শিক্ষাথী সহ অন্তত্য ১৮ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২শ একরের বেশি জমির ফসল।
লালমোহন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান রুমি জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় আড়াইশ ঘর বাড়ি ও ৫০ টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় ঝড়ের কবলে পড়ে উপজেলার তেতুঁলিয়া নদীতে নৌকা থেকে পরে মাগুড়া জেলার মো. শুক্কুর আলী (৫০) নামের এক পাট খড়ি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি কলমধরি রাজাপূর ইউনিয়ন মোহাম্মদপূর থানা তার পিতার নাম আব্দুল হামিদ মোল্যা। গাছপালা উপড়ে পরে ৬ শিক্ষার্থী সহ আহত হয়েছেন অন্তত্য ১৮ জন। এর মধ্যে ১৬ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ২ জন লালমোহন সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ শ একরের বেশি জমির ফসল। বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে পুকুরের পানিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঝড়ের তা-বে ব্যাপক গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারের কাজ চলছে।
তিনি আরো জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
এছাড়া মনপুরায় হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে মঙ্গলবার মহিলা মাদ্রাসাসহ ৪টি ইউনিয়নের ৫০ শতাধিক ঘরবাড়ী ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে নৌকা ট্রলারসহ শতাধীক গাছপালার ক্ষতি হয়েছে। রবি শস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কালবৈশাখী ঝড়ে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাদ্রাসা, দোকানঘর, বসত ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডবণ্ড করে দেয় উপজেলার ৫০ শতাধিক ঘরবাড়ি, মাদ্রাসা, মসজিদ। অসংখ্য গাছপালা ঝড়ে পড়ে যায়।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের উত্তর সাকুচিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটির সম্পুর্ন টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ছাত্রীদের ক্লাস নেওয়ার কোন ব্যাবস্থা নেই। ক্লাসরুমের অভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ক্লাশরুম সম্পুর্ন ভেঙ্গে ধুমরে মুচড়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উত্তর সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার উপর জয় দাসের সেলুন দোকানটি ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গাছের সাথে ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রবিউল, মোশারফ সর্দার, এরশাদ বসতঘর সম্পুর্ন বিধ্বস্ত হয়েছে। সাঈদুর রহমান, মোঃ জসিম এর দোকান ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া ১নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান ঘাট সংলগ্ন মেঘনায় ঝড়ে লন্ডবণ্ড করে দিয়েছে মোঃ আলী নৌকা। আংশিক ক্ষতি হয়েছে নুরুদ্দিন, ছলেমান ও মনির মাঝির মাছ ধরা ট্রলারগুলো।
হাজির হাট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড দাসের হাট বেড়ী পাড়ে দেখা গেছে শ্রীকৃঞ্চ দাস, সাধন বালা দাস, সাইনুর বেগম ও অলিউল্যার বসত ঘরগুলোর চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ৮নং ওয়ার্ডের মোঃ আবু মিয়ার বসত ঘরটি ও ৬নং ওয়ার্ডের শ্রীকৃঞ্চ দাসের বসত ঘরটি সম্পুর্ন বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া উত্তর চরযতিন জামে মসজিদের আংশিক টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে । আবার বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে লাইনের ক্ষতি হয়েছে।
উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আঃ রহিম জানান, ঝড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করব।
এব্যাপারে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল হাসেম সিরাজ কাজী বলেন, হঠাৎ ঝড়ে মানুষের বসত ঘরবাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয় খোজ খবর নিচ্ছি।
৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ কাজল জানান, ঝড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি ইউপি সদস্যদের ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয় খোজ খবর নেওয়ার জন্য বলেছি।
হাজির হাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দ্বিপক জানান, আমার ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয় খোঁজ খবর নিচ্ছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল আজিজ ভূঁঞা বলেন, ঝড়ে উপজেলায় মাদ্রাসাসহ বসত ঘরবাড়ির ক্ষতি হওয়ার খবর পেয়েছি। আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করব।
-বিএস/এফএইচ