সোমবার ● ৭ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » শীতের আগাম বার্তায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ভোলার খেঁজুর গাছিরা
শীতের আগাম বার্তায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ভোলার খেঁজুর গাছিরা
এইচ এম নাহিদ : দ্বীপ জেলা ভোলার বিক্ষ্যাত খেঁজুরের রস। শীত আসছে এক’পা-দু’পা করে। ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সিউলিরা খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্ততি চালাচ্ছেন তোর-জোর করে।
প্রাথমিক ভাবে শুরু হয়েছে খেঁজুরগাছ পরিষ্কার করা। ডালপালা কেটে পরিষ্কার করার পরই দফায় দফায় চাচ দেয়া হবে। বসানো হবে বাসের কঞ্চির নল। যা দিয়ে খেঁজুরগাছ থেকে বেয়ে আসবে এই সু-মিষ্ট রস। আর তা বেয়ে আসবে মাটির হাঁড়িতে। তাই ভোলায় পুরো শীতকাল জুরে এই মধূবৃক্ষকে ঘিরে চলবে গ্রামীণ উৎসব। গ্রামে গ্রামে তৈরি হবে খেঁজুরের গুর ও পাটালি। নানান রকমের বাহারী পিঠা তৈরীতে ধুম পরবে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। বিশেষত্ব হচ্ছে, যত শীত তত মিষ্টি ও সু-স্বাধু হয় খেজুরের রস। ঠোট কাঁপানো শীতে খেঁজুরের রস ও পিঠা এই অঞ্চলে জুরি নেই। শশুর বাড়ীতে জামাইর একটাই আবদার তোমার মাকে বল খেঁজুরের পায়েস ও পিঠা পাঠাতে।
আর ক’দিন পরই শহর থেকে গ্রামে ঢুকলেই শীতের ঝিরঝিরে বাতাসে ভেসে আসবে খেঁজরের রস ও গুরের মিষ্টি গন্ধ। তাই বর্তমানে পুরোদমে খেঁজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি চলছে। গাছিরা ধারালো কাটাইল হাতে নিয়ে ছুটছেন খেঁজুর গাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেঁেধ পাখির মতো ঝুলে গাছ কেটে মাটির হাঁড়ি ঝুলানো হবে। এই জন্যই শীতের মৌসুমে খেঁজুর চাষীদের চোখেমুখে খুশির চিহ্ন। তেমনি এই শিল্পকে নিয়ে খেঁজুর চাষীদের রয়েছে হতাশাও।
চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ এলাকার খেঁজুর গাছি মুকবুল বলেন, বছরের প্রায় আট মাস তিনি বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। আর শীত মৌসমে তিনি খেঁজুর খাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। তবে দিন দিন খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। রস আগের মত পাওয়া যায় না। শীত মৌসমে তিনি রস ও গুর বিক্রি করে মোটামটি তার সংসার ভালই চলে বলে জানান।
দেশে প্রচুর পরিমান অ-পরিকল্পিত ইটভাটার কারনে প্রতিবছরই বিনাশ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই গাছটি। কোন-কোন গ্রামে খেঁজুর গাছ খুজে পাওয়াও কঠিন হয়েছে। আবার গাছ থাকলেও গাছি নেই। অথচ খেঁজুরের গুর শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। যা কাজে লাগানোর জন্য সরকারি কোন পৃষ্টপোষকতা নেই। এর পিছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশের মাটিতে রপ্তানীকরে কাঁড়ি কাঁড়ি মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর জন্য বাড়তি খরচ ও জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়কপথ, রেলপথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ির আঙ্গিনায় খেঁজুর গাছ লাগিয়ে দেশের অথনীতির দ্বার উম্মোচিত হবে বলে মনে করছেন দেশের কৃষি বিশষজ্ঞরা।
এফএইচ