বুধবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » জেলার খবর » শীতের মৌসমেও মেঘনায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ
শীতের মৌসমেও মেঘনায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলায় শীতের মৌসমেও মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীতে গত কয়েকদিন যাবত জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁেক ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। এখানকার নদী ও সাগর মোহনায় আশানুরূপ ইলিশ পাওয়ায় জেলে পল্লীতে বিরাজ করছে উৎসব আমেজ। জেলা সদরসহ জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন মাছের ঘাট, আড়ৎ, পাইকারী ও খুচরা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাক-ডাক ও দর কষাকষিতে প্রতিদিন মুখরিত হচ্ছে ইলিশের বাজার। আর দীর্ঘদিন পর জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ায় হাসি ফুঁটেছে জেলেদের মুখে।
সদর উপজেলার ভোলার খাল মাছের ঘাট, নাছির মাঝি মাছঘাট, কোরার হাট মাছের মোকাম, তুলাতুলি মাছ ঘাট, বিশ্বরোড মাছের ঘাট, জংশন এলাকার মাছঘাট, ইলিশার মাছ ঘাট, দৌলতখান উপজেলার পাতার খাল, চরফ্যশনের চেয়ারম্যানের খাল মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। সারারাত নদীতে মাছ ধরে সকাল বেলা ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসে জেলেরা।
ঘাটে নৌকা অথবা ট্রলার ভিড়ানোর সাথে সাথেই হাকা-ডাক দিতে থাকে ব্যাপারীরা। জেলেরা ঝুঁড়িতে করে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ নির্দিষ্ট গোলায় রাখে। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ইলিশ কিনতে নিলামে ডাক উঠে যায়। স্থানীয় ব্যাপারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যদাতাই সেই মাছ কিনে নিচ্ছেন। মূলত এমনি করেই এখান থেকে ইলিশ যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে। আবার অনেক ব্যবসায়ী সরাসরি লঞ্চে বা ট্রাকে করে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় মাছ সরবরাহ করে থাকেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবে এখান থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন।
মোকামগুলোতে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ইলিশ কেনার দিক থেকেও সাধারণ ক্রেতাদের চেয়ে তারাই ছিলেন এগিয়ে। ক্রয় করা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮-১০ দিন থেকে উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। এ শীত মৌসুমে মেঘনায় এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির নেই।
সদর উপজেলার মেঘনা পাড়ের ভোলার খাল মাছ ঘাটের আড়ৎদার মো. আল-আমিন জানান, এবার মৌসুমের প্রথম দিকে তেমন একটা ইলিশ পাওয়া না গেলেও বর্তমানে ইলিশের পরিমান বাড়ছে। কয়েকদিন আগেও যেসব আড়তে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি হতো, সেখানে এখন লাখের উপরে বিক্রি হয়।
দৌলতখান উপজেলার জেলে মো. জসিম ও মনির মিয়া জানান, গত কয়েক বছর শীতের এ সময়ে নদীতে তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যেত না। তবে গত ৮-১০ দিন ধরে জালে প্রচুর ইলিশ উঠছে। সুতার বড় ফাঁকার জাল ব্যবহার করেই ইলিশ শিকার করা যাচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর জাল তুললেই ৫-১০ হাজার টাকার মাছ পাচ্ছেন তারা। তবে এক শ্রেণির অসাধু কিছু জেলে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল ব্যবহার করে ইলিশ শিকার করছেন। তাদের জালে আরও বেশি টাকার মাছ উঠছে। তাদের কারণে জাটকা ও মাছের পোনাও রক্ষা পাচ্ছে না জানান এ দুই জেলে।
জেলেরা জানান, বর্ষার মতো শীতে ইলিশের বেশি চাহিদা থাকে না। তাই চাহিদার তুলনায় ইলিশ আমদানি বেশি হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে।
এদিন এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০-৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৬৫০ টাকা। হাফ কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০-৫০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৫০০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০-৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৩০০ টাকা।
এদিকে জেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছই বেশি। বিক্রেতারা সারি সারি ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছে বাজারগুলোতে। ক্রেতারা পছন্দের ইলিশ কিনতে এক দোকান থেকে ছুটছেন অন্য দোকানে। মূল্য সহনীয় থাকায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা।
ভোলা সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মা-ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনীর সহায়তায় কঠোরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেলেদের মধ্যেও সচেতনতা বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ শিকারি জেলেদের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসার ফলে শীতের এ মৌসুমেও বড় বা মাঝারি আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। কার্যক্রমগুলো এভাবে চললে সামনে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।
-এফএইচ