মঙ্গলবার ● ১৯ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » সর্বশেষ » ‘দেখেছি দুর্নীতির শতরূপ’
‘দেখেছি দুর্নীতির শতরূপ’
ডেস্ক : খুরশীদ আলম খান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। প্রায় দুই যুগ ধরে যুক্ত রয়েছেন আইন পেশায়। ২০০৭ সাল থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আইনপেশার বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জের কথা তিনি শুনিয়েছেন
আপনি আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন কতদিন?
খুরশীদ আলম খান : সেই ১৯৯২ সাল থেকে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি। প্রায় দুই যুগ হলো এ পেশাকে ভালোবেসে নিজেকে উৎসর্গ করেছি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা পরিচালনা করছেন কবে থেকে?
খুরশীদ আলম খান : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছি ২০০৭ সাল থেকে। আর সেই থেকেই দেখেছি দুর্নীতির শত রূপ! দুদকে কাজ করার সুবাদেই আমার এ ব্যাপারে জানা ও বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আমরা জানি আপনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মামলা পরিচালনা করেছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।
খুরশীদ আলম খান : আমি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সহ দেশের মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেরই মামলা পরিচালনা করেছি। শেখ হাসিনার নামে হওয়া বার্জ মাউন্টেন ও নাইকো মামলা এবং বেগম খালেদা জিয়ার নামে হওয়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা পরিচালনায় দুদকের আইনজীবী হিসেবে কাজ করছি।
এ পর্যন্ত কতগুলো দুর্নীতির মামলা পরিচালনা করেছেন?
খুরশীদ আলম খান : এখন পর্যন্ত প্রায় হাজারেরও বেশি দুর্নীতির মামলা পরিচালনা করেছি।
দুর্নীতির মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কখনো কি বাধা বিপত্তি কিংবা কোনোপ্রকার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন?
খুরশীদ আলম খান : অনেকেই অনেক সময় দুর্নীতির মামলার তদবির করার জন্য আমার চেম্বারে আসতে চেয়েছে। আমি আজ পর্যন্ত কাউকে আসার অনুমতি দেইনি। আর কেউই আমাকে হুমকি ধামকি দিতে সাহস পায়নি। ভয় দেখাতে পারেনি। কারণ সবাই জানে, আমার কাছে এসব করে কোনো লাভ নেই।
দুর্নীতির মামলায় যারা অভিযুক্ত তাদের ব্যাপারে আপনার মূ্ল্যায়ন কী?
খুরশীদ আলম খান : দুর্নীতির মামলায় যারা অভিযুক্ত তারা অনেকেই মামলা দীর্ঘমেয়াদী করার চেষ্টা করেন। সেই সাথে মামলার আলামত নষ্ট করার চেষ্টাও তাদের থাকে। এছাড়া দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা পরিচালনার প্রবণতাও দেখেছি।
দুর্নীতিতে যুক্ত সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাপারে আপনার অভিমত?
খুরশীদ আলম খান : আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ দুর্নীতিকে ঘৃণা করে। তারা একটি দুর্নীতি মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখে। এইরূপ বাস্তবতায় যদি আমাদের সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দুর্নীতি করেন তাহলে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত এ কাজটাই হচ্ছে।
দুর্নীতির মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কি দুর্নীতির প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ জন্মেছে?
খুরশীদ আলম খান : হ্যাঁ, দুর্নীতির প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা ও বিদ্বেষ দুটোই আমার জন্মেছে।
দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে আপনার অভিমত কী?
খুরশীদ আলম খান : দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়তে হলে আমাদের সমাজের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ছাত্র বয়স থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সকল শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে দুর্নীতির ভয়াবহ দিক তুলে ধরতে হবে। যাতে নতুন প্রজন্ম দুর্নীতিকে ‘না’ বলে।
রাজনীতিবিদদের বাইরে বিশেষ কারো দুর্নীতির মামলায় লড়েছেন, মনে পড়ে কি?
খুরশীদ আলম খান : হ্যাঁ, সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ‘বন খেকো’ ওসমান গনির দুর্নীতির মামলার কথা মনে আছে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গনির উত্তরার বাসায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা নগদ ৯৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা, ১৩০০ ডলার, ৩ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিট ও প্রচুর স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করলে গনিকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০। এবিষয়ে গনি হাইকোর্টে আপিল করলে আদালত তার আপিল খারিজ করে দেয়।
সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
খুরশীদ আলম খান : আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
প,ড/জেট,অার