সোমবার ● ৬ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » শিরোনাম » ‘বাংলাদেশের জলসীমায় বিদেশী মাছ ধরার নৌকা অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মঘাতি’
‘বাংলাদেশের জলসীমায় বিদেশী মাছ ধরার নৌকা অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য আত্মঘাতি’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা, ৬ মার্চ ২০১৭। সম্প্রতি অনুমোদিত খসড়া সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০১৭ এর সংশোধন দাবি করেছে ২৮টি অধিকার ভিত্তিক কৃষক, মৎস্য শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন। তারা রবিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় বিদেশি মাছ ধরার নৌকাকে মাছ ধরার লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ বাতিলের দাবি জানান। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশের জলসীমায় মাছ ধরার জন্য বিদেশি জাহাজকে মাছ ধরার অনুমোদন দিলে অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি তৈরি করবে। ”খসড়া সামুদ্রিক মৎস্য আইন ২০১৬-এর সংশোধন চাই: বাংলাদেশের জলসীমায় বিদেশী মাছ ধরার নৌকা অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের জন্য হবে আত্মঘাতি” শীর্ষক এই মানব বন্ধনটি আয়োজন করে অনলাইন নলেজ সোসাইটি, অর্পণ, উদ্দীপন, উদয়ন বাংলাদেশ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, এসডিও, কোস্ট ট্রাস্ট, জাতীয় কৃষাণী শ্রমিক সমিতি, জাতীয় শ্রমিক জোট, ডাক দিয়ে যাই, ডোক্যাপ, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা, নলসিটি মডেল সোসাইটি, পিরোজপুর গণ উন্নয়ন সমিতি, প্রান, প্রান্তজন, পিএসআই, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (জাই), বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন, লেবার রিসোর্স সেন্টার, সংকল্প ট্রাস্ট, সংগ্রাম, সিডিপি, বাংলাদেশ মৎস্যশ্রমিক জোট, হাওর কৃষক ও মৎস্য শ্রমিক জোট ও মুক্তির ডাক।
কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান এবং ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সুবল সরকার বলেন, সমুদ্র সীমা বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করতে বাধ্যবাধকতা নেই বাংলাদেশের, সমুদ্র আইন সংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদে বলা আছে যে, কোন দেশের মৎস্য সম্পদ উদ্বৃত্ত থাকলে, সে তার জলসীমায় বিদেশি জাহাজকে মাছ ধরার অনুমোদন দিতে পারে। আমাদের উদ্বৃত্ত সম্পদ নেই। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন অগণতান্ত্রিক সরকার প্রণীত সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশে বিদেশি জাহাজ বা নৌযানকে বাংলাদেশে জলসীমায় মৎস্য আহরণের লাইসেন্স প্রদানের সুযোগ ছিল। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে সেই সুযোগ বাতিলের দাবি জানাই। ফয়েজ আহমেদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে কী পরিমাণ সম্পদ আছে প্রায় ১৮ বছর ধরে এর কোনও জরিপই নেই। আমাদের সম্পদ আমাদের জন্যই পর্যাপ্ত কিনা আমরা জানি না, বিদেশি জাহাজ আসলে এর উপর নির্ভরশীল ৫ লাখ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। মিহির বিশ্বাস বলেন, উপকূলে যেসব প্রান্তিক জেলেরা মাছ ধরে, তারা প্রায় সবাই সনাতনী পদ্ধতিতে মাছ ধরেন। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন বিদেশি জাহাজ আসলে তারাই অধিকাংশ মাছ ধরে নিয়ে যাবে। আমাদের প্রান্তিক জেলেদের কষ্ট বাড়বে। জায়েদ ইকবাল খান বলেন, সরকারকে দেশের জনগণের কথা ভাবতে হবে আগে। যেখানে আমার দেশের সম্পদ আমার জন্যই যথেষ্ট নয়, সেখানে বিদেশি জাহাজকে কেন অনুমোদন দেব।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিশাল সমুদ্র এলাকা বিজয়ের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করিম এই সমুদ্র বিজয়কে নস্যাত করতে একটি চক্র দেশের জলসীময়ি বিদেশি মাছ ধরার নৌকা আসার সুযোগ দিতে চায়। আমাদের পুরো উপকূলীয় এলাকা ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাবে, দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হবে যদি বিদেশি জাহাজকে আমাদের এলাকায় মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়। আমাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো: খসড়া সামুদ্রিক মৎস্য আইন সংশোধন করে বিদেশি মাছ ধরার যানকে দেশে মাছ ধরার লাইসেন্স দেওয়ার নিয়ম বাতিল করতে হবে, বঙ্গোপসাগরে কোনও জরিপের আগে সকল প্রকার মাছ ধরার ট্রলারের অনুমোদন প্রদান বন্ধ করতে হবে, বড় ট্রলারগুলোর জন্য ৪০ মিটারের কম গভীর এলাকায় মাছ ধরা নিষেধ, ট্রলারগুলো যেন তাদের সীমানা লংঘন না করে সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করতে হবে, দেশের প্রকৃত মৎস্যজীবীরাই যেন লাইসেন্স পান সেটা নিশ্চত করতে হবে, সকল মাছ ধরার ট্রলারে কর্মরত সকল মৎস্য শ্রমিকের ন্যায্য সুযোগ সুবিধা, যেমন: যথাযথ পারিশ্রমিক, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও বীমা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, সকল মাছ ধরার নৌকাকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে, অনুমোদন ছাড়া কোনও নৌকা যেন মাছ ধরতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারী বাড়াতে হবে।
-এফএইচ