শুক্রবার ● ৩০ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » পুণরায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভোলা জেলা বিএনপি
পুণরায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভোলা জেলা বিএনপি
ফরহাদ হোসেন: নতুন কমিটির মাধ্যমে পুণরায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ভোলা জেলা বিএনপি। জেলার চারটি আসনে বিএনপির হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় ভোলা জেলা যুবদল, মনপুরা উপজেলা বিএনপি, তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপি, লালমোহন উপজেলা ও পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ সকল কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর যে সকল উপজেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কমিটি অগোছালো রয়েছে সে সগুলোও প্রস্তুতি করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নিভর্রযোগ্য সূত্রে জানায়, আশি দশকের পর থেকে ভোলার চারটি আসনেই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ১/১১ পর থেকে অধিকাংশ উপজেলার বিএনপির নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল হিসেবে প্রকাশ্য রূপ নিয়ে ব্যাপক হারে ফাটল দেখা দিয়েছে।
বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা কয়েকভাগে বিভক্ত হয়েছেন। যার ফলে ইমেজ হারাতে হয়েছে এখানকার বিএনপির নেতাকর্মী ও অঙ্গ সংগঠন। নিজেদের ঘরে বিভেদ থাকার কারণে ফায়দাও লুটে নিচ্ছে বিরোধী শিবির। এ নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের শেষ নেই।
আবার এখানকার বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় মামলাও হামলার শিকার হয়েছেন। এখনো মামলায় ঝুলে রয়েছেন ও এলাকায় আসতে পাছেন না সেই সকল নেতাকর্মীদের এখানকার বিএনপি কোনোভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠে। এই কারণে ভোলা সদর আসনে কেন্দ্র ঘোষিত কোনো নির্দেশ ও কর্মসূচি কিছুটা পালন করা হলেও বাকি তিনটি আসনেই তেমন পালন করা হতো না।
এ সকল বিষয়ে চাপা ক্ষোভ নিয়ে সাত উপজেলার দফায় দফায় হাজার নেতাকর্মী বিরোধী দলে যোগও দিয়েছেন। এখনো কিছু যোগ দেওয়ার জন্য ওঁৎপেতে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন,যারা প্রকৃত বিএনপির ত্যাগী নেতা কর্মী ও বিভিন্ন সময় মামলাও হামলার শিকার হয়েছে এখনো যারা মামলায় ঝুলে রয়েছেন সেই সকল নেতা কর্মীদের উপজেলা কমিটি থেকে কোনোভাবে মূল্যায়ন করছে না। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিতে থাকা নেতারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য যে কোনো কমিটিতে তাদের আত্মীয়দের সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করছেন। তা ছাড়া এইখানে টাকা হলেই যোগ্যতা ছাড়াই উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপিতে যে কোনো স্থানে পদ পাওয়া যায়।
তারা আরো জানান, শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত অনেক সমর্থক ও কর্মী দল থেকে অনেকটাই দুরে সরে যাচ্ছেন। বিএনপির যে সকল ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলের জন্য ছিল নিবেদিত প্রাণ, তারাই এখন বর্তমান উপজেলা বিএনপির নেতা ও নির্ধারকদের আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে আলাদা রয়েছে। এরই ফলে দুর্বল হয়ে পরেছে এখানকার বিএনপি। এ সকল বিষয়ে চিন্তা করে জেলা বিএনপির নেতারা নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিবাদ মীমাংসা নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। এর লক্ষে জেলার চারটি আসনের বিএনপির হাতকে পুণরায় শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা বিএনপি।
জেলা বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২৬ অক্টোবর সোমবার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক একে এম মহিবুল্ল্যাহ নাগরের সভাপতিত্বে বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। সম্মেলনে একে এম মহিবুল্ল্যাহ নাগরকে সভাপতি, জাকির হোসেন হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া একই দিন জেলা বিএনপি কার্যালয়ে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে লালমোহন উপজেলা বিএনপির পুনরায় কমিটি গঠন করে। এতে সভাপতি হিসেবে এনায়েত কবীর, সাধারণ সম্পাদক নজরুল কাদের মার্শাল হিমু ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শফিকুল ইসলাম বাবুলকে স্বপদে বহাল রেখে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ সময় পৌর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে মো. ছাদেক মিয়াকে সভাপতি, মো. জহিরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ও মো. মঞ্জু পাটওয়ারীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে ২৫ অক্টোবর রবিবার রাতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে মনপুরা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুউদ্দিন বাচ্চু চৌধুরীর সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এতে সভাপতি পদে অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সাবেক আহ্বায়ক শামস্ উদ্দিন বাচ্চু চৌধূরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদে মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সহকারী অধ্যাপক মো. মাহবুবুল আলম শাহীন নির্বাচিত হন।
এর আগে ২০ অক্টোবর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ইয়ারুল আলম লিটনের সভাপতিত্বে সভায় সকলের সম্মতিক্রমে তরিকুল ইসলাম কায়েদকে আহ্বায়ক, জামাল উদ্দিন লিটন ও মো.কবির হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
ভোলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর ভোলার সংবাদ ডট কমকে বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পেরুচ্ছি। দল পুণর্গঠনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আরো সক্রিয় হচ্ছে। যে সকল কমিটি এখনো বাকি রয়েছে তার কাজও অচিরেই শেষ করা হবে। আশা করি, এবার আমরা রাজনৈতিকভাবে আরো বেশি চাঙ্গা হয়ে দাঁড়াতে পারব।’