শুক্রবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মেঘনায় দেখা মিলছে ইলিশের
মেঘনায় দেখা মিলছে ইলিশের
বিশেষ প্রতিনিধি • ‘অভাব ও দুঃখ-দুর্দশার দিন শেষ। মহাজন-এনজিওর দেনা আর সুদে নেওয়া টাকা প্রায় পরিশোধ। আসছে কোরবানির ঈদে পরিবারের সবাইকে নতুন পোশাক-আশাক আর কোরবানি দেওয়ার জন্য কিনতে হবে পশু। জালে ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ছে ইলিশ। তাই এখন আর বসার ফুরসত নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেঘনায় জাল বেয়ে মহাজনরে পাওনা ও নৌকা ভাড়া পরিশোধ করেও বেশ টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরা যাচ্ছে’— কথাগুলো বললেন ভোলা সদর উপজেলার উত্তর ইলিশা জেলেপল্লীর কাদের, হিরণ ও জসিমসহ একাধিক মাঝি। তারা আরও জানান, গত কয়েক দিনে মেঘনায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় আসন্ন কোরবানির ঈদ ভালভাবে পালনসহ নিষেধাজ্ঞার সময়গুলোতে চলার মতো টাকা জমিয়ে রাখা যাচ্ছে। এতে করে সহসা অভাবে পড়তে হবে না বলে জানান তারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি জেলেপল্লী, উত্তর ইলিশা, দক্ষিণ ইলিশা জেলেপল্লী, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লীতে জেলেরা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নেমে পড়েছেন মেঘনায় ইলিশ শিকারে। রোজার ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও তা ঈদের পর আর দেখা মেলেনি। তবে কয়েক দিন থেকে মেঘনায় আগের চেয়ে বেশি ইলিশ ধড়া পড়ায় জেলেরা তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেঘনায় নেমে পড়েছেন। কোনো কোনো নৌকায় রান্নাবান্না খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে নদীতে। আনন্দ ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে চলছে ইলিশ শিকার। মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় ভোলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট-বড় মৎস্যঘাট ও বন্দরগুলো জমে উঠেছে। এদিকে মেঘনায় পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ায় ভোলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে ইলিশের দাম অনেক কমে এসেছে। দাম কম থাকায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ফলে মাছ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন জেলেরা। ভোলা সদর উপজেলার উত্তর ইলিশার জেলে হারুন মাঝি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ইলিশ না পাওয়ায় মহাজন, এনজিও ও সুদে টাকা ধার নিয়ে দেনায় পালিয়ে ছিলাম। গত কয়েক দিনে মেঘনায় নেমে অনেক ইলিশ পেয়েছি। মহাজনের ও সুদের টাকা পরিশোধ করেছি। কিস্তির টাকাও ঈদের আগেই পরিশোধ করেতে পারব। তাই বউ-বাচ্চা নিয়ে ঈদও ভাল কাটবে।’ চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরী-মুকরীর জেলে রশিদ মাঝি বলেন, ‘মেঘনায় এহন অনেক ইলিশ ধরা পড়ছে। আমাগো সংসারে এহন আর কোনো অভাব নাই। ঈদে সবাইরে নতুন জামা-কাপর কিনে দিতে পারমু। এবার ঈদে পশু কোরবানি দিমু।’ বোরহানউদ্দিন উপজেলার মৎস্যঘাটের আড়তদার আনিছুল হক বলেন, ‘নদীতে ভাল ইলিশ পড়ায় জেলেরা আমাদের দাদনের টাকা পরিশোধ করেছেন। ইলিশের দাম কম হলেও ক্রেতার সংখ্য বেশি হওয়ায় ভাল লাভ হচ্ছে।’ ওই ঘাটের ক্রেতা ইসমাইল, নয়ন ও ছালাউদ্দিন জানান, বর্তমানে ইলিশের দাম কম থাকায় অনেক আগ্রহ নিয়ে ইলিশ কিনছি। নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ পাব না। তাই ইলিশ ফ্রিজে জমিয়ে রাখছি।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রতীষ কুমার মল্লিক জানান, এ বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ও নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা ইলিশ শিকার না করায় তার সুফল হিসেবে এখন নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এখন পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের অভাবে পড়তে হবে না।