মঙ্গলবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বোরহানউদ্দিনে লেবার থেকে কোটিপতি জ্বীনের বাদশা শাহিন : পর্ব-১
বোরহানউদ্দিনে লেবার থেকে কোটিপতি জ্বীনের বাদশা শাহিন : পর্ব-১
আব্দুল মালেক, বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি: রাত ১ টা ২৫ মিনিটে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী স্বপ্না (ছদ্ম নাম) এর মোবাইলে কয়েকবার রিং বাজার পর তিনি রিসিভিড করলে? হঠাৎ অন্যরকম কন্ঠে ভেসে আসলো আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহি ওবারকাতুহু, মা তুই অনেক ভাগ্যবান? বেশ কিছু দিনে ধরে তুই ও তুর স্বামী একটু অশান্তিতে ভুগতাচছ। তুর স্বামী বিদেশে অনেক টাকা রোজগার করে কিন্তু তা ধরে রাখতে পারে না। তুর সামনে অনেক বড় একটা বিপদ রয়েছে। এই বিপদ তুর যে একটা পুট ফুটে বাচ্ছা রয়েছে তার উপর দিয়ে গড়াবে। তা ছাড়া তুর সুন্দর সংসারে বড় একটা জামেলা হবে। এই ভাবে র্দীঘ দিন ধরে ভয়, প্রলোভন ওলালসা দিয়ে কৌশলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশে প্রতারণা করে যাচ্ছে ভোলার বোরহানউদ্দিনে জ্বীনের বাদশারা। প্রতিদিন এসকল ভ- জ্বীনের বাদশাদের চক্রের প্রতারণায় নিঃস্ব ও সর্বশান্ত হচ্ছে বহু পরিবার। এই উপজেলায় লেবার থেকে শুরু করে বহু প্রতারক জ্বীনের বাদশা সেজে কোটিপতি হয়েছেন। এসকল প্রতারকদের নিয়ে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে ভোলার সংবাদ ডটকম এ। আবার মাঝে মধ্যে এসকল জ্বীন প্রতাকদের আটক করে ঘুষ বাণিজ্যের বিনিময় ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নে ৪নং ওয়ার্ডের রিক্সা চালক সাফিজলের ছেলে মো. শাহিন (৩০)। প্রায় দুই বছর আগেও সে রাজ মেস্ত্রীদের সাথে লেবারের কাজ করতেন। শাহিন তার এলাকায় জ্বীন পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে কোটিপতি হতে দেখে লোভে সেও কোটিপতি বনে যাওয়ার স্বপ্নে জ্বীন পরিচয় দিয়ে প্রতারণার প্রশিক্ষণ নেয়। এ ব্যবসা করতে শুধু কৌশল আর কিছু মোবাইল অপারেটরের সিমের প্রয়োজন হয়। এ গুলো সংগ্রহ করে তিনি ও বিনা চালানে অধিক লোভে এব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। দিনের পর দিন মানুষকে লোভ, লালসা ও ভয় সহ নানা ভাবে ধোঁকা দিয়ে প্রায় কোটিপতি মালিক বনে গেছেন। তিনি গত ৭/৮ মাস আগে অধিক মূলে ২৪ শতাংশ জমি ক্রয় করে ওই জমিতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ীও নির্মাণ করেন। কয়েকদিন আগেও লেবারের কাজ করা শাহিন হঠাৎ আলিশান বাড়ী করার পর থেকে তার জ্বীনের ব্যবসা ফাঁস হয়ে যায়। এর পর থেকে নিজেকে অনেকটা আত্মগোপনে রেখে এ প্রতারণা ব্যবসা আরো জমজমাট ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সেই। তবে বোরহানউদ্দিন থানার এস.আই রফিকুল ইসলাম পর পর দুই বার বাড়ী ঘেরাও করে শাহিনকে আটকের পর প্রায় দের লাখ টাকার ঘুষের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেন বলেও অভিযোগ উঠে।
মাঝে মধ্যে এসকল প্রতারকদের আটক করে ঘুষ বাণিজ্যের বিনিময় ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই এলাকায় শুধু শাহিন নয় এরকম অনেক জ্বীন সাধকদের আটকের নামে ব্যাপরোয়া চাঁদা বাজীতে মেতে উঠেছেন বোরহানউদ্দিন থানার এস.আই রফিকুল ইসলাম । গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রফিজল খানের ছেলে অপর জ্বীনের বাদাশা ফরিদ খান (২৫) কে আটক করে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
