শুক্রবার ● ২৪ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মাদক ও জুয়ারীদের দখলে দক্ষিণ আইচা আধুনিক হাসপাতাল !
মাদক ও জুয়ারীদের দখলে দক্ষিণ আইচা আধুনিক হাসপাতাল !
এম আমির হোসেন, চরফ্যাশন প্রতিনিধি: ভোলার জেলার বিছিন্ন দু’টি দ্বীপ ইউনিয়ন সহ ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দক্ষিণ আইচা থানা। ১৯৯৮সালে এই অঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা ভেবে প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণ আইচা ২০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। প্রথম দিকে হাসপাতালটি সিকিৎসা সেবা ভাল চললেও এখন সেবা দিচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। হাসপাতাল ভবনগুলোতে মাদক সেবন, জুয়ার, নারী নির্যাতনের নিরাপদ স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। স্টাফদের সহযোগীতা নিয়ে মাদক সেবি ও জুয়ারীরা আড্ডায় মেতে উঠেছে। দক্ষিণ আইচা থানার পুলিশের একটি ভাগ রয়েছে বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ। বরাদ্দ ও উন্নয়ন খাত থেকে মাসিক বেতন বাতাদি নিয়মিত পরিশোধ করা হলেও হাসপাতালটির আধুনিক যন্ত্রপাতি এখন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসক থেকে শুরু করে আয়া, মালি, নাইট গার্ড পর্যন্ত চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন পেশায় (কর্মে) সাথে জড়িয়ে অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে কর্মচারীদের কোন নজরদারী না থাকায় কম্পাউন্ডে ধর্ষণের মত ন্যাক্কর জনক ঘটনায় ৩টি মামলা চলমান রয়েছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে যে, কর্মচারীদের আবাসিক কক্ষগুলো রাতের বেলা জুয়ারীদের নিকট প্রতি রাত চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেয়া হয়। অফিস সময়ে মাত্র ১ জন ফার্মাসিস্ট হাবিবকে পাওয়া গেলেও বাকীরা নিজেদের অন্য পেশায় ব্যস্ত থাকেন বলে জানা যায়। হাসপাতালের সিকিৎসা সেবা কথা না ভেবে এবং চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষকে আরো ভোগান্তি করতে ভোলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. ফরিদ আহম্মেদ বরাদ্দকৃত এ্যাম্বুলেন্সটিও ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। অত্র এলাকার মানুষ চিকিৎসা সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত রয়েছে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মৃত্যুর পথ যাত্রী হচ্ছে। আর হাসপাতাল ও ইনডোরে থাকা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি গুলো বিনষ্ট হচ্ছে।
সৌদি যুবরাজের হাত ধরে ১৯৯৮ সালে আর্থিক সহায়তায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, আলট্রাসনোগ্রাম, এক্্ররে, ইসিজি, ডেন্টাল ইউনিট, এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটারসহ উন্নত চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে এ অত্যাধুনিক মানের ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি। তৎকালীন সৌদি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুদানের মাধ্যমে ৪ জন ডাক্তারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বর্তমানে প্রায় ২ বছর যাবৎ অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে চলছে হাসপাতালটির করুন দশা। ইতিপুর্বে ২ জন ডাক্তার সরকারী চাকুরী নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। মেডিকেল অফিসার হিসাবে ডাক্তার হুমাযুন কবির হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তিনি আবার প্রতিদিন অফিস করেন না। তিনি অন্য উপজেলা লালমোহন বাসা নিয়ে স্ব-পরিবারসহ অবস্থা করেন। সেখান থেকে সপ্তাহে ২/১ দিন ১১ টার সময় এসে দুপুর ১টায় চলে যান। বাকী একজন মেডিকেল অফিসার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বরিশাল ডেপুটেসনে রয়েছেন। থোক বরাদ্দ থেকে ঔষুধ সরবরাহ, ৬/৭ মাস পর পর বেতন প্রদান, লোকবল সংকটের কারণে হাসপাতালের ইনডোর বিভাগ অঘোষিত ভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে জরুরী চিকিৎসার জন্য রোগীদের অন্যত্র যেতে হচ্ছে। যাদের আর্থিক অ-স্বচ্ছলতা রয়েছে তারা বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরছে।
বিছিন্ন দ্বীপ কুকরী-মুকরীর রোগী ইকবাল হোসেন জানান, এক সময় আমরা চিকিৎসা পেতাম এই হাসপাতালে। এখন ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা নেয়া সম্ভাব হয় না। কুকরী-মুকরীর বিছিন্ন দ্বীপ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে চরফ্যাশন সদরে চিকিৎসা নিতে এলে অনেক জরুরী রোগীরা পরকালের যাত্রী হয়ে যায়।
এব্যাপারে মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবিরের সাথে আলাপ করলেও তার কাছ এই বিষয়ে কোন সদউত্তর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন করলেই কথা এড়িয়ে যান এবং ফোন কেটে দেন।
হাসপাতালটি দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত ভোলার সিভিল সার্জনের সাথে আলাপ করতে চাইলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভাব হয়নি।
মাদক ও জুয়ার আসরের বিষয় কিছু জানেন না বলে জানান দক্ষিণ আইচা থানার অফিসার ইনচার্জ মো.হানিফ সিকদার। তিনি আরো জানান, কেউ আমাকে অবগত করায়নি। বিষয়টি আমি দেখতেছি।
-এফএইচ