শনিবার ● ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পৌর নির্বাচনে জোটগত প্রচার-প্রচারণা চালাবে ২০ দল
পৌর নির্বাচনে জোটগত প্রচার-প্রচারণা চালাবে ২০ দল
ঢাকা : আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিনেতৃত্বাধীন ২০দল জোটগতভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাবে। একই সঙ্গে যেসব পৌরসভায় শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছে, তাদের বিষয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।২০ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে। জোটের সমন্বয়ক হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিস্তারিত জানান মির্জা ফখরুল। তিনি জানান, বৈঠকে পৌর নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটগতভাবে প্রচার-প্রচারণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে জোট নেতারা প্রচারণা চালাবেন কি-না, এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে ফখরুল বলেন, স্থানীয়ভাবে কিছু কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। সেগুলোর সমাধান স্থানীয়ভাবেই করা হবে। ইতোমধ্যে রংপুর-দিনাজপুরে ঐক্যবদ্ধভাবে ২০ দলীয় জোট প্রচারণা শুরু করেছে বলে জানান ফখরুল।শরিক দলগুলোর মহাসচিবদের সঙ্গে শনিবার বৈঠকের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের এ সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।তিনি বলেন, এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা ২০ দলের ঐকমত্যেও প্রার্থীদের সর্বাত্মক সমর্থন জানাব। আগামী যে কয়েকদিন প্রচারণার জন্য অবশিষ্ট রয়েছে, সেই কয়েকদিন আমরা সমন্বিতভাবে আমাদের প্রার্থীদের পক্ষে আমরা প্রচাণায় অংশ নেব।শুক্রবার বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরে জোটগতভাবে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সবখানে জোটের সমন্বিত প্রচারণা শুরু হবে, তাতে জোট নেতারা অংশ নেবেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় একযোগে নির্বাচন হবে। আইন সংশোধনের পর এই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে।বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি জোট শরিক জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও এলডিপির দুই নেতা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ইসির নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। যেসব স্থানে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে রয়েছে, সেখানে জোটের প্রার্থীর সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করা হবে- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, দুই-একটি জায়গায় এ ধরনের সমস্যা আছে। স্থানীয় পর্যায়ে তারা (স্থানীয় নেতারা) সমাধান করবেন।ফখরুলের সভাপতিত্বে জোটের মহাসচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে এসে আসন্ন পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা আবার ব্যাখ্যা করেন ফখরুল।২০ দল এই পৌর নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি পর্যায় হিসেবে নিয়েছে। অতীতের কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তারপরও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে আমরা ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে অংশ নিচ্ছি। তবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন,বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ থাকতে পারেন, কতটুকু দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করতে পারেন এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন, তা প্রমাণ হবে।আচরণবিধি লঙ্ঘনে ঠেকাতে ইসির ভূমিকার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আজকেও পত্রিকায় এসেছে যে নাটোরে কোনো একজন মন্ত্রী মহোদয় সেখানে সরকারি দলের মেয়র প্রার্থীর বাসায় ঘণ্টাখানেক সভা করেছেন। কয়েকদিন আগেও মন্ত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।এতেই প্রমাণিত হয়, নির্বাচন কমিশন মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বিরত করতে পারছেন না। তার অর্থই হচ্ছে কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের অযোগ্যতা আবার প্রমাণ করেছেন। পৌর ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাতে শিগগিরই একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জানান।বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ ও আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল সরকার যেন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করে, নির্বাচন কমিশন যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করার দাবি জানান।তিনি বলেন, গণতন্ত্র আজ সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনেরই অংশ।নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে ফখরুল বলেন, অতীতের কর্মকাণ্ডে তাদের ওপর আস্থা রাখা কঠিন। এখনও নির্বাচন কমিশন অযোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।তিনি বলেন, যদি ভোট দেওয়ার পরিবেশ থাকে, সরকার হস্তক্ষেপ না করে এবং সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, তাহলে পৌর নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হবে। নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বানও জানান তিনি।ফখরুলের সভাপতিত্বে বৈঠকে ২০ দলীয় জোট মহাসচিদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ।এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, বিজেপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল মতিন সউদ, জমিয়তের উলামা ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ডিএলের খোকন চন্দ্র দাস, এনডিপির মুহাম্মদ ফরিদউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।সভায় জোট শরিক ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবদুল মোবিনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।