বুধবার ● ২৪ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » তথ্যপ্রযুক্তি » যেসব সুবিধা থাকছে স্মার্টকার্ডে, পাবেন যেভাবে
যেসব সুবিধা থাকছে স্মার্টকার্ডে, পাবেন যেভাবে
ডেস্ক: ‘জাতীয় পরিচয়পত্র করে পরিচয় দিন গর্ব ভরে’ স্লোগানকে সামনে রেখে সেপ্টেম্বরে নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর অংশ হিসেবে ঢাকার প্রত্যেক থানায় স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কয়েকটি থানায় প্রয়োজনীয় স্মার্টকার্ড পৌঁছে গেছে। বাকিগুলোতে পৌঁছানো হচ্ছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সময় পেলেই নাগরিকদের হাতে এ কার্ড বিতরণের কাজ শুরু করবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন জানান, আমরা এরই মধ্যে নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া শেষ করেছি। সেপ্টেম্বরের যেকোনো দিন এটা বিতরণের কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করি। আর তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা সিটির নাগরিকদের প্রথমে এ কার্ড দেওয়া হবে। পরবর্তীতে অন্যান্যদের দেওয়া হবে।
হাতের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়ার জন্য এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেশিন চলে এসেছে বলেও জানান তিনি।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র যে কারণে প্রয়োজন
সেবা গ্রহণ ও প্রদানে সঠিক নাগরিক শনাক্তকরণ, সঠিক ব্যক্তির সঠিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিক করা, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে অফলাইন ভেরিফিকেশন সুবিধা প্রভৃতি।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের বৈশিষ্ট্য
স্মার্টকার্ড হবে ১০ সংখ্যার আগের মত ১৩ কিংবা ১৬ ডিজিটের লম্বা লাইন থাকছে না, ৩ স্তরে ২৫টির অধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই, সহজে নকল করা সম্ভব নয়, বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ্লিকেশণ (Apps) চালানো সম্ভব, চিপ, ২ডি বারকোড, মেশিন রিডেবল জোন (এমআরজেড), নাগরিকের তথ্য চিপ-এ সংরক্ষণ করা প্রভৃতি।
স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার
আয়কর দাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর প্রাপ্তি ও নবায়ন, পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও নবায়ন, চাকুরির জন্য আবেদন, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় ও বিক্রয়, ব্যাংক হিসেব খোলা ও ঋণ প্রাপ্তি, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারি ভর্তুকি, সাহায্য, সহায়তা প্রাপ্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমান বন্দরে ই-গেট এর মাধ্যমে আগমন ও বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও একাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংযোগ গ্রহণ, মোবাইল ও টেলিফোন সংযোগ গ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকেটিং, সিকিউরড ওয়েব লগ ইন, ই-ফরম পূরণে নাগরিকের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযোজন ইত্যাদি।
ইসি সূত্র জানায়, স্মার্টকার্ড গ্রহণের সময় নাগরিকদের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে কার্ড বিতরণ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেওয়া হবে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে ঢাকা সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও সবশেষে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের পর দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতেও তা বিতরণ করা হবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সকল নাগরিতের হাতে (যারা ভোটার হয়েছেন) উন্নতমানের এ কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ভেদে একাধিক ক্যাম্প থাকবে। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে একটি ক্যাম্প। আর গ্রামের ভোটারদের ক্যাম্প থাকবে ইউনিয়ন পরিষদে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকায় প্রতিটি কাউন্সিল অফিস থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এছাড়া যেসব নাগরিকের হাতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র তাদেরকে স্মার্টকার্ড নেওয়ার সময় তা ফেরতও দিতে হবে।
স্মার্টকার্ড কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন বিশ্ব ব্যাংক সহায়তাপুষ্ট ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ১৮ মাসের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন (৯ কোটি) স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার জন্য ফ্রান্সের অবার্থার টেকনলোজিস নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ইসি। সে সময় অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে নাগরিকের হাতে স্মাটকার্ড দেওয়ার কথা ছিল ইসির। কিন্তু সময়মতো না দিতে পারার আশঙ্কা ইসি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যয় না বাড়ানোর শর্তে এ প্রকল্পে আরো ১৮ মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেয়।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি ৯ কোটির হাতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে।