শনিবার ● ১০ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » অসহায় দীপ্তি কি পাবে তার অধিকার?
অসহায় দীপ্তি কি পাবে তার অধিকার?
ছোটন সাহা: ‘নারী অধিকার’ নিয়ে কথা বলার মানুষের অভাব নেই এ কথাটি যেমনি সত্যি ঠিক তেমনি যখন কোননারী বিপদে পড়েন তখন কতজন তারপাশে এসে দাড়ান? এ প্রশ্নটি থেকেই যায়। আমাদের ঠিক পাশেই অনেক নারী তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। যেন তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। কথা হচ্ছে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য। কিন্তু তা না করে যদি দায় এগিয়ে নিশ্চুপ হয়ে যাই তাহলে তো মানবতা বিপন্ন হবেই।
বলছি অসহায় এক দীপ্তির কথা। অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয় এবং শশুর বাড়ির স্বীকৃতি চেয়ে আজো বিচার পায়নি। তার জীবন এখন অনিশ্চয়তায়। চোঁখের জলে কাটছে তার দিন। কিন্তু তবুও সেদিকে দৃষ্টি নেই সমাজপতিদের। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কি জীবন যুদ্ধে পরাজিত হবে দীপ্তি?
দীপ্তি বিশ্বাষ তিনি অধিকার ফিরে পাবেন। আর তাই হাল ছাড়েননি তিনি। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনশন করে যাচ্ছেন তিনি।
দীপ্তিকে নিয়ে একদিকে যেমন গণমাধ্যমে একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে ঠিক তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও তোলপাড়। হয়ত এ ঘটনা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রশ্ন হলো কি এমন ক্ষমতাধর লালমোহনের কালিপ্রদ দাস। তার কাছে কেন মাথা নত পুরো লালমোহনের সুশিল সমাজ। কেউ কি নেই এমন নির্মম ঘটনার প্রতিবাদ করার। নাকি সাহস রয়েছে কিন্তু যেনে শুনেই নিশ্চুপ তারা। প্রশ্ন রয়েছে, দীপ্তির স্বামী উজ্জ্বল দাসকে নিয়েও। তিনিও কেন লুকিয়ে রয়েছেন? নাকি তাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
দীপ্তির ঘটনা মিমাংসার করার জন্য একাধিক জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু গত এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তারা কোন সমাধান দিতে পারছেনা। কথা ছিলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টির সামাজিক মিমংসা করবেন। তিনিও সমাধানে যেতে পারেননি। তবে তিনি দীপ্তিকে তিনি নিরাপত্তা দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু মানবতা নয়, দীপ্তিকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবী স্থানীয়দের। ভোলাবাসীর প্রশ্ন ? এতো কিছুর পরেই কোন সমাধান নেই। তাহলে কি দীপ্তিকে শুন্য হাতে ফিরে যেতে হবে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো দীপ্তিকে নিয়ে কয়েকটি গ্রুপ বিভক্ত হয়েছে। কেউ দীপ্তির পক্ষে কেউ বা বিপক্ষে। তবে মানবতার কথা বিবেচনা করে গ্রুপিং নয় বরং দীপ্তির পক্ষে কাজ করে তার অধিকার ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু তা না করে যদি গল্পটাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয় তাহলে হয়তো একটি জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই দীঅপ্তি পাশে দাড়িয়ে তাকে সহযোগীতা করুন।
দীপ্তির বর্ণনায় রাজধানীর গাজীপুরের মনিপুর এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কৃষ্ণ দাসের মেয়ে দীপ্তি রাণী দাস। জম্মের ২ ঘন্টার মধ্যে মা লিজা রাণীকে হারান তিনি। পরে জনৈক এক দম্পতির কাছে বড় হন দীপ্তি । যখন ক্লাস ৭ম শ্রেণীতে পরেন তিনি তখন জানতে পারেন তার আসল পরিচয়। এক পর্যায়ে জীবিকার তাগিদে গার্মেন্টেস চাকুরী নেন তিনি। দীপ্তি যেখানে থাকেন একই স্থানে ভাড়া থাকতো লালমোহনের কালিপ্রদ দাসের ছেলে উজ্জল দাস। প্রতিদিন কর্মস্থলে যাওয়া-আসার মাঝেই দীপ্তির সাথে উজ্জলের পরিচয়। সেখান থেকেই দুইজনের মধ্যে মন দেয়া নেয়া এবং ভালোবাসায় পরিণত হয়। এক বছর আগে একটি মন্দিরে গিয়ে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর দীপ্তিকে তার শশুর বাড়ি নিয়ে যেতে তালবাহানা করে উজ্জল। এক পর্যায়ে গর্ভে থাকা চারমাস বয়সী সন্তানে ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বেই অংকুরে নষ্ট করে দেয় উজ্জল। কিন্তু তাতেও ভালোবাসার মানুষকে বিশ্বাষ করে হাল ছাড়েননি তিনি। আবার সন্তান সম্ভবা হন দীপ্তি। কিন্তু এরপরেও প্রতারণা আশ্রয় নেয় স্বামী উজ্জল। বার বার বলা সত্ত্বেও শশুর বাড়ি নিয়ে স্বীকবৃতি দেয়নি উজ্জল। পরে বাধ্য হয়ে নিজের অধিকার আধায়ের জন্য লালমোহন চলে আসেন দীপ্তি। এরপরেই ঘটনা সকালের জানা রয়েছে।
গা শিউরে উঠা এ গল্পের শেষ কোথায়? হয়ত কারো জানা নেই। তবে মানবতার কথা বিবেচনা করে দীপ্তি পাশে দাড়ানো আমাদের সকলের কর্তব্য।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, ভোলা
-এফএইচ