বৃহস্পতিবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হান্নান শাহকে বিএনপি নেতাদের শেষ শ্রদ্ধা
হান্নান শাহকে বিএনপি নেতাদের শেষ শ্রদ্ধা
ঢাকা : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রয়াত নেতার মরদেহ এসে পৌঁছালে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা তার কফিন দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন।বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য হান্নান শাহের মরদেহ রাখা হয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি অস্থায়ীভাবে মঞ্চে।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছের বলে পরিচিত এই নেতার কফিনে তার পক্ষ থেকে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জ্যেষ্ঠ নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়।বৃহস্পতিবার দুপুরে (বাদ জোহর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকের অংশগ্রহণে তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়।এতে ইমামতি করেন বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মাওলানা আব্দুল মালেক। জানাজার আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে আ স ম হান্নান শাহ ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তী পরিস্থতিতে অনেক নেতা যখন সরকারের চাপে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। জেল-জুলুম, হুমকি-ধামকিতেও তিনি অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে মাথা নত করেননি। তার এই চলে যাওয়া কেবল বিএনপির রাজনীতিতে নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি করলো। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। বিশেষ করে বিএনপি ও বাংলাদেশ গণতন্ত্রের সংকটে পড়েছিল ১/১১ অবৈধ সরকারের সময়ে; বিএনপির পক্ষে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন হান্নান শাহ।আমরা তার জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশ্ত নসিব করেন।স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বও চন্দ্র রায় বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে আ স ম হান্নান শাহ অনেকবার কারাবরণ করেছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি। তার মতো নেতা দলের জন্য খুব প্রয়োজন ছিলো। বড় অসময়ে তিনি চলে গেলেন। তার এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সৎ এবং নির্ভিক রাজনীতিবিদ ছিলেন আ স ম হান্নান শাহ। তার মতো রাজনীতিবিদ চলে যাওয়া মানে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়া। এ ক্ষতি শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির জন্য। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে যখন তার মরদেহ গুম করার চেষ্টা চলছিলো, সে সময় আ স ম হান্নান শাহ অসীম সাহসের পরিচয় দিয়ে রাঙ্গুনিয়া পাহাড় থেকে জিয়াউর রহমানের মরদেহ শহরে নিয়ে এসেছিলেন।বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হান্নান শাহ গণতন্ত্রের নির্ভিক সৈনিক ছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ওয়ান ইলেভেনসহ বিভিন্ন সময় তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। বিএনপির এই ক্রান্তিলগ্নে হান্নান শাহ�র অভাব মর্মে মর্মে অনুভব করছি। আমি বিশ্বাস করি- হান্নান শাহ যে আদর্শ রেখে গেছেন, সে আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।জানাজার পর বিএনপির পক্ষ থেকে হান্নান শাহ�র মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। এরপর একে একে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী, মুক্তিযোদ্ধা দল, ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস, তৃণমূল দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে হান্নান শাহর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।বাদ জোহর কার্যালয়ের সামনে জানাজায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, গিয়াস কাদের চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, শাহজাহান ওমর, আবদুস সালাম, গোলাম আকবর খন্দকার, আবদুল হালিম, কবির মুরাদ, ফজলুর রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কায়সার কামাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ২০ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাঈদ আহমেদ, খোন্দকার লুৎফর রহমান, গোলাম মুস্তফা ভুঁইয়া, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম ও মুম্তাফিজুর রহমান মোস্তফাসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নিতাই রায় চৌধুরীও দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।শনিবার বাদ আসর নয়া পল্টনের কার্যালয়ে হান্নান শাহের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে বলে বিএনপি মহাসচিব জানান।বৃহস্পতিবার সর্বশেষ জানাজা হবে মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদে। এরপর হান্নান শাহের মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখা হবে। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে হান্নান শাহের মরদেহ সড়ক পথে গাজীপুরে নেওয়া হবে। সেখানে সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সাড়ে ১০টায় কাপাশিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও জুমার পর বিকাল ৩টায় তার নিজ এলাকা চালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা হবে। এরপর ঘাগটিয়া গ্রামে বাবার করবের পাশেই সমাহিত করা হবে হান্নান শাহকে।আসম হান্নান শাহের ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান জানান, শনিবার বাদ মাগরিব মহাখালী ডিওএইচএসএর জামে মসজিদে হান্নান শাহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ডিওএইচএস জামে মসজিদের জানাজায় সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজ্জাম্মেল হক, সাবেক নির্বাচন কমিশনের এম. সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ওসমান ফারুক ও রুহুল আলম চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজায় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, জয়নুল আবদীন ফারুক, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের এএইচএম কামারুজ্জামান, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল, সাবেক সাংসদ এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), নাজিম উদ্দিন আলম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, সেলিম রেজা হাবিবসহ বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পরে সেখানেই জাতীয় সংসদের পক্ষে প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে নুরুল ইসলাম এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এলডিপির পক্ষে আবদুল করীম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম পৃথকভাবে ফুল দিয়ে প্রয়াত এই সংসদ সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।সকাল থেকে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে আসম হান্নান শাহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হয়।হান্নান শাহের মৃত্যুতে মঙ্গলবার থেকে চারদিনে শোক পালন করছে বিএনপি; কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা।হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে সিঙ্গাপুরের র্যাফেল হার্ট সেন্টারে মারা যান ৭৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।বুধবার সিঙ্গাপুর থেকে বিমানে আসম হান্নান শাহের মরদেহ ঢাকায় পৌঁছালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাতেই মহাখালীর বাসায় যান তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে তিনি প্রয়াত নেতার স্ত্রী নাহিদ হান্নানসহ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত�না দেন।