গত এক সপ্তাহ পূর্বে উপজেলার আঃ শহিদের ছেলে জ্বীন প্রতারক মামুন (১৮) কে আটক করে ৫০ হাজার টাকা ও গত ২০ দিন পূর্বে শাজাহান দফাদার ছেলে সোহরাব (৩০) কে আটক করে দুই লক্ষ টাকা ঘোষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে এস আই রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
জ্বীনের সাধকরা সারা রাত সাধন করে শেষ রাতের দিকে যখন ঘরে একটু ঘুমাতে আসে তখনই এ দারোগা ৩ থেকে ৪ জন পুলিশ নিয়ে ওই জ্বীনের সাধকদের বাড়ী ঘেরাও দিয়ে তাদেরকে আটক করেন। পরে দূরবর্তী কোনো স্থানে নিয়ে ওই দারোগা নিজে দরকষা কষি করে ওই সকল জ্বীন সাধক জন প্রতি ৫০ হাজার থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তারা আরোও বলেন, এ এলাকায় জ্বীনের ব্যবসা করে যে টাকা তারা কামায় তা এখন রফিক দারোগার পকেটে যায়। গত কোরবান ঈদের আগে ও পর থেকে এ দারোগা জ্বীন প্রতারণাকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকার অধিক হাতিয়ে নিয়েছে বলেও তারা জানান।
এ জ্বীন সাধকদের আটক করলে তারা দ্রুত তাদের সহ কর্মীদের ছাড়িয়ে নিতে যত টাকা লাগে তাৎক্ষণিক তামিটিয়ে দেন। অন্যদিকে এ ভূয়া প্রতারণা কারী জ্বীনের প্রতারণা থেকে স্থায়ী মুক্তি পেতে চায় ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে কবে নাগাদ তারা এদের থেকে মুক্তি পাবে এটা জানা নেই কারোও। এসকল জ্বীন প্রতারণাকারীরা নিজেরা অর্থবিত্তের মালিক হতে গিয়ে কত পরিবারকে যে পথে বসিয়েছে তার হিসাবও জানা নেই কারো কাছে। মানুষের সরলতার সুযোগে পরিবারগুলোকে একে বারেই নিঃস্ব করে দেয় এসকল জ্বীনের বাশারা। মানুষ মানুষকে অনেক ভাবে ঠকায় কিন্তু এদের টা সকল খারাপ কাজ কে হার মানিয়েছে।
প্রতারণা সম্পর্কে জ্বীনের বাদশা শাহিনের আলিশান বাড়িতে গিয়ে ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় ও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নী।
বোরহানউদ্দিন থানার এস,আই রফিকুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ গুলো সত্য নয়। টাকা নেয়া থাক দূরের কথা ওই এলাকাই আমি যাইনি।
এব্যাপারে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা রতন কৃষ্ণ রায় বলেন, আমার জ্বীন প্রতারকদের গ্রেফতারের জন্য সর্বত্ত¦ক চেষ্টা করে যাচ্ছি। সু- নিষ্ট অভিযোগ না পওয়ার কারণে প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এস আই রফিকুল ইসলামের সম্পর্কে বলেন, এই রকম একটি অভিযো আমিও শুনেছি।
শাহিনের মত এই উপজেলায় অসংখ্য প্রতারক জ্বীনের বাদশা রয়েছে যারা প্রতিনিয়িত সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। এই এরকম কত ভূয়া জ্বীন প্রতারক এই উপজেলায় রয়েছে তার হিসাব জানা নেই কারোও কাছে। মাঝে মধ্যে থানা পুলিশ আটক করে জেল হাজতে পাঠালেও দুই এক দিন পর আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসে এ ভ- প্রতারকরা। এত বড় অপরাধকারীদের শাস্তি দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এ ডিজিটাল যুগে জ্বীন প্রতারণা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কখনই যেনো মুক্তি হতে পারবে কি এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের ? চলবে…