সোমবার ● ২৮ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলার উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ভেসাল জাল
ভোলার উপকূল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ভেসাল জাল
শাহীন কুতুব/ ইউসুফ আহম্মেদ : নদীর বুকে জল আছে, জলের ভিতর আছে মাছ। আমাদের দেশে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় মাছ অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এখনো গ্রাম-অঞ্চলের মানুষ নদী, খাল কিংবা জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তেমনেই একজন কৃষক আঃ মালেকের কথাই ধরা যাক। লালমোহন উপজেলার রায়চাঁদ এর বাসিন্দা তিনি। পেশায় এক জন কৃষক হলেও অবসর সময়ে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে জাল পাতেন খালে। জোয়ারের পানি উঠে বর্ষায় বিল-খাল ডুবে যায়। আর সে সমস্ত পানি নামতির সময় খাল অথবা জোড়া খালে ভেসাল জাল স্থানীয় ভাষায় বেগ জাল পেতে মাছ ধরেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত্র ১০ টা পর্যন্ত, আবার ভোর ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তিনি। দেশীয় প্রজাতির শৌল, টাকি, বোয়াল, শিং, কৈ সহ নানা জাতের মাছ পানির সাথে ভেসে আসলে আটকা পড়ে এই জালে। বাঁশ আর জ¦াল দিয়ে হাতে বানানো এই জাল ২/৩ ঘণ্টা পর পর ঢেঁকির মত পা দিয়ে চাপ দিয়ে উপরের দিকে তুলে এই জালে আটকে পড়া মাছ ধরেন জেলেরা। জাল তৈরি করতে ২-৩টি বড় বাঁশ লাগে আর মশারীর নেট দিয়ে এই জাল তৈরি করা হয়। এই জাল তৈরিতে খরচও কম লাগে। হাজার খানেক টাকা হলেই তৈরি করা যায় এই জাল। এই জাল দিয়ে দৈনিক ৫-৬শ টাকা রোজগার করেন জেলেরা। বাজারে দেশীয় মাছের চাহিদা থাকায় বিক্রিও হয় হরদম। বর্ষার মৌসুমে এই জালের ব্যবহার সবচেয়ে বেশী। তাছাড়া বছরের সব সময়ই জাল পাতেন জেলেরা। এক সময় বেগ জাল পেতে মাছ ধরার প্রচলন থাকলেও এখন আর এই জাল পাতা তেমন একটা দেখা যায় না। মাছ কম পাওয়া, খাল গুলোতে জোয়ারের পানি না আসা, খালগুলোর নব্যতা সঙ্কট, খাল সরু হয়েন যাওয়াসহ নানান সমস্যার কারনে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে বেগ জালের প্রচলন। এতে একদিকে যেমন জেলেরা বাড়তি আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি আমরাও বঞ্চিত হচ্ছি দেশীয় প্রজাতির মাছ খাওয়া থেকে। চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জসিম, আলাউদ্দিন, ফারুক জানান, আগের মত এখন আর খালে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। জোয়ারের পানি এখন আর খালে আসে না। তাই আমরাও আর জাল পাতি না। আগে মাছ ধরাটা পেশা থাকলেও এখন কৃষিকে বেচে নিয়েছি।
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ খালে বড় বড় বাঁধ দিয়ে বা খাল ভরাট করার কারনে জোয়ার-ভাটার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় খাল মরে যাচ্ছে। আর আস্তে আস্তে আবহমান এই বেগ জাল হারিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য সম্পাদ কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, বেশাল জাল একটি প্রচানী জাল যা খাল বিলে মাছ ধরার জন্য জেলেরা ব্যবহার করে থাকেন। তবে মৎস্য অধিদপ্তর এ জাল নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এই জাল মশারির কাপড় দিয়ে বানানো হয় যা দ্বারা মাছের ডিম ও রেণুসহ উঠে আসে জালে।
এ জাল বিলুপ্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরো জানান, খালে জোয়ারের পানি না আসা এবং অধিকাংশ খাল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য তিনি অনেকটা জেলেদেরকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, মশারি কাপড় দিয়ে মাছ ধরায় জালে মাছের রেণু পোনা ধরা পড়ে যাতে করে মাছের বংশ বিস্তার বিলুপ্ত হচ্ছে।
এফএইচ