বুধবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » আজ ভোলা মুক্ত দিবস
আজ ভোলা মুক্ত দিবস
বিশেষ প্রতিনিধি: আজ ১০ ডিসেম্বর। ভোলা পাকহানাদার মুক্ত দিবস। আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল চাপে কোনঠাসা হয়ে পালায়ন করেন পাক হানাদার বাহিনী। তাদের চলে যাওয়ার পর সম্পূর্ণ রুপে মুক্ত হয় দ্বীপ জেলা । এ বিজয়ের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে উল্লাসে মেতে উঠেন জেলার স্ব-স্তরের মানুষ।
জেলার একাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ভোলায় মে মাসের প্রথম দিকে পাকবাহিনী এসে সর্বত্র গেরিলা কায়দায় মুক্তি যুদ্ধাদের উপর আক্রমণ করেন। তারা ক্যাম্প স্থাপন করেণ শহরের ওয়াপদা রেস্ট হাউজে। জেলার সবগুলো থানার সাথে যোগাযোগের সড়ক রেস্ট হাউজ সংলগ্ন হওয়ায় এ স্থানটাকে নিরাপদ মনে করে পাকবাহিনী। সেখানে নিরীহ মানুষদেরকে ধরে এনে তাদের উপর তান্ডবলীলা চালাতে থাকে। তারা এখানে দুটি বাংকার তৈরী করেন। তখন অবস্থানরত পাকবাহিনীর প্রধান ছিলেন মেজর জাহান জেব খান। তার নির্দেশে রেস্ট হাউজের দক্ষিণ পূর্ব পার্শস্থ দুটি কামরা প্রস্তুত করা হয় নির্যাতনের সেল হিসেবে। এখানে কত মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন ও হত্যা কারা হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।
আবার শহরের কাছাকাছি খেয়া ঘাট হওয়ায় পাকবাহিনী নির্বিচারে ভোলার শান্তি প্রিয় মানুষকে ধরে এনে হত্যাকরে লাশ নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিত। এখানে শুধু লাশই ফেলা হত না একই সাথে কয়েকজনকে ধরে এনে লাইনে দাড় করিয়ে গুলিকরে হত্যাকরত পাকবাহিনী।
৭১’র এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে খুব গোপনীয় ভাবে ভোলা শহরের লেকু মিয়ার বাসায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধের বৈঠক বসে। একেক জন একেক দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র সহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। তাদের সুদক্ষ নের্তৃত্বে একটি কমান্ড বাহিনী গঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ছিলেন লালমোহনের মোতাহার মাস্টার। তিনি ৭১’র ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর তিনি নিজ উদ্যোগে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মুক্তিকামী মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণীত করে শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী গঠন করে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ভোলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নেন।
ভোলা মহকুমায় বেশ কয়েকটি যায়গায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মূখ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এর মধ্যে লালমোহনের যুদ্ধ, ওসমানগঞ্জের যুদ্ধ, দেউলার যুদ্ধ, বাংলাবাজার যুদ্ধ, দৌলতখান যুদ্ধ ও ঘুইংগার হাটের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে পাকবাহিনীর অসংখ্যক সেনা সদস্য নিহত হয়।
মুক্তি যুদ্ধাদের সুদৃঢ় নের্তৃত্বের কারণে পাকবাহিনী কোনঠাসা হয়ে পড়ে ভোলা থেকে পলায়ন করেন। পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা আশপাশ থেকে শহরে প্রবেশ করে ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ এবং পরবর্তীতে জেলা সরকারি বালক বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৬ ডিসেম্বর সমগ্র বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও দ্বীপ জেলা ভোলা স্বাধীন হয় ১০ ডিসেম্বর।