সোমবার ● ২৫ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » নাসরিন ট্রাজেডির ১৩ বছর পর ফিরে আসলেন নিখোঁজ আব্দুর রব, উৎসুক জনতার ভিড়
নাসরিন ট্রাজেডির ১৩ বছর পর ফিরে আসলেন নিখোঁজ আব্দুর রব, উৎসুক জনতার ভিড়
এম আর পারভেজ/ ইউসুফ আহমেদ: স্মরণ কালের ভয়াবহ দূর্ঘটনা এমভি নাসরিন-১ ট্রাজেডির ১৩ বছর পর বাড়িতে ফিরে আসলেন নিখোঁজ আব্দুর রব। রোববার সন্ধ্যায় নিখোঁজের স্বজনরা চট্টগ্রামের সন্ধীপ সংলগ্ন উড়ির চর থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। নিখোঁজ আব্দুর রবকে এক নজর দেখার জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত উৎসুক জনতার ভিড় করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলার লালমোহনে রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ওহাব আলী হাজী বাড়ির আব্দুল ওহাবের ছেলে আব্দুর রব (৬৫)। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা সদর ঘাট থেকে প্রায় দু’ই হাজার যাত্রী নিয়ে লালমোহনের উদ্দ্যেশে ছেড়ে আসেন এমভি নাসরিন-১। সেই দিন বাড়ি আসার উদ্দেশ্য আব্দুর রবও লঞ্চে উঠেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে লঞ্চটি চাঁদপুরে ঘাট করে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল নিয়ে মেঘনার ডাকাতিয়া নামক এলাকায় আসলে পানির ¯্রােতে তলা ফেটে ডুবে যায়। এতে প্রায় হাজারের অধিক মানুষের সলিল সমাধি ঘটে। ভারি হয়ে উঠে মেঘনার আকাশ বাতাস। কান্নার রোল ও শোকে স্তবদ্ধ হয়ে উঠে লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রতিটি গ্রাম। সেই স্বজন হারা বেদনাটি এখনো বুক চেপে রয়েছেন ভোলাবাসী। স্মরণ কালের এ ভয়াবহ দূর্ঘটনার এমভি নাসরিন-১ ট্রাজেডির ১৩ বছর পর নিখোঁজ থাকা আব্দুর রবের সন্ধান মেলে চট্টগ্রামের সন্ধীপ সংলগ্ন উড়ির চরে। খোঁজে আনা মানুষটির চেহারার সাথে আব্দুর রবের অনেকটা মিল থাকলে ও ভাষার সাথে মিল না পাওয়ায় অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন। তাছাড়া স্মৃতি শক্তিও হারিয়ে পেলায় পিছনের অতিত ভুলে গিয়েছেন মানুষটি।
নিখোঁজ আব্দুর রবের স্ত্রী পেয়ারা বেগম বলেন, ২০০৩ সালের ৬ জুলাই আমার ছেলে রুবেলের সাথে দেখা করার জন্য আব্দুর রব বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রউনা হয়। কেউ কারো সাথে যোগাযোগ না থাকায় একই দিন রুবেলও বাড়ির উদ্দেশ্য ঢাকা থেকে লঞ্চে উঠেন। পরের দিন (৭ তে জুলাই) তিনি ঢাকা পৌছলে রুবেল বাড়িতে চলে আসার খবর পেয়ে ভাতিজা জসিমের কাছে উঠেন। ১ দিন ঢাকা থাকার পর ৮ তে জুলাই বিকেলে ভাতিজা জসিম তাকে (আব্দুর রবকে) লালমোহনের উদ্দেশ্য এমভি নাসরিন-১ লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে যান। রাতেই লঞ্চ দূর্ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।
ছেলে শাকিব ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, তের বছর আগে লঞ্চ ডুবিতে বাবা হারিয়ে গেছে। আমরা তাকে অনেক খোঁজা খোঁজির পর ফিরে পাবো তার আশা ছেড়ে দিয়েছি। কত কয়েক দিন আগে আমাদের এলাকার আবু মিয়া সন্ধীপ সংলগ্ন উড়ির চরে বেড়াতে যান। সেখানে আমার বাবাকে অচেতন অবস্থায় ঘুরা ফেরা করতে দেখে তার সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করলে তিনি বল্লি-চল্লি বলতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে আবু মিয়া বিষয়টি আমাদেরকে জানান।
পুত্রবধূ বিবি কুলসুম বলেন, আমার শ্বশুরের সন্ধান উড়ির চরে পাওয়া গেছে শুনে আবুর আত্মীয় হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে শনিবার আমরা সেখানে যায়। তার পুরানো ছবি, বুকের উপর ২ টি তিল ও বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বাকা রয়েছে তা সনাক্ত করে স্থানীয় লোক জনের সহযোগিতায় আমরা রোববার তাকে বাড়ি নিয়ে আসি।
উড়ির চরের বাসিন্দা মো. হোসেন মিয়া বলেন, আব্দুর রব প্রায় চার মাস আগে জেলেরা নদীতে ভাসতে দেখে উড়ির চরে নিয়ে এসে সিকিৎসা দেওয়া হয়। পিছনের স্মৃতি শক্তি হারিয়ে পেলায় তখন থেকে এ চরের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাবার চাইতেন এবং রাতে বাজারে বাজারে থাকতেন। তার আগে কোথায় থাকতেন তিনি তা বলতে পারেননি।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্যাহ সেলিম বলেন, খোঁজে আনা মানুষটির চেহারার সাথে আব্দুর রবের অনেকটা মিল থাকলে ও ভাষার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া স্মৃতি শক্তিও হারিয়ে পেলায় পিছনের অতিত ভুলে গিয়েছেন। আমরা ডিএনএ টেস্ট ও পিছনের স্মৃতি শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য সু চিকিৎসার উদ্দ্যেগ নিয়েছি।
ভোলা সিভিল র্সাজন ডা. ফরিদ উদ্দিন ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, এসকল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে সাইক্লোজিদের মাধ্যেমে চিকিৎসা দিলে পর্যায়ক্রমে স্মৃতি শক্তি ফিরে আসতে পারে। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে খোজঁ খবর নেওয়ার জন্য বলেছি।