শুক্রবার ● ২ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » চিকিৎসক ও নাসের্র সংঙ্কটে ভোলার ১শ শয্যার হাসপাতাল
চিকিৎসক ও নাসের্র সংঙ্কটে ভোলার ১শ শয্যার হাসপাতাল
মোকাম্মেল হক মিলন• ভোলা সদরের ১শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ১৭ বছর ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে তার উপর আবার ডাক্তার-নার্স সংকটে মারাতœকভাবে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের অপারেশন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু কওে ওষুধ, অক্সিজেন ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের।
উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্লিনিক কিংবা বরিশাল ও ঢাকায় গিয়ে রোগের পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও চিকিৎসা করাতে হচ্ছে রোগীদের। আর এতে বেশী দুর্ভোগে পড়ছেন দরিদ্র রোগীদের।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া সুত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ভোলা সদর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটিকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও ৫০ শয্যার জনবল জনবল দিয়েই চলে আসছে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।
বর্তমানে হাসপাতালে ২২জন চিকিৎসকের পদের মধ্যে ১৭জন ও নার্সের ৫২জন পদের মধ্যে ৩৬ পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য রয়েছে হাসপাতালের গুরুপ্তপূর্ন আরএমও পদটিও। শূন্যপদগুলোর মধ্যে ১২টি মেডিকেল অফিসারের মধ্যে ১১টি এবং ১০টি কলসালটেন্টের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য। অন্যদিকে ৩৬টি সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে ২৯টি, ১১টি স্টাফ নার্সের মধ্যে ৫টি এবং ৫টি জুনিয়র নার্সের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। এতে যেমন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা অন্যদিকে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ছে। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে পর্যন্ত ঔষুধ ও পরিক্ষা-নিরিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে ঔষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় তাদের।
আখি আক্তার বলেন, গুইংগারহাট থেকে ৩ দিন আগে এসেছি, কিন্তু ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছিনা এছাড়া ঠিক মতো চিকিৎসকের দেখা পাইনি। এছাড়া গাইনি ওয়ার্ডের রোগী রেবু বলেন, চিকিৎসক ও নার্স সংকট থাকায় আমরা হাসপাতালে এসেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছি না।
রাজাপুর এলাকার রোগীর স্বজন হাজেরা বলেন, ৩ দিনের ডাক্তারের দেখা পেয়েছি মাত্র ২ বার। তাও দ্রুত এসেই চলে গেছেন। এছাড়া হাসপাতালে নেই কোন পরীক্ষা-নিরিক্ষার কোন ব্যবস্থা। বাইরে থেকে টেস্ট করিয়েছি, আমরা গরিব রোগীরা খুব বিপদের মধ্যে রয়েছি।
শান্তিরহাট থেকে আসার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের রোগীর স্বজন জান্নাত বলেন, ৩ দিন ধরে রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, ডাক্তারের দেখা পেয়েছি মাত্র একবার। হাসপাতাল থেকে সামান্য কিছু ওষুধ দিলেও অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।
মিয়ারহাট থেকে আসা গাইনি ওয়ার্ডের ভর্তিরত রোগী সুমা বেগম বলেন, পেট ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি, ৩ দিনেও রোগ নির্নয় হয়নি, ঠিকমত ডাক্তার পাওয়া যায়না।
হাপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে হাসপাতালে দুগদ্ধময় পরিবেশ, রোগী এলেও আরো বেশী অসুস্থ হয়ে যায়। ওয়ার্ডের আবকাঠামো সরঞ্জাম জীর্ন দশা। হাসপাতাল থেকে দু’একটি ওষুধ দেয়া হলেও অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আসতে হয়।
এছাড়া হাসপাতালে প্রায় সময়ই অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। অলটাসনোগ্রাম, রক্ত ও এক্সরে মেশিন থাকলেও ইজিজি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সকল ধরনের পরীক্ষা হয়না হাসপাতালে। রোগীদের যেতে হয় স্থানীয় ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার গুলোতে। জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য একমাত্র ভরসা সদর হাসপাতালে শয্যার অভাবে নারী ও পুরুষ মেডিসিন, সার্জারী, অর্থপেডিকস, গাইনী, ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে প্রায়ই রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। এক বছরের অধিক সময় ধরে এনেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের অপারেশন। ডাক্তার স্বল্পতায় চিকিৎসক নার্সরাও দিশেহারা। ভোলা সদর হাসপাতালেল চিকিৎসক ডা. সামি আহমেদ বলেন, ছোট ছোট কাটা ছেড়া ও ভাঙ্গার চিকিৎসা হলেও বড় ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সিজারিয়াল অপারেশনও। এতে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে মারাতœক হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সরকার থেকে বিভিন্ন ৫০ আইটেমের ইনজেকশন ও ওষুধ সরবরাহ করা হলেও হাসপাতালে ওষুধ সংকট তীব্র। হাসপাতালে সরবরাহ নেই হার্ডের রোগীদের কোন ওষুধ। তাই এ ধরনের রোগীদের পড়তে হয় চরম বিরম্বনায়।
হাসপাতাল সুত্র জানায়, সদর হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন আউটডোরে (বর্হিবিভাগে) ৫’শত রোগী চিকিৎসা নেন। ইনডোরে শতাধিক রোগী ভর্তি হন। এতে দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট। শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের জন্য মাত্র ১০ বেড রয়েছে কিন্তু তার বিপরীতে দৈনিক গড়ে ৪০/৪৫জন রোগী থাকায় গাদাগাদি করে শিশুদের চিকিৎসা নিতে হয়।
এদিকে, ১০০ শয্যার হাসপাতালে এ হাসপাতালটিকে শয্যা সংকট লেগেই থাকে। শয্যার অভাবে রোগীদের মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হয়। তবে ১০০শয্যার খাবার সরবরাহ থাকায় অন্যরা পাচ্ছেন না খাবার। ভোলা সদর হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: ইকবাল আহমেদ জানান, ডাক্তার সংকট তীব্র। একজনের পক্ষে এতো রোগীকে চিকিৎসা সেয়া সম্ভব নয়। দিনের বেলা কমপক্ষে ৬ জন চিকিৎসক থাকা জরুরী। কিন্তু সে তুলনায় চিকিৎসক নেই।
এ ব্যাপারে ভোলার সিভিল সার্জন ডা: ফরিদ আহমেদ বলেন, ডাক্তার সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবুও চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছে।
এব্যাপারে উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের নিকট চিঠি প্রেরন করেছি, তারা খুব শিগ্রই চিকিৎসক কেটে যাবে।