রবিবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আবারো ৫ জানুয়ারির উত্তাপ: বিএনপিকে নামতেই দেবে না আ লীগ
আবারো ৫ জানুয়ারির উত্তাপ: বিএনপিকে নামতেই দেবে না আ লীগ
ঢাকা : ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আবারো উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের রাজনীতি। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ফের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংঘাত ও সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সর্বত্র। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বাকযুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দল দুটি। দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে ওই দিন জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের বৃহত্তম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। অন্যদিকে গণতন্ত্র রক্ষা দিবসের কর্মসুচি হিসেবে আনন্দ র্যালির ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে কর্মসুচির নামে বিএনপির নাশকতার সব ধরনের চেষ্টা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।এ পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন পর আবারও রাজনীতি উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।আগামী ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছর পূর্ণ হবে। তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দলে বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি শুধু বর্জনই নয়, নির্বাচনকে প্রতিহত করতে ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়। দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেয়। তাদের কর্মসূচি চলাকালে যানবাহনে আগুন, ভাঙচুর, বোমাবাজি, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুনসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ও নাশকতার ঘটনা ঘটে। এতে দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। ওই পরিস্থিতিতেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচনের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেয়। সবধরনের বাধা উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই নির্বাচন ছিলো গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই বিবেচনায় গত বছর ওই দিনে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ওই দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রশাসন সব ধরণের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির উত্তেজনায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ব্যারিকেডে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা।এবারও সেই একই দিকে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গণতন্ত্র রক্ষার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এবারও রাজধানীসহ দেশব্যাপী আনন্দ মিছিল ও সভা সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে টানা নয় মাস শান্ত থাকার পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে জনসভার কর্মসুচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে চায় দলটি। দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভাষণ দেবেন বলেও জানানো হয়। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় নয়াপল্টন যুবদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় ৫ জানুয়ারি বিএনপির ডাকা সমাবশেকে সর্বাত্মকভাবে সফল করার আহ�ান জানিয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে রাজধানী ঢাকাসহ কোথাও নামতে না দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলছেন, অতীতে বিএনপি এই দিনে আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতা করেছিল। তাই এবার বিএনপিকে কোথাও নামতে দেবে না দলটি।দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, তাঁরা মনে করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একই সময়ে দুই দলের সমাবেশ আহ�ানের কারণে সেখানে কোনো দলকেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অনুমতি দেবে না। এ জন্য আওয়ামী লীগ রাজধানীর সব কটি প্রবেশমুখসহ ১৭টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না দিলেও বাকি জায়গাগুলোতে তাঁরা কর্মসূচি পালন করবেন। এ ছাড়া রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে ৫ জানুয়ারি অগ্নিদগ্ধদের নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হবে। তাঁরা দুজন মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামলে নাশকতা করতে পারে, এ জন্য তাদের মাঠেই নামতে দেওয়া হবে না।নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অতীত রেকর্ড ভালো নয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে তারা যে নাশকতা ও তাণ্ডব করেছে, তা আর করতে দেওয়া হবে না। তাদের মাঠেও নামতে দেওয়া হবে না। কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর কর্মসূচি পালনের জন্য আমরা ডিএমপির কাছে আবেদন করেছি। এরপর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের কর্মসূচি আমরা পালন করব। এটা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়।তবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ ৫ জানুয়ারি বিএনপির কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা দিবসকে যারা গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে মাঠে নামতে চায়, জনগণ তাদেরপ্রতিরোধ করবে। একই সুর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে কটাক্ষ করে, তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নাম নিয়ে মাঠে নামার কোনো অধিকারই নেই। জনগণের জানমাল রক্ষায় ছাত্রলীগ ৫ জানুয়ারি সকাল থেকেই মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগ রাজধানীর মিরপুর ১২ পূরবী সিনেমা হল, শ্যামপুর-জুরাইন রেলগেট, ডেমরা-যাত্রাবাড়ী মাঠ, বাড্ডা-রামপুরা পেট্রলপাম্প, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোড, মিরপুর ১ নম্বর (গোলচত্বর), লালবাগ, গুলশান,সূত্রাপুর,তেজগাঁও, সবুজবাগ-খিলগাঁও, উত্তরা, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর-টাউন হল, কাফরুল, গুলিস্তান-বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ও বনানী-মহাখালী এলাকায় সকাল থেকেই অবস্থান নেবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগকে ইতিমধ্যে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন,কেউ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাইলে অতীতেও আওয়ামী লীগ বাধা দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। কিন্তু তারা অতীতে কর্মসূচি পালনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করেছে। গত বছর ৫ জানুয়ারি এ কাজগুলো করেছে। এই দিন সরকারের দুই বছর ও নির্বাচনের দুই বছর উপলক্ষে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। ৫ জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একই সময়ের কর্মসূচি আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। তারা যদি মনে করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, তাহলে অনুমতি দেবে না। আর যদি মনে করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই, তাহলে অনুমতি দেবে। এখানে মন্ত্রণালয়ের কিছু বলার নেই।ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জননিরাপত্তা বিঘি�ত হয়, এমন কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না।রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের সিদ্ধান্তের পর একই স্থানে একইদিন সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তিতে ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে আরও ১৭টি স্থানে একযোগে সমাবেশ করবে তারা। শনিবার সন্ধ্যায় দলের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোহবান গোলাপের পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি এল।আওয়ামী লীগ এই দিনটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।২০১৫ সালে এই দিনে কর্মসূচিকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। এরপর কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকেন। তিন মাসের ওই কর্মসূচিতে নাশকতায় শতাধিক মানুষ মারা যায়।এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না হলে ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। রোববার বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েও পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করার ওপর জোর দিচ্ছেন।দুই জায়গার কোথাও অনুমতি না পেলে বিকল্প হিসেবে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, তা ৫ তারিখে জানানো হবে। তাঁরা অপেক্ষা করছেন এবং জনসভার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ হঠাৎ করে ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করে সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁদের উদ্দেশ্য বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করা। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে।