বৃহস্পতিবার ● ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলার বাজারে ইলিশের সমাহার
ভোলার বাজারে ইলিশের সমাহার
রিপন শান/ সিরাজ মাসুদ • মাছের রাজা ইলিশের ভরপুর দেখা মিলছে দ্বীপজেলা ভোলার বাজারে। টানা দেড় মাস ধরে ভোলার মেঘনা, তেতুলিয়া, ইলিশা নদীতে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। ভোলার মৎস্য ব্যবসায়িরা জানিয়েছে, মৌসুমের চেয়ে এখন ইলিশ ধরা পরছে দ্বিগুনেরও বেশি। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারী বাজারে ইলিশের দামও আগের চেয়ে কম। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু ও নদ-নদীর পানি প্রবাহের তারতম্যের কারণে ইলিশ ধরা পড়ার মৌসুমও অনেকটা বদলে গেছে। যে কারণে ভোলা জেলার মেঘনা, তেতুলিয়া ও ইলিশা নদীতে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ।
গতবছরের আগস্টের শেষে কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও নভেম্বরের শুরুতে ভোলার নদ-নদী গুলো প্রায় ইলিশশূন্য হয়ে পড়েছিল। যার কারণে অনেক জেলে তাদের মাছ ধরার জাল ও আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম শিকোয় তুলে রেখেছিলেন। নভেম্বরের শেষ দিকে প্রকৃতিকে অবাক করে ভোলার নদ-নদীতে আবারও ইলিশ ধরা পড়ার ধুম লেগে যায়। বর্তমানে ইলিশের সমারোহ রীতিমত তাক লাগানোর মত। ভরা মৌসুমেও এত ইলিশ মেলেনি বলে জানিয়েছে ভোলার ইলিশা জেলেরা। ফলে জেলেপল্লীতে বইছে ইলিশ উৎসবের আমেজ।
রাতদিন মাঘের শীতকে উপেক্ষা করে ভোলার জেলেরা জাল ও ট্রলার নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন নদীর গহীনে। রাশি রাশি ইলিশ শিকার করে মেঘনা তেতুলিয়া ইলিশার জেলেরা ঘাটে ফিরছেন ভরপুর আনন্দ নিয়ে।
মেঘনা নদীর জেলেরা জানান, গত বছর একই সময় নদীতে জাল ফেলে তারা পোয়া, তপসি, বেলে, বাটা মাছসহ কিছু জাটকা ইলিশ ধরতে পেরেছিলেন। বড় ও মাজারী সাইজের কোন ইলিশ গত বছর তারা পাননি। চলতি বছর ইলিশ মৌসুমেও তারা এত ইলিশ মেলাতে পারেননি।
গত দেড়মাস ধরে নদীতে ইলিশের সমারোহ ভোলার জেলেদের কপালে নতুন আশার আলোর সঞ্চার করেছে। বে-মৌসুমে আশার চেয়ে বেশি ইলিশ পড়ছে বলে জেলেদের পক্ষে মহাজনের দাদনের টাকা সহজেই পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালমোহন ও তজুমদ্দিনের জেলেরা। দৌলতখানের জেলেরা জানিয়েছেন, তারা ইলিশ মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে মাছ ধরার জাল ও সরঞ্জাম উঠিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে নদীতে ইলিশের সমারোহ বেড়ে যাওয়ায় তারা আবার জাল ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারে মেতে উঠেছেন। বাজার দর ভাল থাকায় সব খরচ বাদ দিয়েও তাদের হাতে থেকে যাচ্ছে বাড়তি লভ্যাংশ। অনুসন্ধানে আরো জানাযায়, গত দেড় মাসের ভোলা সদরের কোড়ারহাট, নাছির মাঝি, তুলাতলী, হেতনারহাট, ভোলাখাল, ভাংতিরখাল, খরকিকাটির মাথা, দাশেরহাট, বিশ্বরোড ঘাট, লালমোহনের নাজিরপুরঘাট, মঙ্গলসিকদার বাতিরখাল ঘাট, চরফ্যাশনের বেতুয়াঘাট, বকশিঘাট, কচ্ছপিয়াঘাট, মনপুরার হাজিরহাটঘাট, সাকুচিয়ার তালতলিরঘাটসহ বিভিন্ন মৎস্যঘাট গুলোতে প্রায় নয় কোটি টাকার ইলিশ কেনা-বেচা হয়েছে। ভোলাখাল মাছঘাটের এক বিশ্বস্থ মাছ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে তিনি ঢাকার সোয়ারীঘাট ও কাপ্তান বাজারে ত্রিশ লাখ টাকার ইলিশ পাঠিয়েছেন। ভোলার উল্লেখযোগ্য মাছঘাট খরকি কাঠিরমাথা, ভাংতিরখাল ও বিশ্বরোড মাছঘাট থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই কোটি টাকার ইলিশ ঢাকা বরিশাল আড়তে পাঠানো হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে আগে ইলিশ মাছ আহরণের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকলেও ক্রমেই তা বদলে যাচ্ছে। নাব্যতা সংকট, পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটি হতে পারে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অফিস।