

শনিবার ● ৬ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » জেলার খবর » দৌলতখানে দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ধ্বসে যাওয়া দুই ব্রিজ
দৌলতখানে দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ধ্বসে যাওয়া দুই ব্রিজ
বিশেষ প্রতিনিধি: দুই বছরেও সংস্কার হয়নি ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের ধ্বসে যাওয়া দুটি ব্রিজ। নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিজ দুটি ধ্বসে গেলেও এখনো তা সংস্কার কিংবা যাতায়াতের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করায় ওই ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার মানুষের চলাচলে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তী। দ্রুত এর সংস্কার কিংবা নতুন করে ব্রীজ দুটি নির্মাণের জোড় দাবী জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সরে জমিনে জানা গেছে, উপজেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন মদনপুর। প্রায় সাড়ে ছয় বর্গ কিলোমিটার এই ইউনিয়নটিতে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত তেমন কোন উন্নয়ন না হলেও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য ২নং ও ৭নং ওয়ার্ডের খালের উপর নির্মাণ করা হয় দুটি ব্রিজ। যার এক একটির প্রাক্কলিত অর্থ ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ৫৬ টাকা। এরমধ্যে ২নং ওয়ার্ডে নির্মিত ব্রিজের ঠিকাদার দৌলতখান উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম খান ও ৭নং ওয়ার্ডে নির্মিত ব্রিজের ঠিকাদার ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু ডাক্তারের ভাই মোঃ নাগর মিয়া। তবে নির্মাণের এক সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিজ দুটি ধ্বসে যাওয়ার পাশাপাশি সরে গেছে এর সংযোগ সড়কের দুপাশের মাটি। এতে করে ওই ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের চলাচলে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তী।
একই এলাকার কামাল উদ্দিন বলেন, যেখানে ধরা ছিলো এলসি পাথর তার বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্মমানের ছোট ছোট গোলাকৃতির নুরী পাথর। এমনকি ৪ তাগা পাথরের সাথে ১ ব্যাগ সিমেন্ট দেয়ার কথা থাকলেও ৮/১০ তাগা পাথরের সাথে ব্যবহার করা হয়েছে ১ ব্যাগ সিমেন্ট। এমনকি রটের পরিমানও দেয়া হয়েছে কম। তাতে করে কাজের গুণগত মান একেবারেই খারাপ হয়েছে। সপ্তাহ না যেতেই ইউনিয়নের জনগণ যার ফলাফল দেখেছে। সামান্য পানির চাপেই দুটি ব্রিজই ধ্বসে পড়েছে। এমনকি ব্রিজের সংযোগ সড়কে মাটির পরিবর্তে দেয়া হয়েছে লোকালবালু। তাতে করে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে একটু একটু করে বালি সড়ে গিয়ে পুরো সংযোগ সড়ক এখন খালে পরিণত হয়েছে।
সেখানকার মৎস্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নটি জেলার মুল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এমনকি চরে আসতে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দেয়ার ভয়ে ব্রিজের কাজ পরিদর্শনে কাজ চলা মূহুর্তে অফিসের কোন লোকজনকেই এ অঞ্চলে দেখা যায়নি। তাই রাজ-মিস্ত্রী যেনতেন ভাবেই তাদের মনগড়াই কাজ করে চলে গেছেন। দেবে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে।
এ ব্যাপারে কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দৌলতখান উপজেলার (পিআইও) এইচ. এম. আনসার বলেন, আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি ঠিকাদারকে দিয়ে শতভাগ কাজ আদায় করে নিতে। এরপরও বিচ্ছিন্ন এলাকায় ব্রিজ দুটি হওয়ায় অফিসের লোকজনের তদারকিতে কিছুটা ত্রুটি থাকতে পারে। তাছাড়া ঘুর্ণিঝড়ের সময় পানির এতোই চাপ ছিলো যে ব্রিজ কেন ওই স্থানে আরো ভারি কিছু থাকলেও ওই সময় তা ভেঙ্গে যেত।
এদিকে ভেঙ্গে যাওয়া একমাত্র ব্রিজ দুটি দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার জনগণের চলাচলে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তী। স্থানীয়দের উদ্যোগে ব্রিজের সাথে রাস্তার সংযোগ দিতে বাশের সাকো ব্যবহার করা হলেও বিদ্যালয়ের শিশুরা ও গ্রামবাসীর চলাচলে প্রতিদিন ঘটছে কোন কোন দুর্ঘটনা। দ্রুত এই ব্রিজ দুটি সংস্কার কিংবা নতুন করে দুটি ব্রিজ নির্মাণের দাবী করছেন স্থানীয়রা।
এই মধ্যে ভেঙ্গে যাওয়ায় ২নং ওয়ার্ডের মানুষের চলচলের জন্য অন্য স্থানে বিকল্প একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারেক হাওলাদার। তিনি বলেন, অপর ব্রিজটি অর্থাৎ ৭নং ওয়ার্ডের দেখার জন্য টেকনিকেল সাইটের লোকজন সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করবে। এরপর সেখানে সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজন হলে সে ব্যপারেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।