

শনিবার ● ৬ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জেলার খবর » দৌলতখানের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার আভাস, ভোটারদের মাঝে শঙ্কা!
দৌলতখানের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার আভাস, ভোটারদের মাঝে শঙ্কা!
এইচ এম নাহিদ: আর মাত্র ৪ দিন ,১১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোলার দৌলতখাঁন উপজেলায় ২য় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে চলেছে ইউনিয়নের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি সভা-সমাবেশসহ কুশল বিনিময় করছেন। খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ভোটারদের। শুধু প্রার্থীরাই নয়, কাজ করছেন তাদের কর্মী-সমর্থকরাও। পুরোদমে প্রচার প্রচারনা চললেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোনঠাসা হয়ে আছেন। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বহিরাগত ক্যাডার, লাঠিয়াল বাহিনী, প্রশাসনিক সুবিধা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয় ভীতি প্রদর্শন সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ৭ জন প্রার্থী নৌকার মনোনীত হলেও বাকি ৯ জন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, ১ জন জাতীয় পার্টি (বিজেপি)’র থেকে মনোনীত। অভিযোগ আছে নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন প্রার্থী হাইব্রীড (দল পরিবর্তনকারী ) হয়েও নৌকার প্রতীক পেয়েছেন। এ নিয়ে সরকার দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, তাদেরকে মনোনয়ন বঞ্চিতদের পক্ষে ভোট চাইতে দেখা যায়।
এদিকে প্রার্থীরা একে অন্যকে দোষারোপ সহ বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার অভিযোগ আসছে। এবিষয়ে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচন অফিসে সহিংসতার অভিযোগ করেন। সাধারন ভোটাররা বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছেন। ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে রয়েছে তাদের মাঝে শঙ্কা। ৬ নভেম্বর শনিবার নির্বাচনী আচরন লঙ্ঘনের দায়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজকে আটক করছে পুলিশ। এছাড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মধ্যে বেশ জরোসরো বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ভোটের মাঠে প্রার্থীরা সরব। উপজেলার ৭টি ইউপিতে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৭, সংরক্ষিত মহিলা ৫৬ ও সাধারণ সদস্য পদের ১৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ভবানীপূর ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ আওয়াল (চশমা প্রতীক), আব্দুল মান্নান (আনারস প্রতীক) নৌকার মনোনীত প্রার্থী নবিউল্লাহ নবুর (বর্তমান চেয়ারম্যান)’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ভবানীপূর ইউনিয়েনে ৭নং ওয়ার্ড দুর্লবপূর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, ৮ নং ওয়ার্ড আবু মেম্বার বাড়ির দরজার অস্থায়ী কেন্দ্র, ৯ নং রাধাবল্লভ সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়, ৮ নং ওয়ার্ড বামনপূর সঃ প্রাঃ বিদ্যালয় ও ভবানীপূর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বহিরাগত ক্যাডার জরোকরে নির্বাচন বানচাল করার পায়তারা করছে। তার অনুসারীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমি নির্বাচনের দিন ভবানীপূরে বড় ধরনের সহিংসতার আবাস পাচ্ছি। আমি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ করবো এবং এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের দাবী করছি।
নৌকার মনোনীত প্রার্থী নবিউল্লাহ নবু তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভৎসনার সুরে বলেন, চেয়ারম্যানী নির্বাচন এত সহজ নয়। যে কেউ দাড়ালেই নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। ইনশায়াল্লাহ আমিই তৃতীয় বারের মত আবারো নির্বাচিত হব। উপজেলার মদনপূর ইউনিয়নে ২৩ অক্টোবরে নির্বাচনী প্রচারকালে বিজেপির চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের পথে পথে বাঁধা দিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐদিন ২০টি মটর সাইকেল ও বাড়ী ঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়। এবিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালউদ্দিন চকেট (আনারস প্রতীক) অভিযোগ করে বলেন, আমার নিকচতম নৌকার প্রার্থী সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রোনদিত ভাবে আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙ্গচুর ও আমার কর্মীদের ঘরে হামলার ঘটনা ঘটায়। নৌকার প্রার্থীর সমর্থন জনশূন্য হওয়ায় দিশে হারা হয়ে আমার আমার প্রচার প্রচরনায় বার বার হামলা চালাচ্ছে, পিটিয়ে আমার কর্র্মীদের আহত করছে। এই ধরনের নেক্কারজনক ঘটনায় সাধারন ভোটাররা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আছে। ১১ তারিখের নির্বাচনে মদনপূর ইউপির সব ক’টি কেন্দ্রকে ঝুঁকি পূর্ণ মনে করছেন তিনি।
নৌকার সমর্থীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন নান্নু বলেন, আমার প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাচ্ছে, এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বা ঘটবেওনা। ১১ তারিখের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে আমি আবারও নির্বাচিত হব। এদিকে গত সোমবার ( ১ নভেম্বর ) উত্তর জয়নগর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এছাড়া উত্তর জয়নগর ইউপির ১ নং ওয়ার্ড, চর খলিফা ইউপির ৫, ৬ নং ওয়ার্ড, চরপাতা ইউপির ২,৩ নং ওয়ার্ডে সহিংসতার আবাস রয়েছে। এখানে সাধারন ভোটাররা একজন করে নির্বাহী মেজিষ্ট্রেট ও পুলিশের পাশা-পাশি র্যাব, বিজিবি মোতায়নের দাবী করছেন। সাধারন ভোটাররা আক্ষেপের সুরে বলছেন, মনে বড় খায়েশ এবার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবার। পরিস্থিতি যা দেখতাছি তাতে মনে হয় মনের খায়েশ মনেই থাইকা যাইবো মাগার ভোট কেন্দ্রে যাইবার পারুমনা আর ভোট ও দিবার পারুমনা। পুলিশ র্যাব নেতাগো আর ভোট দিবো নেতারা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে, দৌলতখান উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ১’শত ৩৯টি। আসছে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রসহ চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১৭ জন। তার মধ্যে চর খলিফা ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় অমি চৌধুরী (নৌকা) বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া সাধারন সদস্য পদে ১৯৬ ও সংরক্ষিত আসনে ৫৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে সহিংসতার প্রশ্নে উপজেলা নির্বাচন কমিশনার আব্দুস সালাম খাঁন বলেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এই বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়েছে, সেখানে জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারও জেলা নির্বাচন অফিসার ছিলেন। এবারের নির্বাচনে যে প্রার্থী বা তার সমর্থকরা যদি নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হস্তে তাদের দমন করা হবে। ১১ নভেম্বরের এই নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ করার নির্দেশনা রয়েছে।
-এফএএইচ