বুধবার ● ১৩ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিএনপি অবৈধ হলে আওয়ামী লীগও অবৈধ: ফখরুল
বিএনপি অবৈধ হলে আওয়ামী লীগও অবৈধ: ফখরুল
ঢাকা : বিএনপি অবৈধ হলে আওয়ামী লীগও অবৈধ। কারণ বাকশাল গঠনের পর আওয়ামী লীগ ছিল না। জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগও নিবন্ধন নেয়। সরকারের দুই বছর মেয়াদপূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে রুটিন বক্তব্য আখ্যায়িত করে বিএনপি বলেছে, এই ভাষণে জাতি হতাশ হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বুধবার বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল। মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিএনপিকে অবৈধ বলে গণ্য করা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাল্টা ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য এসব বলা হচ্ছে। দেশের মূল সমস্যা এসব না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ জাতিকে হতাশ করেছে। জাতির প্রত্যাশা ছিল, দেশে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী রুটিন বক্তব্য রেখেছেন।ফখরুল বলেন, বিগত দুই বছর ছিল গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার সময়। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত করার সময়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একটি প্রহসন। এর মাধ্যমে একটি রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট এবং একটি অদ্ভুত ধরনের সরকার গঠন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই সরকার উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন করে প্রমাণ করেছে বর্তমান সরকারের অধীনে ও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না।মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। গত দুই বছর ছিল বিরোধী দল ও মতের দমন-পীড়নের নজিরবিহীন উদাহরণ। এই সময়ে ৪৪০ জন হত্যা ও খুনের শিকার হয়েছেন। গুম ও নিখোঁজ হয়েছেন ২৬৭ জন, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ৩৩৭ জন। এ সময় রাজনৈতিক মামলা হয়েছে ২১ হাজার ৮৩ টি। আসামি করা হয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার ৭৪৭ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৫ জন। এর মূল্য লক্ষ্য ছিল, গণতন্ত্রকে বিদায় করে তথাকথিত উন্নয়নের নামে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা এবং তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করা। ফখরুল বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চ্যানেল ওয়ান, ইটিভি, দিগন্ত টিভি, সিএসবি, আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একুশে টেলিভিশনকে জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিএনপিতে যত জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আওয়ামী লীগে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল-গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগ তা নির্বাসিত করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা বাস্তবায়ন বা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণ জাতিকে হতাশ করেছে।জাতির প্রত্যাশা ছিল- দেশে যে গভীর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার ভাষণে তা নিরসনের একটি দিক নির্দেশনা পাওয়া যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী রুটিন বক্তব্য রেখেছেন।মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোনো কটাক্ষ সহ্য করা হবে না।প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারা জানমালের ক্ষতি করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা তার সরকারের সময়ে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা (বাংলাদেশ) আজ উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।আশাবাদী এবং আত্মবিশ্বাসী দেশবাসীকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করব।উন্নয়ন মহাসড়কে উঠে আসা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে দলমত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন,বিগত দুই বছর ছিল গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করার সময়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে ভুলন্ঠিত করার সময়কাল।দুই বছর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে অদ্ভুত নির্বাচন অভিহিত করে তিনি বলেন,ওই নির্বাচন ছিল প্রহসন। পরবর্তিতে রাবার স্ট্যাম্প সংসদ ও অদ্ভুত সরকার� গঠন করে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তিকালে উপজেলা নির্বাচন, ২০১৫ সালে ঢাকা ও চট্ট্রগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। ওইসব নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন দেখা যায়নি।রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কারচুপি, জাল ভোটের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণে সরকার তার দলকে ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।সরকারের দুই বছর বিরোধী দল ও মতের ওপরে সীমাহীন নির্যাতন ও দমনপীড়নের নজিরবিহীন উদাহরণ ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।বিগত আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সরকারের অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে পেট্রোল বোমা ও অন্যান্য বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করে বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপিয়ে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। গণমাধ্যম এখন স্বাধীন- প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, এই বক্তব্য কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার সুপরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে। মিডিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো কিছুই বলতে পারছে না। ভিন্নমতের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইটিভির মালিকানা জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।অনেক সংবাদকর্মীর কর্মচ্যুত হওয়া এবং সারাদেশে অসংখ্য সংবাদকর্মীর মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি নেতাকর্মীদের দ্বারা নিগৃহিত হওয়ার কথাও বলেন তিনি।সা�প্রদায়িক স�প্রীতি রক্ষায়ও সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফখরুল। বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি যদি অবৈধ হয়, আওয়ামী লৗগও অবৈধ। কারণ ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তখন ডেথ। আওয়ামী লীগ বলতে কোনো দল ছিল না।প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব আসার পর যখন বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু হলো, তখন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিবন্ধিত হয়েছে, আওয়ামী লীগও নিবন্ধিত হয়েছে।বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগে বেশি মুক্তিযোদ্ধা আছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র, আজ সেই গণতন্ত্রকে সরকার নির্বাসিত করেছে। আমরা সেই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে বলে দাবি করেছেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতা আলাদা। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে গেছে কিনা জানি না, অর্থনীতি লুটপাটের মহাসড়কে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। ক্ষমতা ছাড়ার সময় বিএনপির শেষ বছরে, অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এ সরকার গত সাত বছরে শত চেষ্টা করেও ৬ দশমিক ৭ শতাংশে আজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। উন্নয়নের মহাসড়ক যে কোন দিকে যাচ্ছে তা এ সূচকই বলে দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান,কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, শাহ নুরুল কবির শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।