

শুক্রবার ● ১ জুলাই ২০১৬
প্রথম পাতা » জানা অজানা » যেভাবে বেঁচে আছে পৃথিবীর
যেভাবে বেঁচে আছে পৃথিবীর
ডেস্ক • যার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বহু কালের পরিবর্তন। স্বাক্ষী হয়ে আছে বহু যুগের পত্তন-বিনাশ। যে গাছ দেখেছে বহু ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তুষারপাত। এমনকি, দেখেছে তুষারযুগের শেষটাও। কারণ সে যে ১০ হাজার বছর ধরে বেঁচে আছে। সঠিক গাণিতিক হিসাবে ৯,৫৫৮ বছর। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে গাছটি বহাল তবিয়তেই বেঁচে রয়েছেন সুইডেনের টালার্না প্রদেশে। ফুলু পর্বতের পাদদেশে। আদতে এটি একটি স্প্রুস গাছ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত শতাব্দীর ৪০-এর দশক থেকে বিষাক্ত মাটি থেকে প্রাণের রসদ তেমন না পেয়ে স্প্রুস গাছটি বুক চিতিয়ে বেড়েও উঠতে শুরু করেছে আকাশের দিকে। যেন এটা তার অস্তিত্বের সদম্ভ ঘোষণা। ২০০৮ সালে সুইডেনের ওমেয়াঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক লিফ কুলমান প্রথম এই গাছটির সন্ধান পান। ফ্লোরিডার মিয়ামিতে তার গবেষণাগারে কুলমান এর পর কার্বন পরমাণুর একটি আইসোটোপ (সি-১৪) দিয়ে এর বয়স মেপেছিলেন। তাতে দেখা গেছে, ওই গাছটির বয়স ৯,৫৫৮ বছর। এর মানে মহাভারত যবে লেখা হয়েছিল তার চেয়েও ৭,০০০ বছর আগেকার গাছ এটি। এর চেয়ে দীর্ঘায়ু গাছ এখন পর্যন্ত মেলেনি পৃথিবীতে। এর আগে যে প্রাচীনতম গাছটির হদিশ মিলেছিল উত্তর আমেরিকায় সেটি একটি পাইন গাছ। তার বয়স বড়জোর ৪,০০০-৫,০০০ বছর। অধ্যাপক কুলমানের দাবিটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভাবে সমর্থিত ও স্বীকৃত হয়েছে। সেই প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে ‘জার্নাল ইভলিউশন’-এর জুন সংখ্যায়। এ ব্যাপারে লখনউ-এর ন্যাশনাল বটানিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনবিআরআই)-এর প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি ও এথনো বটানি বিভাগের অধ্যাপক গীতাঞ্জলী সিংহ বলছেন, ‘‘এই ধরনের স্প্রুস গাছ সুইডেনের বিস্তৃর্ণ এলাকায় আরো প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সুইডেনের উত্তরে লাপল্যান্ড থেকে দক্ষিণে টালার্না পর্যন্ত এলাকা জুড়ে মোট ২০টি প্রজাতির স্প্রুস গাছ পাওয়া গেছে। যার বয়স ৮ হাজার বছর বা তার বেশি।’’ কিন্তু এতদিন ধরে এই গাছগুলো বেঁচে থাকে কী করে? লখনউয়ের এনবিআরআই-এর প্লান্ট অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক ভাগ্যশ্রী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এদের একটা কাণ্ড মরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নতুন কাণ্ডের জন্ম হয়। তাছাড়া এদের শিকড় মাটি ফুঁড়ে গভীরে চলে যেতে পারে খুব দ্রুত। গত ১০০ বছরে পরিবেশ দূষণের ফলে সুইডেনের ওই এলাকায় মাটির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। যার ফলে মাটি থেকে বাঁচার রসদ জোগাড় করতে এই গাছটির অসুবিধা হওয়ায় গত শতকের চারের দশক থেকেই এরা একটু একটু করে বুক চিতিয়ে আকাশের দিকে মাথা তুলতে দেখা যাচ্ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মনে করা হচ্ছে, এই গাছটি তুষারযুগের সময় স্ক্যানডেনেভিয়ায় ছিল। ছিল নরওয়ের পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমে। পরে কোনোভাবে পাখিদের মাধ্যমে বা বাতাসে উড়ে এসে ওই গাছগুলির বীজ পড়েছিল সুইডেনের ওই এলাকায়। ওই এলাকায় ৩৭৫ বছর, ৫৬৬০ বছর, ৯০০০ এবং ৯৫৫০ বছর আয়ুর আরো বিভিন্ন প্রজাতির স্প্রুস গাছের সন্ধান মিলেছে।’’ বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও বয়স্ক সুইডেনের এই গাছ খুবই বিস্ময়কর। প্রজম্মের পর প্রজম্ম ধরে এই গাছটিকে দেখে আসছেন সুইডেনের বাসিন্দারা। স্প্রুস এই গাছটিকে (spruce tree) ডাকা হয় ওল্ড টিজিক্কো (Old Tjikko) নামেও। গবেষকরা বলছেন, গাছটির ক্লোন গাছ তৈরি করার সক্ষমতাও রয়েছে। এটি নতুন গাছ উৎপাদন করতে পারে। যখন গাছটি মারা যায়, তখন সেই স্থান হতে আবারো নতুন গাছ জম্মায়। এ কারণে হাজার হাজার বছর মানুষের নজরে আসেনি স্প্রুস গাছটি। আর এর মাধ্যমেই স্প্রুস গাছ বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে যেকোনো প্রতিকুল আবহাওয়ায়। -ইন্টারনেট।