সোমবার ● ১২ নভেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জেলার খবর » ভোলা থেকে হরিয়ে যাচ্ছে মক্তব শিক্ষা ব্যাবস্থা
ভোলা থেকে হরিয়ে যাচ্ছে মক্তব শিক্ষা ব্যাবস্থা
বিশেষ প্রতিনিধি: দ্বীপজেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার মুসলিম পরিবারের শিশু শিক্ষার মূল বুনিয়াদ মক্তব শিক্ষাব্যাবস্থা এখন বিলুপ্তির পথে।মুসলিম উম্মাহর জন্য আদব কায়দা ধর্মীয় রীতিনীতি ও সঠিক জীবনযাপনের জন্য মক্তব শিক্ষাব্যাবস্থাই ছিল একমাত্র ভরসা, এ শিক্ষাব্যাবস্থার মাধ্যমে মুসলিমজাতী কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ মাসালা মাসায়েল শিশু বয়স থেকে শিক্ষা গ্রহণ করত। কিন্তু কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এ মুক্তব শিক্ষা ব্যাবস্থা।
সূত্রে জানা যায়, এশিক্ষাব্যাবস্থা বিলুপ্তির কারণ, বর্তমানে দেশে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগায়, কিন্টারগার্টেন, ক্যাডেট মাদ্রাসা,কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা, হিফজখানা, কোচিং ব্যাবস্থা এবং বেশিরভাগ মসজিদের ঈমাম বা মোয়াজ্জিন মোক্তবে শিক্ষকতা করতেন কিন্তু এখন ঈমাম কিংবা মোয়াজ্জিনরা মক্তবে শিক্ষকতা করেন না সম্মান হানি বা বেতন কম আবার ঠিকমত বেতন পাচ্ছেনা এসকল অজুহাতই বেশি দেখাচ্ছেন এ অঞ্চলের ঈমাম, মোয়াজ্জিনরা। আবার অনেকেই এ শিক্ষকতাকে ছোট করে দেখা সহ প্রভৃতি কারনে এ সমসাময়িক কালে মোক্তব শিক্ষাব্যাবস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ৬৯ ইউনিয়ানের ও ৫ পৌর সভায় প্রায় ৬৭০ ওয়ার্ডেই এক সময় এ শিক্ষাব্যাবস্থা চালু ছিল, একাধিক প্রবীন মহল বলেন, মোক্তব শিক্ষা বিলুপ্তির কারনে আমাদের দেশে শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ সহ বিভিন্ন অপরাধ দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ শিশুরা ভবিষ্যতে ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। এক সময় লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জের ওমরআলী হাজী বাড়ীর দরজায়মক্তব ছিল ওই মোক্তবে শিক্ষকতা করতেন স্বনামধন্য আলেমে দ্বীন শত শত মানুষের ওস্তাদ মরহুম মৌলভী মোঃ মাহেআলাম, দরদ হাওলাদার বাড়ীর দরজার মোক্তবে শিক্ষকতা করতেন মরহুম ক্বারী মোঃ আবুবকর সিদ্দিক, ধলীগৌরনগরের চানমিয়া হজী বাড়ীর দরজার মক্তবে শিক্ষকতা করতেন মাওঃ মোঃ ইয়াছিন, মুকবুল আহম্মদ হাওলাদার বাড়ীর মক্তবে শিক্ষকতা করতেন মৌলভী মোঃ হোসেন,মরহুম মৌলভী মোঃ খতিবুর রহমান, মজিদ দালাল বাড়ীর দরজার মক্তবে শিক্ষক ছিলেন,মরহুম মৌলভী আব্দুল লতিফ ( নোয়াখালী) প্রমূখ। তৎকালীন সময়ে মোক্তবে শিক্ষকদের মাসিক বেতন ছিলনা, বাৎসরিক আমন ধান জন প্রতি পাঁচ থেকে দশ কেজি করে বেতন হিসেবে দেওয়া হতো। কোন কোন মোক্তবের শিক্ষকরা শুধু ছাত্রদের বাড়ীতে (বেতন ছাড়া) ভাত খেয়ে জীবন যাপন করত। বর্তমানে যদিও কোন কোন এলাকায় মোক্তব শিক্ষা চালু রয়েছে কিন্তু শিক্ষকরা আগেকার মতো ধান বা বেতন ছাড়া শিক্ষা দেওয়ার নিয়ম নীতি নেই। এ শিক্ষা ব্যাবস্থার শিক্ষকরা ছাত্র/ ছাত্রী দের প্রতিমাসে জন প্রতি ৫০/১০০ টাকা পর্যন্ত বেতন হিসেবে নেওয়া হয়।
এব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশে অনিচ্ছাসত্বে জানান, বর্তমানে নিত্যপ্রজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়তি হওয়ায় বেনত ভাঁতাদি পোষায় না। আবার অনেক শিক্ষার্থী গরীব, প্রতিমাসে বেতন ঠিকমত উঠেনা, বেশিরভাগ বড় লোকের সন্তানদের মক্তবে পড়ান না। আবার এলাকার বাচ্চাদের এখন আর মোক্তবে পড়ান না অভিভাবকরা, ছাত্র/ ছাত্রী দিন দিন কমে যাচ্ছে। শুধু মোক্তবে শিক্ষকতা করে সংসার পরিচালনা করা আমাদের কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
একাধিক ছাত্র অভিভাবক বলেন,সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা একসময় মোক্তবে পড়ালেখা করেছি। এখন মোক্তব শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন যিমিয়ে পড়ায় আমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা সহ ধর্মীয় রীতি নীতির জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর বর্তমানে অসচেতনতার কারনে অভিভাবকরা সন্তানদের মক্তবে না পাঠিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনের জন্য কোচিংয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে সচেতন মহলের দাবী বাংলা,ইংরেজী,গনিত ও বিজ্ঞানের পাশাপাশি যেন ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের মূলভান্ডার মোক্তবের প্রতি গুরুত্ব দেন মুসলিম জাতি।
এ ব্যাপারে মসজিদে মদিনার স্ম্মানিত ঈমাম ও উক্ত এলাকার মোক্তবের শিক্ষক ক্বারী আব্দুস সবুর বলেন, আমাদের দেশে এক সময় প্রতি গ্রামে অন্তত ২/৪ টি মোক্তবের শিক্ষা ব্যাবস্থা ছিল, এখন পুরো গ্রাম খোঁজ করে ও মোক্তব চোখে পড়ছে না। আর এ বিশাল গ্রামে
কোথাও মোক্তব না থাকায় আমার এখানে ভীর জমাচ্ছেন ছাত্র ছাত্রীরা যাহা আমার একার পক্ষে পাঠদান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
আহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাওঃ মোঃ ফারুক ও করিমগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ্য মাওঃ মোঃ রুহুলআমিন বলেন,উপজেলার প্রতি গ্রামে অন্তত একটি করে হলে ও মক্তব থাকা প্রয়োজন। আগের মত মোক্তব না থাকায় এ অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
-এমআরপি/এফএইচ