মঙ্গলবার ● ৩ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনে ঘটছে প্রাণহাসীসহ নানা দুর্ঘটনা
ভোলায় নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনে ঘটছে প্রাণহাসীসহ নানা দুর্ঘটনা
এম. শরীফ হোসাইন : ভোলায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে বোরাক-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রা সহ তিন চাক্কার যানবাহন। আর এসকল যানবাহনের চলছে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং, যাত্রী উঠা-নামা। আবার যারা এসকল যানবাহনে ড্রাইভিং করছেন নেই তাদের কোন দক্ষতা-অভিজ্ঞতা। মাঝে মাঝে দেখা যায় অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা ড্রাইভিং করতে। এতে যেমনি ঘটছে নানা দুর্ঘটনা, ঠিক তেমনিভাবে ঘটছে প্রাণহানী। প্রশাসনের চোখের সামনেই এসকল কর্মকা- ঘটলেও তারা দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এ জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করছেন। তবে জাতীয় এবং আঞ্চলিক মহা-সড়কে এ ধরনের ছোট ছোট যান চলাচলের দরুন নানা দুর্ঘটনা ঘটার কারণে বোরাক-অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রা আর ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সা বন্ধ করার দাবী তোলা হয় মহা-সড়কগুলো থেকে। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি মামলা দায়েরও করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক ২০০৯-২০১০ সালের দিকে ভোলায় বোরাক-অটোরিক্সা আর মাহিন্দ্রার প্রচলন শুরু হয়। বোরাক-অটোরিক্সা-মহিন্দ্রা চলাচল করায় জীবন-যাত্রার মান যতটা সহজতর হয়েছে, ঠিক তেমনি জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে চলাচলে। দেশে চীনা প্রযুক্তির এই পরিবহণ যুক্ত হওয়ায় জীবন-যাত্রায় এসেছে স্বাচ্ছন্দতা ও গতীশিলতা। গতীশিলতার এই আবর্তনে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা পুরনো (পায়ে চালিত) রিক্সার পরিবর্তে বোরাক-অটোরিক্সা এবং দূর পাল্লার পথে মহিন্দ্রার উপর নির্ভর হচ্ছে। সময় ক্ষেপণ করতে চাচ্ছেন না কেহ-ই। সকলেই গতীশিলতাকেই পছন্দ করছেন। তাতেই ঘটছে যত বিপত্তি।
দ্রুত গতির এই পরিবহণ যারা ড্রাইভিং করছেন তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা। তার সাথে রয়েছে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং, যাত্রী উঠা-নামা। রাস্তার পাশেই হচ্ছে গাড়ি পার্কিং। নেই কোন নির্দিষ্ট স্থান। এতে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে জানজট, ঠিক তেমনি ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর এই দুর্ঘটনার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমনকি প্রাণহানীসহ পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেককে। যা তাকে এবং তার পরিবারকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। সম্প্রতি এমনই দুর্ঘটনা ঘটে ভোলা সরকারী কলেজের এক শিক্ষার্থীর ভাগ্যে। অটোরিক্সার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীকে। অপরদিকে ইলিশায় বোরাকের আঘাতে প্রাণ হারাতে হয় ৬ বছরের এক শিশুকে। শুধু তাই নয় এভাবেই প্রতিদিন চলছে বোরাক আর অটোরিক্সা।
বোরাক ও অটোরিক্সা আর মাহিন্দ্রা চলাচলে জীবন-যাত্রায় কি ধরনের প্রভাব পড়েছে সে সম্পর্কে কথা হয় ভোলা শহরের ওয়েস্টার্ণ পাড়া, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড, ইলিশা বাসস্ট্যান্ড, খেয়াঘাট, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া ও আলীনগর মাদ্রাসা বাজারের বেশ কয়েকজন সাধারণ যাত্রীর সাথে। তারা বলছেন বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের কথা।
কালাম (৫৫), মিজান (৩৫) ও রাসেল (২২) নামের যাত্রীর সাথে কলা হলে তারা বলেন, যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা-নাম এবং গাড়ী পার্কিং, অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া ও ড্রাইভিং করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে বোরাক-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রাগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে।
দৌলতখান থেকে ভোলা সদরে বই কিনতে আসা শুকদেব মদন মোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. সবুজ ও সোহেল বলেন, বোরাক-অটোরিক্সা আর মাহিন্দ্রাগুলো যেভাবে বেপরোয়া গতিতে চলছে তার কারণেই মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। দুর্ঘটনার কারণে নিজেরা যেমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদে পড়ছে; ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ যাত্রীদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
চরফ্যাশন থেকে আসা বরিশাল বিএম কলেজে পড়–য়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমন এবং দক্ষিণ আইচা থেকে আসা রিয়াজ, তাজল ও নুর উদ্দিন বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্করা বোরাক-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রাগুলো চালাচ্ছে। তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। এছাড়া অনেক সময় রাতের বেলা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য গাড়ীর হেডলাইট বন্ধ রাখে। আর তখনই তারা দুর্ঘটনার মুখে পতিত হচ্ছে। এতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই তারা বলছেন, বোরাক-অটোরিক্সা ও মাহিন্দ্রাগুলো যারা চালাচ্ছে তারা যদি সঠিকভাবে ট্রাফিক আইন মেনে চলে, গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ চালক হিসেবে তৈরী করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ী চালানো থেকে বিরত রাখাতে পারলেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে বলে মনে করছেন তারা।
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, স্টেশনের অভাব, দুর্ঘটনা রোধ ও ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ভোলা টেম্পু-বোরাক-অটোরিক্সা মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছর অটো-মাহিন্দ্রা ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তবে আমাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডের প্রয়োজন। প্রশাসন যদি এ ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তা হলে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং করা রোধ করা যেত।
শহরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, দুর্ঘটনা রোধ এবং প্রশাসনের ভূমিকা সম্পর্কে জেলা পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুজ্জামান বলেন, বাস মালিক সমিতির সদস্য পৌর কাউন্সিলর মো. শাহে আলম হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করেছেন। যা চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ আইনে নিষিদ্ধ থাকার ফলে বোরাক, অটো, মহিন্দ্রা জাতীয় এবং আঞ্চলিক মহা-সড়কে চলাচল করা যাবে না এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ’র রুল অনুযায়ী জাতীয় ও আঞ্চলিক মহা-সড়কে এ সকল পরিবহণ চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তা হলে হয়তো এ ধরনের ছোট-বড় দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।