বৃহস্পতিবার ● ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলায় বালু ফেলে অন্যের দোকান ঘর দখল
ভোলায় বালু ফেলে অন্যের দোকান ঘর দখল
এইচ এম নাহিদ: ভোলায় দোকান ঘরের সামনে বালু ফেলে অন্যের ৪২ বছরের ভোগ-দখলিয় জমি দখলের চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষরা। আর এ ঘটনায় দখলকারীদের পক্ষপাত্বির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। থানায় মামলা দিতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন জমির মালিক। এতে গত এক সপ্তাহ ধরে ওই দোকনটি বন্ধ রয়েছে। এলাকার চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবিরের কাছে মিমাংশ জন্য গেলেও সে কোনো সঠিক সমাধান করেনি, উল্টো দখলকারীদের পক্ষে কাজ করছেন তিনি। সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
দোকানের মালিক ও জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান বাবলু লিখিত ও মৌখিক অভিযোগে বলেন, তিনি ১৯৭৪ সালে জয়নাল আবেদীন তালুকদারের কাছ থেকে তুলাতুলি বাজারস্থ ধনিয়া মৌজার ১৩৬৪/১৩৬৫ দাগের এক শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সে থেকে ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। পরে ওই জমিতে একটি দোকান ঘর নির্মান করে ভাড়া দেয়। কিন্তু চলতি মাসের ৩ তারিখে তার পাশের জমির মালিক আ. মান্নান হাওলাদার ও তার তিন ছেলে নূরনবী, মিরাজ ও কিবরিয়া মিলে জোর পূর্বক তার দোকানের টিনের বেড়া কেটে বাসা থেকে বের হওয়ার দরজা বের করে। এ অবস্থায় তাদেরকে বাধা দিলে তারা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। তাদের সাথে এ নিয়ে অনেক বাক-বিত-া হয়। পরে ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবিরকে ঘটনাটি জানালে তিনি ৫ তারিখে উভয় পক্ষকে মিমাংশার জন্য কাগজ-পত্র নিয়ে আসতে বলে। ৫ তারিখ উভয় পক্ষ সকল কাগজপত্র আনতে না পারায় বিষয়টি অমিমাংশিত থেকে যায় এবং পরের দিন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যানের অফিসে পুনরায় মিমাংশার তারিখ ধার্য করা হয়।
কিন্তু পর দিন সকালে মন্নান ও তার তিন ছেলে মিলে ওই দোকানের পিছনে তিন ট্রাক ও সামনে তিন ট্রাক বালু ফেলে দোকানটি পুরো বন্ধ করে দেয়। দোকানের ভাড়াটিয়া বালু ফালানোর কথা জিজ্ঞেস করলে তারা এক ঘন্টার মধ্যে বালু সরিয়ে নেয়ার কথা বলেন। এর পর থেকে ওই বালু ওখানেই পরে রয়েছে। এদিকে দোকানের ভাড়াটিয়া বালুর কারনে গত এক সপ্তাহ ধরে দোকান খুলতে না পারায় তার দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এর পর ৬তারিখ সন্ধ্যায় চেয়ারম্যানের অফিসে মিমাংশার জন্য বসলে চেয়ারম্যানকে বালুর সরানোর কথা বললে তিনি পর দিন সকালে বালু সরিয়ে নিবে বলেন। কিন্তু সে বালু আজও সরানো হয়নি। ওই সময় উভয় পক্ষের আমিন ও ইউনিয়ন পরিষদের আমিনসহ কাগজপত্র পর্যালোচন করে যখন তা শুনাতে ছিলেন তার মধ্যেই চেয়ারম্যান হঠাৎ করে তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, বাবলু মাষ্টার দোকানটি পরিচালনা করে। এ অবস্থায় চেয়ারম্যানের এরকম ওপেন পক্ষপাতিত্বে দেখে বিষয়টি অমিমাংশিত রেখেই সেখানে উপস্থিত সকলে চলে যায়। এর পরও চেয়ারম্যানকে আরেকটি তারিখ নির্ধারন ও বাদী পক্ষকে দোকানের সামনে থেকে বালু সরিয়ে নেয়ার জন্য বলে দিতে বললে তিনি থানায় কাজ আছে বলে উঠে যায়।
আবদুর রহমান বাবলু আরও বলেন, আমি নিরুপায় হয়ে পরে ভোলা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশও মামলা নেয়নি, পুলিশ দোকানে হামলা হলে তাদেরকে খবর দিতে বলেন। পরে তিনি ৮ সেপ্টেম্বর ভোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যাহার নং ৩২৫। এর আলোকে থানার এএসআই শুভঙ্কর মিত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে আ. মান্নান হাওলাদারকে বালু রাখার কারন জিজ্ঞেস করে ও দোকানের সামনে থেকে বালু সরিয়ে দিতে বলে। এসময় তারা পুলিশকে চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেন। পুলিশ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
এব্যাপারে দোকানের ভাড়াটিয়া আবু সাইদ বলেন, বিগত ১৫/২০ বছর ধরে আমি এ যায়গায় দোকান করি ও আবদুর রহমান বাবলুকে ভাড়া দিয়ে আসছি। কিন্তু আ. মান্নান হাওলাদার ঈদের পর দিন দোকানের বেড়া কেটে পথ ও ৬ তারিখে দোকানের সামনে ও পিছনে বালুর রেখে দোকান বন্ধ করে রাখছে। এতে আমার দোকানের মালামাল ও ফ্রিজে রাখা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যদি তারা যায়গার মালিক হয় তাহলে শালিশের মাধ্যমে মিমাংশা হলে আমি তাদেরকে ভাড়া দিবো। কিন্তু আমার দোকানের মালামাল নষ্ট করে আমার ক্ষতি করছে কেনো।
অভিযুক্ত আ. মান্নান হাওলাদারের ছেলে মোস্তাফিজ বলেন দোকানের যায়গার মালিক তারা। কিন্তু বাবলু মাষ্টার জোরপূর্বক তাদের জমি দখল করে এতদিন দোকান ভাড়া দিয়েছে। বাবলু মাষ্টারের কোনো কাগজপত্র নেই। তারাই প্রকৃত মালিক।
ধনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন কবির বলেন, তিনি বিষয়টি মিমাংশার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আবদুর রহমান বাবলু শালিশের মধ্যে তাকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করায় তিনি বিষয়টি থেকে সরে এসে স্থানীয় জামাল মেম্বারকে মিমাংশার জন্য দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি কোনো পক্ষ অবলম্বন করেননি।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির বলেন, বিয়ষটি নিয়ে আবদুর রহমান বাবলু থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরদিন তাকে থানায় আসতে বলছি সে আসেনি। আর কোনো জমিজমার মামলা আমরা নিতে পারি না, সেটা আদালতের ব্যাপার। যদি কোনো হামলা বা মারধরের ঘটনা ঘটে তাহলে মামলা নেয়া যায়।
-এফএইচ