রবিবার ● ২৭ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জেলার খবর » কোথায় সেই কমান্ডার বাঘা ছিদ্দিক ?
কোথায় সেই কমান্ডার বাঘা ছিদ্দিক ?
বিশেষ প্রতিনিধি: ভোলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার বাঘাকে ভুলে গেছে সবাই। মুক্তিযুদ্ধে অদম্য সাহসিকতার জন্য সিদ্দিকুর রহমানকে তার সহ যোদ্ধারা বাঘা এবং কখনও হাই-কমান্ড সিদ্দিক নামে ডাকতো। মুঠোফোনে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমি বেঁচে আছি বা কোথায় আছি এ খবরটুকু নেয়ার মতো কেউ নেই।
সারা বছর না হোক অন্ততঃ স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসে তো একটু মনে হবার কথা কিন্তু এক যুগের মধ্যে কারো যোগাযোগ মনে পড়ে না। কষ্ট এজন্য যে, ভোলার মক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছি আমি। এতো কথা হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সেখানে আমি অনুপস্থিত। হয়তো এখন আমার প্রয়োজন ফুড়িয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাকিস্থানি হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে ৬ মে ভোলার খেয়াঘাট দিয়ে এসে পাক বাহীনি ওয়াপদাকে মূল ক্যাম্প করে। পরবর্তীতে ওই স্থান থেকে ভোলা সদর সহ অন্যান্য থানা গুলোতে পাক বাহীনি ক্যাম্প স্থাপন করে। ভোলা সহ প্রতিটি থানায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা সহ ঘর বাড়ী পুড়িয়ে দিচ্ছিল পাক-হানাদাররা। ভোলা সদর সহ বিভিন্ন থানায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিচ্ছিন্ন ভাবে তাদের হামলার জবাব দিচ্ছিলো।
সংগঠিত যুদ্ধ বলতে যা বুঝায় তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত।সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী বোরহানউদ্দিনের সস্তান সিদ্দিকুর রহমান সেনাবাহীনি থেকে পালিয়ে খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ভোলার করেন অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল তাকে ভোলায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঠায়।সিদ্দিক ভোলায় এসে কাজী মোতাহার মাষ্টার, রেজা-এ-করিম চৌধুরী(চুন্নু মিয়া), রতন চৌধুরী, সাইফুল্লাহ জুলু, শশী, হোসেন চৌধুরী, কাজী আহতাব উদ্দিন, আলী আকবর, আজিজল মিয়া, হযরত আলী,আচমত মিয়া, আলতাফ রহমান, মাহবুব আলম মুন্সি, নাছির তালুকদার, গিয়াস তালুকদার, সহ অনেককে নিয়ে ভোলা হানাদার মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন।
ভোলা মুক্তকরনে বোরহানউদ্দিনে ২২ অক্টোরব দেউলার যুদ্ধ এবং ২৭ অক্টোবর টনির হাট(ঘুইংঘার হাটের) যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত। দেউলার যুদ্ধে হাই কমান্ড ছিদ্দিকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী দখদার মুক্ত করে এবং ওই যুদ্ধে ৬৪ পাক হানাদার নিহত হয় এবং অনেককে বন্ধি করা হয়।
টনির হাট যুদ্ধে প্রথমে হযরত আলী এবং আজিজল মিয়া পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্যে তারা পৌছতে পারছিল না। তখন ছিদ্দিক ও তার বাহিনী সবাই কে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে হানাদারদের পরাজিত করেন। ওই স্থানে ৫ পাক-হানাদার নিহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকীরা ভোলায় পালিয়ে যায়।
ওই দুই যুদ্ধে ৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ভোলাবাসী মুক্তির আনন্দ মিছিলে সামিল হয়। সিদ্দিকুর রহমান এখন ঢাকায় নিভৃত জীবন যাপন করছেন। মাঝে মাঝে বোরহানউদ্দিনের বাড়ীতে আসলেও নিরবে চলে যান।