

বৃহস্পতিবার ● ২ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » অনুসন্ধানী রিপোর্ট ১: ভোলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারকরা
অনুসন্ধানী রিপোর্ট ১: ভোলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারকরা
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০২০-এর ৩য় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় ৩ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ অনুষ্ঠিত হবে। এ-ই পরীক্ষায় শতভাগ পাস ও চাকরি নিশ্চয়ইতার প্রলোভন দেখিয়ে ইতি মধ্যে শত শত চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা কন্টাকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকটি চিহ্নিত সক্রিয় প্রতারক চক্র।
তথ্য সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ন্যায় এই বছরও প্রতারক চক্রটি পরীক্ষায় শতভাগ পাস ও চাকরি নিশ্চয়ইতা দিয়ে ইতি মধ্যে শত শত চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা কন্টাক করে প্রথম ধাপে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং বাকি টাকা চাকরির নিয়োগ পত্র হাতে পেলে চাকরি প্রার্থীরা এ-ই সব টাকা পরিশোধ করবেন বলে ভিবিন্ন ভাবে চুক্তি বদ্ধ হয়। এ-ই চক্রের সদস্যরা হলেন
লালমোহন ও তজুমদ্দিন এবং ভোলা সদরের কয়েকটি চিহ্নিত সক্রিয় প্রতারক চক্র। এই চক্রটির জেলাব্যাপী রয়েছেন তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক। চক্রের মূল হোতারা থাকেন সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। চক্রটির মূল হোতা হচ্ছেন লালমোহনের প্রাইমারি শিক্ষকদের একটি বড় চক্র। এই চক্রের প্রধান হলেন লালমোহন উপজেলার পূর্ব বালুর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাওলানা আতিকুল্লাহ মাস্টার।
এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের লেঙ্গুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো.হুমায়ুন, ডাওরীর হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুল্লাহ, ইকবাল হোসেন, মাঈনুদ্দীন মাস্টার, মো.ইউসুফ মাস্টার ও আনোয়ার মাস্টারসহ তজুমদ্দিন ও ভোলা সদরের বড় একটি শিক্ষকদের চক্র।
চক্রটির একাধিক সদস্যর সাথে ফোন আলাফ ও তথ্য অনুযায়ী তারা তিন ভাবে পাস করিয়ে থাকেন। প্রথমত বড় ধরণের কন্টাকের মাধ্যমে পরীক্ষার আগের দিন রাত ২ টায় জেলা শিক্ষা অফিসের যে কোন এক কর্মকর্তা মধ্যেমে পরীক্ষার প্রশ্ন তাদের হাতে চলে আসে। এর পর সদরের একজন বিশেষ ব্যাক্তির বাসায় বসিয়ে কন্টাকের চাকরি প্রার্থীদের প্রশ্ন ও উত্তর পত্রগুলো বিলি ও মুখস্ত করিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভাষ্য মতে এতে চাকরি পরীক্ষার্থী প্রশ্ন যে কোন সেট হাতে পেলে উত্তর দিতে কোন অসুবিধা নেই।
দ্বিতীয়ত যে সকল চাকরি প্রার্থীদের কেন্দ্রে দুরে তাদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে সঠিক উত্তর এসএমএস পাঠানো হয় এবং ডিভাইস এর মধ্যেমে সরবরাহ করা হয়। তারা আগে থেকে তাদের কন্টাকের প্রার্থীদের কেন্দ্রের অসাধু শিক্ষকদের ম্যানেজ করে হল ও শিক্ষক তাদের পছন্দ মতো গার্ড দেওয়া হয়।
তৃতীয়ত প্রিলি পরীক্ষায় পর যারা ফেল করার আশংকা রয়েছে তাদেরকে মন্ত্রণালয়ের একটি লিংক এর মধ্যে পাস করানো হয় বলে চক্রটি দাবি করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, আতিকুল্লাহ মাস্টারের ছেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ল ডিপার্টমেন্ট এর ছাত্র। তার মধ্যেমে ঢাকা থেকে বিসিএস ক্যাডারদের এক টিম এর বোর্ড বসিয়ে আউট করা প্রশ্নের দ্রুত উত্তরগুলো বের করে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিভাইস ও মোবাইল এর মধ্যেমে সরবরাহ করা হয়।
তবে এ-ই চক্রের সদস্যরা প্রশাসনের চোখের নজর এড়াতে পরীক্ষার কয়েক দিন আগেই নিঝুম স্থান বা জেলার বাহিরে গিয়ে পরীক্ষায় তাদের পাতানো সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকরি প্রার্থী জানান, সরকারি চাকরির বয়স গত বছর শেষ হয়ে গেছে। এটাই আমার শেষ পরীক্ষা। ভবিষ্যতের চিন্তা করে তাই লেন দেন করতে বাধ্য হয়েছি। তা ছাড়া এরা তো শুনলাম গত বছর অনেকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছে।
এব্যাপারে চক্রের মূল হোতা আতিকুল্লাহ মাস্টারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এই চক্রের অন্য সদস্য শিক্ষক মো.হুমায়ুন ও হাবিবুল্লাহরার বক্তব্য ও কথোপকথন অনুযায়ী তারা যে এ-ই সদ্য নিয়োগ পরীক্ষায়ও চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করেছেন এবং আতিকুল্লাহ মাস্টারসহ তারা সরাসরি জড়িত রয়েছেন তার প্রমাণ উঠে এসেছে।
-এফএইচ