শনিবার ● ২১ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দুই মাস পর দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
দুই মাস পর দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া
ঢাকা : দুই মাসের বেশি সময়ের সফর শেষে ঢাকায় পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপর পুলিশ প্রটোকলে গুলশানের বাসভবনে যান খালেদা জিয়া । খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই বিমানে বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালও ফিরেছেন।এজন্য বিমান বন্দর এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেযা হয। যাত্রী ছাঢ়া সবাইকেই মূল সঢ়কেই আটকে দেযা হয।সাংবাদিকদেরও ফ্যবেশ করতে দেযা হযনি। খালেদা জিযাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে বহু নতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাদের মূল সড়কেই আটকে দেয়। মওদুদ আহমেদ এবং আব্দুল্লাহ আল নোমানের মতো সিনিয়র নেতাদেরকেও বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। এরপর নেতাকর্মীরা রাস্তার দুপাশে অবস্থান নিয়ে নেত্রীরে আগমনের অপেক্ষা করেন।বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণেই এ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।এর আগে, দেশে ফেরার পর খালেদার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল তার দল। শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিয়ে দল উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছিল।দীর্ঘ দুই মাস পাঁচ দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষ করে শনিবার বিকেল ঢাকায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, বিএনপির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা প্রমুখ। সেখানে আরও ছিলেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুস সালাম আজাদ, শাহজাদা মিয়া, নুরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, রাবেয়া সিরাজ, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল মজিদ, মাহবুব আল আমীন ডিউ, শায়রুল কবীর খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।তবে, নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া অবস্থানের কারণে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারেননি তারা। তারা অবস্থান করছিলেন প্রধান ফটকে। এছাড়া, বিমানবন্দরের প্রধান ফটক থেকে সামনের দিকে রাস্তার দু পাশে অপেক্ষা করছিলেন বিএনপির শত শত নেতাকর্মী। খালেদার গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হতেই নেতাকর্মীদের ভিড়ে মিশে যায়। এখন নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলেই গুলশানের বাসভবন অভিমুখে যান বিএনপি প্রধান। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। দুচোখ ও হাঁটুর চিকিৎসার জন্য তিনি এ সফরে যান। লন্ডনে অবস্থানকালে খালেদা জিয়া তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসার পাশের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন। দীর্ঘ এ সফরে তিনি স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান এবং একটি নাগরিক সভায় যোগ দেন।স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান খালেদা। এরপর তিনি কবে ফিরবেন তা নিয়ে একরকম বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চিকিৎসা শেষ না করেই দেশে ফিরছেন বেগম জিয়া। বেগম জিয়া লন্ডনে থাকা অবস্থায় ঢাকায় ও রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় দুই বিদেশিকে। দিনাজপুরে আহত করা হয় একজনকে। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে গ্রেনেড হামলাও চালানো হয়েছে। হয়েছে পুলিশের উপর হামলার ঘটনাও। এসব ঘটনায় জঙ্গিযোগের খবরও এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সরকার অবশ্য এ ঘটনাগুলোকে যুদ্ধাপরাধীদের রায় বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে এবং এরজন্য বিএনপিকেও দায়ী করা হচ্ছে। দেশে আইএসের মতো কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি সরকারের। দুই মাসের বেশি সময় যুক্তরাজ্যে থাকার পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।গত ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানসহ তার পরিবার এবং প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন তিনি।বিএনপির অন্যতম নীতি-নির্ধারক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে ফিরলেন খালেদা।যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদেরের সঙ্গে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতিও চলছে।শনিবার খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা দেখা যায়।দুপুর থেকে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশ পথে ছিল বিপুল সংখ্যক আনসার ও এপিবিএন সদস্য। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে মহাখালীর সড়কে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। যেসব গাড়ি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে, সেগুলো থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এপিবিএন এর এসপি রাশেদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।এদিকে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে দুপুর থেকে বিমানবন্দরের পাশের ফুটপাতে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি সমর্থকরা।এ সময়ে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম, খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।মওদুদ আহমদ অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আজ হাজার হাজার নেতা-কর্মী বিমানবন্দরের বাইরে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ থেকে প্রমাণ হয় দেশে গণতন্ত্র নেই।বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম শনিবার সকালে বলেন, ম্যাডাম লন্ডন সময় রাত সাড়ে ১০টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমানে রওনা হয়েছেন।তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা হিথরো বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান, বলেন তিনি।শামীম বলেন,দুবাইতে দেড় ঘণ্টা যাত্রাবিরতি শেষে বিকালে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামবেন তার দলীয় প্রধান।খালেদা দেশে ফিরবেন না বলে আওয়ামী লীগ নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার তার ফেরার খবর দেয় বিএনপি। দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল ও রাজনীতির সঙ্কট বিবেচনা করেই আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা। সেখানে তিনি চোখ ও বাতের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বলে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন।লন্ডনে পারিবারিক পরিমণ্ডলে সময় কাটানোর পাশাপাশি বিএনপির আয়োজনে দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন খালেদা।তার লন্ডনে অবস্থানের মধ্যেই বাংলাদেশে দুই বিদেশি নাগরিক খুন হয়েছেন এবং তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুই পুলিশকে; যেসব ঘটনার জন্য বিএনপি নেত্রীকেই দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরিই বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের উদ্দেশ্যে বিদেশে বসে খালেদা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন।অন্যদিকে বিএনপি বলে আসছে, সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলার হুকুমের আসামি খালেদা দেশে ফিরতে চাইলে বাধা দেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারকে।