সোমবার ● ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর » বোরহানউদ্দিনে আ’লীগ বিএনপির সংর্ঘষে আহত ৫০, হাফিজ ইব্রাহিম বাসায় অবরুদ্ধ
বোরহানউদ্দিনে আ’লীগ বিএনপির সংর্ঘষে আহত ৫০, হাফিজ ইব্রাহিম বাসায় অবরুদ্ধ
বিশেষ প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৬ বছর পর ভোলা-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী আলোচিত সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম রোববার ঢাকা থেকে লঞ্চের বহর নিয়ে ভোলার বোনহানউদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় ফিরতেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।
দিনব্যাপী আতঙ্কে ছিলেন এলাকাবাসী। অঘোষিত হরতালের মতো বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট। সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম ভোরে দৌলতখান বোরহানউদ্দিন সীমানায় হাকিমউদ্দিন ঘাটে লঞ্চ থেকে নামার পর আওয়ামী লীগের ৬টি নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর হয়েছে। এছাড়াও ১৮টি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ, ৫ টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের গণসংযোগে হামলা হয়েছে।কুপিয়ে জখম করা হয়েছে অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে। এসব ঘটনার জন্য হাফিজ ইব্রাহিমকে সরাসরি দায়ী করেছে আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক সরোয়ার আলম জানান, প্রথমে লঞ্চ থেকে নামতে গিয়ে প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েন হাফিজ ইব্রহিম। লঞ্চ থেকে হাফিজ ইব্রাহিমকে র্যাব ও পুলিশ পাহারায় তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। এমভি তাসরিফ-১ ও এমভি তাসরিফ-৩ লঞ্চে আসা দলীয় নেতাকর্মীরা পরে বিভিন্ন ঘাটে নামেন। ওইসব নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, লঞ্চযোগ হাফিজ ইব্রাহিমের সঙ্গে আসা সহস্রাধিক নেতাকর্মী ঘাটে নামার পর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামের সঙ্গে থাকা ৪০ জনের একটি গ্রুপের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় হাফিজ সমর্থিতরা মারমুখী হন কামরুল গ্রুপের ওপর।
ওই সময় কামরুল গ্রুপের ১৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযেগ করে। এরপরেই এরা উদয়পুর রাস্তার মাথায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে। এমন খবরে বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগ কর্মী বাহিনী অবস্থান নেয়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ৩ ঘণ্টাব্যাপী বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়। এ সময় হামলার শিকার হন দুই সংবাদিক। এমনটা জানান এনটিভি সাংবাদিক আফজাল হোসেন। অপরদিকে রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুল এক সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ ইব্রাহিমের বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিবরণ দিয়ে জানান, ২০০১ সালের মতো তাণ্ডব চালিয়েছে রোববারও। এ সময় আওয়ামী লীগের ৫০ জন নেতাকর্মীকে গণসংযোগের সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। ১৫-২০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ ও ৫টি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর ও ৬টি নির্বাচনীয় অফিস ভাঙচুর করে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হাফিজ ইব্রাহিম ঢাকা থেকে ৪টি লঞ্চযোগে প্রায় ২ হাজার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে প্রথমে দৌলতখান লঞ্চঘাটে এসে ঘাটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বোরহানউদ্দিন হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছলে সেখানে টবগী ইউনিয়নের চেয়্যারম্যন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্নসম্পাদক কামরুল আহসান চৌধুরী তার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রাচারণায় নামলে হাফিজ ইব্রাহিমের ক্যাডার পক্ষিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়্যারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্নসম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেত্বত্বে ৪/৫শত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান চৌধুরী, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জোহেব হাসান, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, টবগী ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ ৫০জন নেতাকর্মী গুরুত্বর আহত হন।
বোরাহনউদ্দিন থানা ওসি অসীম কুমার সিকদার জানান, ৯টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ ও ৫টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-২ আসনের (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম নিজ বাসায় অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী মাফরুজা সুলতানা।
মাফরুজা সুলতানা বলেন, ‘আজ রোববার সকালে বোরহানউদ্দিন উপজেলা রোডের নিজ বাসভবন কুড়ালিয়া হাউসে আসেন তারা। এরপর পোশাকধারী ও সাদাপোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা তাদের বাসা ঘিরে রাখে।
বাসার বাইরে চেকপোস্ট বসিয়ে পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা লোকজনকে তল্লাশি ও মারধর করছে, যাতে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী আমার বাসায় আসা-যাওয়া করতে না পারে। এমনকি আমাদের কাউকে বাসার বাইরে পুলিশ যেতে দিচ্ছে না।’
মাফরুজা সুলতানা বলেন, সকালে বাসার ছেলেরা বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওদের মারধর করা হয়। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল কুদ্দূস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে সকালে হাফিজ ইব্রাহিম ঢাকা থেকে লঞ্চে করে উপজেলার হাকিমুদ্দিন ঘাটে যান। তখন ঘাটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাফিজ ইব্রাহিম একা বাসায় যেতে চাইলে তাকে নিরাপত্তা দিয়ে নেওয়া হবে। নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যেতে পারবে না। এরপর পুলিশি প্রহরায় বাসায় যান সাবেক এই এমপি।
-জেজে/এফএইচ