মঙ্গলবার ● ২৩ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ‘লালমোহনে মানুষের পেটে আস্ত বোতল রহস্যের জট’
‘লালমোহনে মানুষের পেটে আস্ত বোতল রহস্যের জট’
রিপন শান: ‘কেউ বলছে এমন আজগুবী ঘটনা বাপদাদা চৌদ্দ পুরুষের আমলে শুনি নাই। কেউ বলছে জ¦ীন ভুতে পারে না এমন কোনো কম্ম নাই। কেউ বলছে পাগলের কিনা ঘটে আর ছাগলের কিনা আসে যায়। আবার কেউ বলছে কলিকালে কত কিনা দেখতে হয়, কেয়ামত বুঝি এসে গেল। আবার বেউ বলছে খোদায় চাইলে গরু ও গাছে উঠে’। এতোসব মিশ্র প্রতিক্রিয়া ভোলার লালমোহনের সর্বস্তরের মানুষের। বিশেষকরে লালমোহন সদরের নিকটবর্তী ইউনিয়ন ফরাগঞ্জের শিক্ষিত অশিক্ষিত সাধারণ অভিজাত সকল শ্রেণি পেশার লোকের। এই সব মিশ্র প্রতিক্রিয়া সেই জালাল পাটওয়ারীকে নিয়ে, বরিশাল শহরের প্যারারা রোডস্থ হেল্থ কেয়ার ক্লিনিকের ডাক্তারেরা যে ব্যক্তির পেটে অ¯্রােপচার চালিয়ে গত ১৭ আগস্ট আস্ত সেন্টের বোতল উদ্ধার করেছেন ! একটা জ্যান্ত মানুষের পেটে কী করে ঢাউস সাইজের সেন্টের বোতল প্রবেশ করল সেই নিয়ে রীতিমত থতমত খেয়েছেন অপারেশনকারী বরিশালের ডাক্তারেরা। বারবার জ¦ীনভূতের কা- বলে চালিয়ে গেছেন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডারের অর্ন্তগত বটতলা গ্রামের আসুদআলী পাটওয়ারী বাড়ির আজব রোগী ৪ সন্তানের জনক জালাল পাটওয়ারীর স্বজনরা। আজগুবী এই ঘটনাটি নিয়ে সারা দেশ যখন তোলপাড় তখন এর পেছনে অনুসন্ধানে হাজির হই বর্ষকালীন লোদ-কাঁদা ডিঙিয়ে ফরাজগঞ্জের বটতলা গ্রামের সেই বাড়িতে। আমাদের উস্কে দিয়েছে গত ২২ আগস্ট বরিশাল বার্তায় প্রকাশিত বোতলখ্যাত ব্যক্তিটির সাথে এলাকার জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক, সেন্টের বোতল উপহার দিতে যাওয়া এবং এর ফলশ্রুতিতে ঐ স্ত্রীর স্বামী কর্তৃক ব্যক্তিটির পায়ুপথে জোরপূর্বক বোতল ডোকানোর চমকপ্রদ এবং লোমহর্ষক সংবাদটি। গত ২২ তারিখ বিকালে সরজমিন জনজিজ্ঞাসাবাদে এই চমক সংবাদটির কোন অস্তিত্ব খুজে পেলাম না। ফরাজগঞ্জ বটতলা গ্রাম, ঘটনাস্থল আসুদআলী পাটওয়ারী বাড়ি, পাশের বাড়ি চাঁনগাজী হাজী বাড়ি সহ এলাকার জনে জনে কথা বলেও আমরা খুজে পাইনি পেটে বোতলধারী জালাল পাটওয়ারী (৫০) পরকীয়াজনিত কোন কাহানি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁনগাজী হাজ¦ী বাড়ির গৃহবধূ নয়নতারা বলেন-দূরঃ এই লোক হইল দুনিয়ার পাগল। বাতাসের সাথে ছাড়া কোনো মাইনষের সাথেতো এই লোক কথা কয় না। গায়ের গন্ধে ভূত পেরত পলায়। এর লগে প্রেম করবো কোন মহিলায়! ফরাজগঞ্জ ইউপির সাবেক মহিলা মেম্বার (১,২,৩) নারগীস বেগম বলেন, জালালের মতো সোজা সরল মানুষ এই গ্রামে আর নাই। হাবাগোবা তোতলা এই লোকটার বন্ধুও নাই শত্রু নাই। এর উপর জোর কইরা এমন ঘটনা ঘটাইবো কারা !! সরজমিন অনুসন্ধানে রহস্য রোগী জালাল পাটওয়ারী জীর্ণশীর্ণ পর্ণোকুটিরে পৌছলে, বাড়ির অধিকাংশ স্বজনরা জালালের পেটে বোতল ডোকানোর বিষয়টিকে জ¦ীন ভূতের কান্ড বলে জোর দাবি করেছে। তারা জানিয়েছে, ‘জালালের মৃত মায়ের সাথেও ভয়ংকর জ¦ীন ছিল। মায়ের মৃত্যুর পর সেই জ¦ীন জালালের উপর ভর করেছে। ঘটনার দিন প্রচন্ড বর্ষার মধ্যে বাড়ির পাশের জলাধারে জালাল বড়শী বাইতে গেলে তার সাথে থাকা জ¦ীনেরাই ঐ কান্ডটি ঘটিয়েছে। জালালের চাচা হানিফ পাটওয়ারী (৬০) জানিয়েছে, সেদিন দুপুর ১২টার দিকে জালাল বাড়ির পেছনে বড়শী বাইতে যায়। ঘন্টা দুই পরে ঘরে ফিরে সে বলে আমার পেটে বোতল ঢুইকা গেছে। আমারে ডাক্তারের কাছে নিয়া চলো। সেই সময় তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা লুঙ্গিতে রক্তের দাগ আমরা দেখি নাই। অর লগে থাকা জ¦ীন ভুতেরাই অর পেটে বোতল ডুকাইয়া দিছে’। বেশির ভাগ লোকেই যখন জ¦ীন ভুতের পক্ষে, তখন ফরাজগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেম্বার ফয়জুল্লাহ খোকনের আজগুবি দাবি জালাল এবং আস্ত বোতল রহস্যকে আরো ঘণীভুত করেছে। তিনি জানান, জালাল বর্ষার মধ্যে পিছলাইয়া হাঁক্কা (সাঁকো) থেকে পইরা গেছে। ঐ সময় খালের মধ্যে পরে থাকা সেন্টের বোতল তার পায়ুপথে ডুইক্কা গেছে। জনে জনে যখন এতো কথা! কোনটা সত্য? আল্লাহ মালুম!!!
এফএইচ