শুক্রবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » নৌকার হাল ধরে বিজয়ী আইভী
নৌকার হাল ধরে বিজয়ী আইভী
নারায়ণগঞ্জ: জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতির নানা সমীকরণের মাঝে টানা দুইবার নারায়ণগঞ্জের নগর প্রধানের আসনে বসার অধিকার পাচ্ছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিরতিহীন ৮ ঘণ্টা ভোট প্রদানের মাধ্যমে নগরবাসী বেছে নিয়েছেন আলোচিত এই মেয়রপ্রার্থীকে। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট। বেসরকারি ফলাফলে বলা যায় নাসিকে মেয়র হচ্ছেন আইভী।
শুক্রবার সকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত নাসিকে সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেছেন আইভী। মাত্র কয়েক দিন সাবেক হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জের নবনির্বাচিত মেয়রের মূল লড়াই হয় ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে। এ ছাড়া আরো ৫টি রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে জয়ের লড়াই করেছেন কোদাল প্রতীকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল হক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাছুম বিল্লাহ, এলডিপির কামাল প্রধান এবং কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নানা টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে জয় নিশ্চিত করেছেন আইভী। পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মাঝেও প্রমাণ করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী তাকে ভালোবাসে।
নাসিক নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই পর্ব থেকে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নিজ দলের স্থানীয় নেতাদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় আইভীকে। এতো কিছুর মাঝে ধারাবাহিকতা রেখে তিনি প্রমাণ করেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী তাকে ভালোবাসে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৱ আইভী এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের কাছে এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে বলে একমত পোষণ করেন।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের রেকর্ড : আ’লীগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে ওয়াদা করেছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।
এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সুষ্ঠুভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
ভোট সুষ্ঠু হয়েছে, তবে… : বিএনপি
নাসিকে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এ পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু মনে হয়েছে। ফলাফল গণনায় সত্যিকার অর্থে কোনো কারচুপি না হলে জনগণের রায় মেনে নেব।
রিজভী বলেন, জনগণের রায় আমরা মেনে নেব। যে ফলাফলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে সেটা মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত। নির্বাচনটা কতটুকু সুষ্ঠু হয়েছে, বা এর গভীরে কী চলছে সেটা ফলাফল ঘোষণার পর বোঝা যাবে।
পর্দার অন্তরালে কী হয়, তা আমাদের জানা নেই। প্রশাসন, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সবার প্রতি আমাদের আহ্বান, ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত পর্দার অন্তরালে যেন কোনো কিছু না ঘটে যোগ করেন রিজভী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলেছি। এই সরকারের আমলে ফলাফল ছিনিয়ে নেওয়ার অনেক ঘটনা ঘটেছে। শেষ মুহূর্তে প্রভাব বিস্তার করে ফলাফল অনুকূলে নিতে পারে।
প্রার্থী-সমর্থক সহযোগিতা করলেই সুষ্ঠু ভোট : সিইসি
নাসিকে ভোট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা সহযোগিতা করলেই সুষ্ঠু ভোট হওয়া সম্ভব।
কাজী রকিব বলেন, প্রতিবার আমরা একই ব্যবস্থা নিই। মূলত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা সহযোগিতা করায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। জনগণের রায় যদি সবাই মেনে নেন তাহলে নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হওয়ার সুযোগ থাকে না। এই নির্বাচনের মত পরবর্তী নির্বাচনেও যাতে সবাই জনগণের রায় মেনে নেয় এই আশা করছি।
এ সময় সিইসি বলেন, নির্বাচনে প্রতিটি ভোটার যাতে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, আনন্দচিত্তে ভোটকেন্দ্রে এসে স্বাচ্ছন্দে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল।
প্রথমবারের মত দলীয়প্রতীকের নির্বাচনে সাতটি দলের মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কররেন। এছাড়া ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন এবং ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নাসিকে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৪টি এবং ভোট কক্ষ ছিল ১ হাজার ৩০৪ টি।