![আবেদের নাম শুনেছি, কখনও দেখিনি : পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান](https://www.bholarsangbad.com/cloud/archives/2024/07/172053842-micro.jpg)
![ভোলার সংবাদ](https://www.bholarsangbad.com/cloud/archives/fileman/logo-default.png)
বৃহস্পতিবার ● ২৬ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » কোকো ট্রাজেডি’র ৬ বছর পরেও কান্না থামেনি স্বজনহারাদের !
কোকো ট্রাজেডি’র ৬ বছর পরেও কান্না থামেনি স্বজনহারাদের !
বিশেষ প্রতিনিধি• আজ ২৭ নভেম্বর ভোলার তেঁতুলিয়া নদীতে কোকো-৪ লঞ্চ দূর্ঘটনার ট্রাজেডির ছয় বছর। ২০০৯ সালের এই দিনের রাত ১১টায় ঢাকা থেকে লালমোহনগামী ঈদ উল আযহার ঘরমুখো দুই হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে এমভি কোকো-৪ লঞ্চটি ঘাটের কাছাকাছি এসে কাত হয়ে ডুবে যায়। এতে নারী, পুরুষ ও শিশু সহ ৮১ জন প্রাণ হারায়। বছর ঘুরে এ দিনটি এলেও আজও স্বজনহারাদের কান্না থামেনি। এ দিনটির কথা মনে করে আজও আৎঁকে ওঠেন তারা।
বেঁচে যাওয়া যাত্রী ফারুক ও শাহে আলম জানান, লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসার সময় বুড়িগঙ্গা নদী পাড় হলে লঞ্চটির তলা ফেটে যায়। তবুও ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চটি লালমোহনের উদ্দেশ্যে আসছিল। যাত্রীরা লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েও তীরে নামতে পারেননি। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিল। লালমোহন লঞ্চ ঘাটের কাছাকাছি নাজিরপুর লঞ্চ ঘাটে এমভি কোকো ৪ আসা মাত্র যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে গেলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করতে পারবে না ভেবে লঞ্চটি আবারও মাঝ নদীতে নেওয়ার চেষ্ঠা করে। একে অতিরিক্ত যাত্রী তার উপর তলা ফেটে যাওয়ায় পানি প্রবেশ করছিল। এক পর্যায়ে লঞ্চটি ডান দিকে কাত হয়ে ডুবি যায়। আর এতেই ঘটে দুর্ঘটনা। কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয় উদ্ধার অভিযানে উঠে আসে একের পর এক লাশ। স্বজনদের কান্নায় সেদিন লালমোহনের আকাশ ভারী হয়ে ওঠেছিল।
ওই দিনের ট্র্যাজেডিতে একই পরিবারের ৩ জনকে হারিয়ে এখনও শোকের মাতম চলছে লালমোহনের চর-ছকিনা গ্রামে যশোর নামক বাড়িতে। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের ঈদুল আযহা কেটেছে তেঁতুলিয়া পাড়ের স্বজনদের খোঁজে। তার পর থেকে ঈদুল আজহা কাটে হারানো স্বজনদের শোকে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে নুরে আলাম (২৬)। সেই ঢাকার দারুস সালম এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেখানের গার্মেন্টসকর্মী ময়মনসিংহ জেলার ইয়াছমিন (২০) এর সাথে প্রেমের সর্ম্পক মাধ্যেমে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর বাবা মাকে নতুন বধূকে দেখাবে বলে শ্যালিকা রেপো (১৭) কে সাথে নিয়ে দেশের উদ্যোশে রওনা হয়। নতুন বধূকে বাবা মাকে না দেখাতে বাড়ির কাছে এসে শ্যালিকা সহ তিন জনে প্রাণ কেড়ে নেয় নিষ্ঠুর কোকো। তার পর থেকে ছেলে ও পুত্রবধূ প্রতিচ্ছবি নিয়ে বেঁচে আছেন ক্ষেতমজুর আব্দুর রশিদ ও মালাল ভানু।
অপরদিকে একই এলাকার বাকলাই বাড়ির শামসুন নাহার স্বামী, সন্তান, দেবরসহ একই বাড়ির ১৬ জন নিয়ে কোকো লঞ্চে রওনা হয়েছিল বাড়িতে ঈদ করার জন্য। বাড়ির কাছের ঘাটে এসেই লঞ্চডুবিতে নিহত হয় তার মেয়ে সুরাইয়া (৭), ভাসুরের মেয়ে কবিতা (৩) ও দেবর সোহাগ (১৪)। সেই থেকেই শামসুন নাহার আদরের মেয়ের শোকে কাতর। শামসুন নাহারের মত এ লঞ্চ দুর্ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন পিতা-মাতা, কেউ হারিয়েছে সন্তান, কেউবা ভাই-বোন আর পরিবারের উপর্জনক্ষম ব্যাক্তি।
এই দূর্ঘটনায় অনেকেই সাতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও লালমোহনে ৪৫জন, চলফ্যাশনে ৩১জন, তজুমদ্দিনে ২ ও দৌলতখানে ৩ জনসহ মোট ৮১ জন নারী, শিশু ও পুরুষ প্রাণ হারায়। ভয়াবহ স্মরণকালের এ লঞ্চ দূর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের খবর রাখেনি কেউ। স্বজনহারাদের পরিবারে এখনো চলছে নীরব কান্না। ছেলে-সন্তান হারা অনেক বাবা-মার স্বপ্ন রয়ে গেছে অপূর্ণ। পরিবারের একমাত্র উপর্জনকারীকে হারিয়ে আগের অবস্থায় এখনো ফিরে আসতে পারেনি অনেক পরিবার। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন ঢাকা ও চট্টগামে। দূর্ঘটনার পর নিহতদের পরিবারকে সরকারিভাবে কিছু আর্থিক সাহায্য করা হলেও পূণর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এব্যাপারে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, এ দুর্ঘটনা নিহতের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগীতা করা হয়। ভবিষ্যতে যাতে আর কোন নৌ দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে বিশেষ করে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী ও ফিটনেস বিহীন লঞ্চ যাতে না চলতে পারে সে ব্যাপারে তাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে বলে তিনি জানান।
স্বজনহারা পরিবার গুলোর দাবি, লঞ্চ মালিকদের খামখেয়ালির জন্য আর যেন কোনো মাকে সন্তান হারাতে না হয়। স্ত্রীকে যেন অকালে বিধবা হতে না হয়। কোকো ট্রাজেডির ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এ রুটে চালু হয়নি নিরাপদ লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই প্রতিদিন চরম ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করছে এই রুটের লঞ্চগুলো। একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।