শনিবার ● ১০ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » চোঁখের জলে অপেক্ষা অসহায় দীপ্তির!
চোঁখের জলে অপেক্ষা অসহায় দীপ্তির!
ছোটন সাহা: চোঁখ মুখে অজানা আতংকের ছাপ। কিছুক্ষণ পর পর কেঁদে যাচ্ছেন। চরম নিরাপত্তাহীনতা, পাশে নেই কেউ। একাই লড়ে যাচ্ছেন। নেই কারো ভরসা। সাহায্য করার মত নেই কেউ। সবাই যেন নিশ্চুপ। কিন্তু তবুও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে এমন আশা নিয়ে গত ৪ জুন থেকে ৮দিন ধরে স্বামীর স্বীকৃতির অপেক্ষায় অনশন করছেন তিনি।
এ গল্প অসহায় এক নারী দীপ্তি রাণী দাসের। অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয় এবং শশুর বাড়ির স্বীকৃতির দাবীতে একাই বিচারের আশায় পরে রয়েছেন লালমোহনে। সেখানে স্বামী উজ্জ্বল দাসের বাড়ি। শশুর প্রভাবশালী কালিপ্রদ দাস মনে নিচ্ছে না তাকে। বরং তাড়িয়ে দিতে নানা কৌশলে নেমেছেন। নিশ্চুপ স্বামী উজ্জ্বলও। একবারও খোঁজ নিচ্ছেনা। কেন নিশ্চুপ সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই দীপ্তির। শুধু চোখেঁর জলে অপেক্ষা তার।
গা শিউয়ে উঠা এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা পুরো জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হলেও স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চুপ। একে ক্ষোভ আর অসন্তোস বিরাজ করছে সুশিল সমাজের মানুষের মাঝে। যেখানে মানবতা বিপন্ন হতে চলছে।
দীপ্তি জানান, এখনও স্বামীকে ভালোবাসেন তিনি। চোঁখে জল টলমল! তবুও স্বামীর কথা বিবেচনা করে আইনের আশ্রয় নেননি তিনি, কারণ আইনের আশ্রয় নিলে স্বামী জেলে যাবে, তাতে তো কোন সমাধান হবেনা, শুধু স্বামীর সাথেই সংসার করতে চাই। তবে শেষ পর্যন্ত অধিকার না পেলে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিবেন এমন হুশিয়ারি তার।
অসহায় দীপ্তি আরো জানায়, স্বামী, অনাগত সন্তান এবং পুত্রবধুর স্বীকৃতি থেকে ঢাকা থেকে লালমোহনে ছুটে আসেন তিনি। স্বামী বাড়ির বদনাম হবে তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে একাই বিয়ের কথা জানাতে শশুর বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাষন্ড কালিপদ ও তার পরিবার দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়। তখন মিডিয়া লোকজন জানতে পারেন।
বিচার পেতে লালমোহন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্থানীয় হিন্দু নেতাদের জানিয়েছেন। কিন্তু আজ অবদি কোন ফল হয়নি। কারো ভরসা পাচ্ছেন না তিনি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামাজিক মিমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু ৮ দিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
জানকে চাইলে নির্বাহী অফিসার সামসুল আরেফিন বলেন, সামাজিক মিমাংসা করতেই দীপ্তিকে নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
গত দেড় বছর আগে ঢাকার গাজিপুরের মনিপুর এলাকায় বাবা-মা হারা দীপ্তির সাথে পরিচয় হয় উজ্জলের সাথে। মন দেয়া নেয়ার পর মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। কিন্তু বিয়ের পর পরই শশুর বাড়ি নিয়ে না যাওয়ার তালবাহানা করে উজ্জ্বল। কৌশলে নষ্ট করে দেয় চার মাসে গর্ভে থাকা সন্তাকে। পরে যখন তিনি আবারো অন্তঃস্বত্ত্বা তখনও নানা রকমের কৌশল উজ্জলের। শশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া এবং স্বীকৃতির কথা বার বার বলা স্বত্তেও নানা অজুহাত দেখায় পাষন্ড স্বামী। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে ঢাকা থেকে লালমোহনে এসে নিজের অধিকার পেতে অনশন শুরু করেন তিনি। কিন্তু তার এ অনশন শুধু অনশনই রয়ে যাচ্ছে সাহায্যের হাত বাড়াতে কেউ এগিয়ে আসছেন না।
এ নিয়ে একাধিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও যেন টনক নড়ছে না স্থানীয় প্রশাসনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
তবে একা লড়ে যাওয়া দীপ্তি অধিকার বঞ্চিত হবেন নাকি নতুর কোন হৃদয় বিদারক ঘটনার রুপ নিবে।
-এফএইচ