

শনিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর » আর কত বয়স হলে ভাতা পাবে তজুমদ্দিনের ছলেমা খাতুন ?
আর কত বয়স হলে ভাতা পাবে তজুমদ্দিনের ছলেমা খাতুন ?
স্টাফ রিপোর্টার: ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার এক সময়ের সম্্রান্ত বনেদি পরিবারের সদস্য ৫ বার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিস্ব হয়ে ৮০ বছর বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন বিধাবা ছলেমা খাতুন। ভাগ্যে জুটেনি বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি সহ অসহায় মানুষের জন্য দেয়া সরকারের কোন সুযোগ সুবিধা। বার বার সাহায্য চেয়ে জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে কোন মতে চলছে জীবন সংসার।
শুক্রবার সকালে তজুমদ্দিন উপজেলা সদরে ভিক্ষা করতে আসা বিধাবা ছলেমা খাতুন জানান, বাপ দাদার অনেক নাম ডাক ছিলো। মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া পুরান তজুমদ্দিনের স¤্রান্ত চুকুন আলী রাঢ়ী বাড়ির আবদুল আলী রাঢ়ীর মেয়ে তিনি। স্বামী দড়িচাঁদপুরের চাঁনগাজী পাটওয়ারী বাড়ীর হারিস আহমেদ পাটওয়ারীর ছেলে মৃত জেবলহক পাটওয়ারী। পারিবারিক সম্মতিতে সেই সময় দুই বনেদি পরিবারের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়েছিল। তখন পুকুর ভরা মাছ, গোলা ভরা ধান আরো ছিল গোয়াল ভরা গরু-মহিষ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৫ বার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে বর্তমানে অন্যের জায়গায় বসবাস করছেন।
ছলেমা খাতুন নিজ ভাষায় আরো জানান, ‘আগে এই বাড়ী ওই বাড়ী কাজ-কাম করি খাইতাম, অহন পারিনা। শইল্লে বল শক্তি পাই না, দুরের আডে (বাজারে) জাইতাম পারিনা। পেডের জ¦ালা মেডাইতে মাইনষের কাছে হাত পাইত্যা খরাত(ভিক্ষা) কর্ইরা জীবন বাচে। বর্ষা আইলে বৃষ্টিরলাই বাইর অইতাম হারিনা, উয়াস (না খেয়ে) থাই দিন কাডাই। চেরমন (চেয়ারম্যান) মেম্বর বেকের দ্বারে গেছি, কেউ এক্কান কাড (ভাতার কার্ড) করি দেয়না। সরকার আংগোর লাই (আমাদের জন্য) সুবিধা দেয়, হেরা মোগোরে দেয় না। আল্লার কাছে বিচার থুইছি, যদি কারো দয়া অয়’।
জাতীয় পরিচয় পত্রে ৮ অক্টোবর ১৯৩৭ ইং জন্ম তারিখ অনুযায়ী ছলেমা খাতুনের বর্তমান বয়স ৭৯ বছর ৩ মাস। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী জেবল হক পাটওয়ারী মারা যান। ৩ ছেলে ১ মেয়ের সংসারে অভাব অনটনে মেয়েকে শুধুমাত্র কোরআন শরীফ পড়ালেও ছেলেরা যেতে পারেনি স্কুলের গন্ডিতে। বিয়ে শাদী করে দিন মুজুর সন্তানরা যে যার মতো পৃথক হয়ে যায়। ছোট ছেলে আবদুল হকের ৪ মেয়ের সংসারে বোঝা হয়ে কিছু দিন চলার পর অসহায়ত্বের মাঝে তিনি হাত পেতে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। প্রতি শুক্রবার সপ্তাহে একদিন শশীগঞ্জ বাজারে ভিক্ষা করে যে টাকা পায় তা দিয়েই চলতে হয় সাতদিন। প্রায় ৮০ বছর বযস হলেও ছলেমা খাতুনের ভাগ্যে জুটেনি বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি সহ অসহায় মানুষের জন্য দেয়া সরকারের কোন সুযোগ সুবিধা। সচেতন মহলের প্রশ্ন আর কত বয়স হলে ভাতা পাবেন ছলেমা খাতুন ?
-এমএসএইচ/এফএইচ