শনিবার ● ৩১ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আ’লীগের তৃনমূলে দলদলী: মনপুরায় ১৪৪ ধারা জরি: জনমনে আতঙ্ক
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে আ’লীগের তৃনমূলে দলদলী: মনপুরায় ১৪৪ ধারা জরি: জনমনে আতঙ্ক
শিমুল চৌধুরী: ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ভোলায় আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে দলাদলী শুরু হয়েছে। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে জেলার মনপুরা ও লালমোহন উপজেলায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এবং সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা লাঠি-সোটা, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে। এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আওয়ামী লীগের অর্ধশত নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ এ দলাদলিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা যেন এলাকায় শক্তির মহড়া দিচ্ছেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতা-কর্মীরাও দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গত ২৭ অক্টোবর সকালে ভোলার মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন হাওলাদারের ছোট ভাই যুবলীগ নেতা লিটনের সঙ্গে তার প্রতিপক্ষ একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও মনপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক যুবলীগ নেতা আমানত উল্লাহ আলমগীরের ছোট ভাই যুব লীগ নেতা শাহাবুদ্দিনের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে এ নিয়ে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষই লাঠি-সোটা ও অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে আলাউদ্দিন হাওলাদার ও আমানত উল্লাহ আলমগীরসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এর মধ্যে আমানত উল্লাহ আলমগীরের পক্ষের মোস্তফা মেম্বার, জুয়েল ও কামরুল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতদের মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে। এর জের ধরে গত বুধবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে ফের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মনপুরার জলদস্যুরাও ওই সংঘর্ষে অংশ নেয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মনপুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন হাওলাদার এবং একই ইউপি সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মো. আলমগীরের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দের কারনে কোন অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে এ আদেশ জারি কর হয়।
মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মোঃ আলী জানান, পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। এদিকে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোলা জেলা হতে ৫০ জন অতিরিক্ত রির্জাভ পুলিশ সকালে মনপুরা এসে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের এ দুই গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে মনপুরা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার সকাল ৬ টা থেকে উপজেলার রামনেওয়াজ মৎস্যঘাট ও এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলে নিশ্চিত করেন মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ আলী। এমন পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় জনমনে আতংক বিরাজ করছে।
অপরদিকে ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েতউল্যাহ মিন্টু ও তার প্রতিপক্ষ স্থানীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যক্তিগত সহকারি হুমায়ুন মৃধার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর সন্ধ্যায় উপজেলার ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের মঙ্গলসিকদার বাজারে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ ও সোহাগের মধ্যে বাকতিন্ডার এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে ওই দিন রাতে ধলীগৌনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েতউল্যাহ মিন্টুর ভাই যুবলীগ সভাপতি আলমগীরের সঙ্গে তার প্রতিপক্ষ ওই ইউনিয়নের সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী ও স্থানীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যক্তিগত সহকারি হুমায়ুন মৃধা পক্ষের নেতা ধলীগৌর নগর ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সভাপতি (উত্তর) মান্নান মৃধার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষই লাঠি সোটা ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অফিসের আসবাবপত্র বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে ও স্থানীয় এমপির ছবি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত সামছুদ্দিন মাঝির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দুইটি মোটরসাইকেল। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত ইসমাইল, জামাল, আব্বাস, জুয়েল, মহসিন, অপু, মোসলেহউদ্দিন, সামছুদ্দিন ও জসিমইদ্দনকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।এ ব্যাপারে ধলীগৌর নগর ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সভাপতি (উত্তর) মান্নান মৃধা বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিন্টু চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়।
অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতউল্যাহ মিন্টু বলেন, হুমায়ুন মৃধার নেতৃত্বে তার লোকজন প্রথমে আমাদের ওপর আক্রমন করে। তারা আওয়ামীলীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে স্থানীয় জনতা তাদেরকে প্রতিহত করে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে লালমোহন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় উপজেলার ধলীগৌর নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেদায়েতউল্যাহ মিন্টু ও তার প্রতিপক্ষ স্থানীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের ব্যক্তিগত সহকারি হুমায়ুন মৃধার নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা একে অপরদিকে দায়ী করে তারা এলাকায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এলাকায় ওই দুই পক্ষ এখন মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
এ ব্যাপারে লালমোহন থানার ওসি আক্তারুজ্জামান বলেন, মামলা হওয়ার মত তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এটা বৃহস্পতিবার রাতেই মিমাংসা হয়ে গেছে।
আগামীতে পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভোলার তৃনমূলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে আরো দলাদলী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন মহল। এবার দলীয় প্রতিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘোষণায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।