সোমবার ● ৯ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » উন্নয়নের পথে ভোলা
উন্নয়নের পথে ভোলা
বিশেষ প্রতিবেদন • ক্রমেই ডিজিটাল হচ্ছে দ্বীপ জেলা ভোলা। উন্নয়নশীল এ জেলায় রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ। যা খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। আর ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতু নির্মিত হলে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে সড়ক পথে সরাসরি ঢাকা যাওয়ার প্রকল্প হাতে নেবে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেই সরাসরি ঢাকার সাথে যুক্ত হবে ভোলা। এ জেলা আরো এগিয়ে যাবে। এ জেলার উন্নয়ন কেউ ঠেকাতে পারবে না। এমনটাই আশা সকলের। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো ভোলা জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখান থেকে ইউনিয়নের বাসিন্দারা ই-সেবা পাচ্ছেন। বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সরকারী ওয়েব সাইটে সবধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে ভূমি অফিসসহ অন্যান্য অফিসিয়াল কার্যক্রমেও। ওয়েব সাইট থেকেই জনগণ জেলার প্রয়োজনীয় সব তথ্য জানতে পারছেন।
বিগত তিন/চার বছরে জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে জেলায় কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা নেই। অন্যান্য অপরাধও কমে এসেছে। মাদকের গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রতিটি স্কুলে মাদক বিরোধী সেমিনার করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। কমিয়ে আনা হয়েছে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। নদী ভাঙন, প্রকৃতিক দুর্যোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে জেলার প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু ভোলা একটি দ্বীপ জেলা, এর চারদিকে নদী। তাই নদী ভাঙন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সদরের প্রচীন দ্বীপ রামদাসপুর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য এলাকায় ভাঙনের যে ব্যাপকতা তা ভাবিয়ে তুলেছে সকলকে। জেলার বিচ্ছিন্ন চরের মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও মাটির কেল্লা স্থাপনের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প। দুর্যোগের সময় শহর থেকে দূরবর্তী এসব চরের মানুষকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জনগণকে সচেতন করতে সভা হচ্ছে। পাশাপাশি জন প্রতিনিধিদেরও এ বিষয়ে বার বার সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে। বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেয়াখালীর সঙ্গে ভোলার আন্তঃজেলা জেলা সীমানা বিরোধ দীর্ঘদিনের। এসব সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
জেলার উন্নয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রাম ও দুর্গম এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক ও চিকিৎসক দেওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। চরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কাজ করছে। ভোলার অন্যতম সামাজিক সমস্যার নাম বাল্য বিয়ে। বাল্য বিবাহ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও বাল্য বিয়ে হচ্ছে এমন খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। তারপরও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে প্রায়ই বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটছে। এ সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। জেলায় পর্যাপ্ত গ্যাসের মজুদ রয়েছে। এই গ্যাস থেকে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২২৫ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে জেলায় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না। এছাড়া কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি ও কুটির শিল্পেও সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভোলা-বরিশাল রুট হলেই সড়ক পথে সরাসরি ঢাকায় যাওয়া যাবে। জেলার সার্বিক শিক্ষার হার বেড়েছে। গ্রাম ও দুর্গম চরে স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুদের স্কুলমুখী করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে নারী শিক্ষার হারও।
মৎস্য খাতেও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু মাছ ধরার মৌসুমে দস্যুতা একটি বড় সমস্যা দস্যুতা নির্মূলে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন। পুলিশ ও কোস্টগার্ডকে দস্যুতা নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপে দস্যুতা কমে এসেছে ।কয়েক বছরের মধ্যেই ভোলা একটি উন্নত জেলায় রুপান্তিত হবে এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।