রবিবার ● ১৪ জুন ২০১৫
প্রথম পাতা » জেলার খবর » মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দ্বীপ মনপুরা: নিঃস্ব হয়ে পরেছে বহু পরিবার
মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দ্বীপ মনপুরা: নিঃস্ব হয়ে পরেছে বহু পরিবার
মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মনপুরা। চতুর্দিক থেকে ভেঙ্গে কেবলই ছোট হয়ে আসছে এ জনপদটি। গত কয়েক বছরে মেঘনার ভাঙ্গনে হাজার হাজার একর ফসলী জমি, ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে পরেছে। ভাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান, মসজিদ, মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে চলে গেছে।
প্রতিনিধি ::অব্যাহত ভাঙ্গন ১নং মনপুরা ইউনিয়নের উত্তর মাথা দিয়ে কেবলই ভেতরে ঢুকছে। ইতিমধ্যে রামনেওয়াজ বাজারটি উত্তর মাথা থেকে ভাঙ্গতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। একইভাবে স্থানান্তর করা হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির। ইতিমধ্যে আন্দিড়পাড়, মাছুয়াখালি, কাচারীর ডগি সম্পূর্ণ এবং কাউয়ারটেক, সীতাকুন্ড, ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার অধিকাংশ গ্রাম এখন নদীগর্ভে চলে গেছে।
হাজীরহাট ইউনিয়নেও ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। নাইবেরহাট, সোনারচর অর্ধাংশ, চরঞ্জান, দাসেরহাট প্রায় সম্পূর্ণ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হাজীরহাট বাজারসহ উপজেলা পরিষদ ভাঙ্গনের হুমকির মুখে। উপজেলা শহর রক্ষার জন্য শহর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। একইভাবে উত্তর সাকুচিয়া ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ভাঙ্গছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে মনপুরা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
রামনেওয়াজ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. কামরুল ও দীলিপ মজুমদার বলেন, ইতিপূর্বে বাজারটি কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী দেনার দায়ে পথে বসেছেন। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ বাজারটি নদীগর্ভে চলে যাবে। তারা ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন। মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার মো. ফরহাদ ও নিজাম মেম্বার বলেন, অব্যাহত ভাঙ্গনে আমাদের জায়গা-জমি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের মত শতশত পরিবার ভিটাবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে, বেড়ির ঢালে, কলাতলী চরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এসব ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ আরো বলেছেন, সরকার যদি কলাতলী থেকে মনপুরা ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে তাহলে স্থায়ীভাবে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে জনপদটি। হাজার হাজার একর জমি জেগে উঠবে। পুণঃর্বাসন হবে প্রায় ২০ হাজার মানুষের।
মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন হাওলাদার জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর তীব্র স্রোতে মনপুরার উত্তর মাথা থেকে ভেঙ্গে কেবলই ভেতরে ঢুকছে। প্রতিদিন মানুষের ভিটাবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার একর ফসলী জমি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন মেঘনার ভাঙ্গনে মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে শুরু করেছে। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের জন্য ব্লক ও ড্যাম্পিং এর ব্যবস্থা করেছেন। এখন ভাঙ্গন রোধের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। মেঘনার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কলাতলী টু মনপুরা বাঁধ নির্মাণেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।