বৃহস্পতিবার ● ২ জুলাই ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মনপুরায় বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে নেই কোন বেড়ীবাঁধ, মৃত্যুঝুঁকিতে অর্ধলক্ষ মানুষ
মনপুরায় বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে নেই কোন বেড়ীবাঁধ, মৃত্যুঝুঁকিতে অর্ধলক্ষ মানুষ
সীমান্ত হেলাল, মনপুরা প্রতিনিধি ::
নির্মম মৃত্যুর পরওয়ানা হাতে এই বুঝি সমুদ্রের পানি জলোচ্ছ্বাসের মত গর্জন দিয়ে তেড়ে আসছে। মা-বাবা, ছেলে-মেয়েসহ আদরের পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর হয়ত বেঁচে থাকা হবেনা। নিজের জীবনের পাশাপাশি স্বজন হারানোর এমন আঙ্ককে প্রতিকূল আবহাওয়া আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঠিক এভাবেই দিনাতিপাত করছে ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরার বিভিন্ন চরাঞ্চলের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। স্বজন হারানোর ভয়াল ১২ নভেম্বরের ৪৪ টি বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবদি উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সমুদ্রের মোহনায় অবস্থিত মনপুরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরের মানুষ।
মনপুরা দ্বীপ রক্ষায় চতুর্দিকে ৭৭.৫৩ কি.মি. বেড়ীবাঁধ নথী-পত্রে থাকলেও চারদিক থেকে মেঘনার প্রবল গ্রাসে ভাংতে ভাংতে এখন প্রায় অর্ধেকেরও বেশী বিলীন হয়ে গেছে। এই উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সামান্য জোয়ারেও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।
এছাড়া মনপুরার উত্তরে কলাতলীর চর, কাজীর চর, ঢাল চর, পশ্চিমে শহীদ শামছুদ্দিন চর, বৈশ্যার চর, পূর্বে বদনার চর, লাল চর, দক্ষিণে সাগর মোহনায় চর নিজাম সহ বিভিন্ন চরে কোনো বেড়ীবাঁধ না থাকায় যে কোনো মূহুর্তে সাগরের ঢল কিংবা জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এসব চরের অর্ধলক্ষ মানুষকে। জন প্রতিনিধি আর রাজনৈতিক নেতা- নেত্রীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি মাখা ‘দিন যায় আর কথা থাকে’ তবুও এসব বিচ্ছিন্ন চরে হচ্ছেনা স্বপ্নের বেড়ীবাঁধ। এদিকে কঠিন বাস্তবতার জীবনে বঙ্গোপসাগরের মুখে ২৫ হাজার লেকের চর নিজাম আর ২০ হাজার লোকের কলাতলরি চরের গরীব মানুষদের বেঁচে থাকার নিরাপত্তা চরে বসবাসের কয়েক যুগ পরও অরক্ষিতই রয়ে গেল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর গোর্কি নামের ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। ওই জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল মনপুরা উপকূলের মানুষ। দুঃসহ সেই রাতের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি সমুদ্র উকূলের মানুষরা। সর্বনাশা সেই প্রলয়ংকারী জলোচ্ছ্বাসে স্বজন হারিয়ে মূহুর্মূহু আৎকে ওঠেন প্রবীন মনপুরাবাসীরা। ৭০’ এর ১২ নভেম্বর ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কথা স্মরণ করে ভয়জড়িত চোখে কান্না জড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে জানান, সাগরে কোনো লঘুচাপ বা নিন্ম চাপের খবর শুনলেই তারা আঁৎকে ওঠেন। মুহুর্তেই সামনে চলে আসে নির্মম মৃত্যুর হাতছানী। তাই এই উপকূলবাসীর ভয় হয়। আবারো যদি ভয়াল ১২ নভেম্বর আসে তখন তারা কি করবেন! অসহায় এইসব মানুষদের উদ্বেগের একমাত্র কারণ, ১৯৭০ সালের মহাদুর্যোগের পরও উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজনের বেঁচে থাকার নিরাপত্তা এখনও উপেক্ষিত হয়ে আছে। এছাড়া মনপুরার মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দক্ষিণে সাগর মোহনায় অবস্থিত চর নিজামে কোনোপ্রকার বেড়ীবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ২৫ সহস্রাধিক মানুষ রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিতে।
এব্যাপারে ৩ নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো.জাকির হোসেন জানান, বঙ্গোপসাগর মোহনায় অবস্থিত চর নিজাম দ্বীপটিতে কোন প্রকার বেড়ীবাঁধ না থাকায় চরের ৩০ হাজার মানুষ প্রচন্ড ভয়ের মুখে ঝুঁকীতে বসবাস করছে। এবং কোনোপ্রকার সাইক্লোন সেন্টার না থাকায় তারা মৃত্যুঝুঁকীতে থাকে সবসময়। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এব্যাপারে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম জানান, মনপুরার বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়ীবাঁদে পুণঃমেরামত কাজ চলছে। আর চরনিজাম ও কলাতলী চরের বেড়ীবাঁধের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছ্ িএখন পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়নি।